12 April 2018

গুচ্ছ কবিতা- জাকিয়া এস আরা



যেভাবে পার জীবন সাজাও
জীবন সাজাবার দিন,অথচ তুমি অতীত নিয়ে বসে আছ!
ভুলে যেও না, এখন কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানো দিন
রঙিন অতীত সাঁতার কাটুক তোমার হ্রদের লেকে
স্বজনেরা ফেলে রেখে গেছে জান্তব অহম
সেই অহমকার বালুর চরে, গোবেচারা ভেড়ারা চরে!
ভোরের শিশির স্নাত মানবের লালসায়,
কাশবনে পড়ে থাকে পুরুষের স্খলিত বীর্য, বালিকা
জীবন কেড়ে নেয় শকুনে, দাহ হয়না!

খালেক চাচার ফুটো নৌকা ডুবে গেল ভাদ্রের বানে,
এবার নবান্ন হবে তো? যেভাবে পার জীবন সাজাও
জীবনের গান বানের জলে ডোবে না
যতই অভাবের পাহাড় উঁচু হোক,পাগল ও সময় পেলে,
নিজের দিকে ফিরে ফিরে অদ্ভুত চোখে তাকায়!



অপরাহ্ণের প্রার্থনা
শেষবেলার তির্ষক আলো,ধ্রুপদী ঢঙে
হাত বাড়িয়ে দেয়, অন্ধচোখে কিভাবে
বুঝব, আলো না আলোর সহগ!

চেঁচিয়ে ওঠে অবসাদের ঘোড়া,
অনিরুদ্ধ  বচনে, নাচনে,শরীরে ক্লান্তির প্লাবন
সময়ের আবর্তে আমিও চলে যাব,
চাইনা আরতি, চাইনা ক্ষণকালীন প্রভা,

এভাবে  ঘুরতে  ঘুরতে  পথহারা পাখি হয়ে
মরে পড়ে থাকি যেন!



নিজেই যখন
নিজেই ভেঙেছি
             নিজেকে যখন
কাকে আর দোষ
             দেব অকারণ !
নিজের হাতের মুঠোয় এখন
              নিয়ম ভাঙার সংবিধান!
কোন পথে যাব
            কে দেবে আশিস
মেশানো  আছে যে
            ব্রতজলে বিষ !



বিষণ্ণ মনের ভাবনা
চারপাশে কেবল ক্রুর অলস শব্দাবলি
দ্রুত এঁকে ফেলেছি মনের ত্রিভূজ আমি
নিঃস্ব নই, রিক্ত নই, আমি আমাতে মৌতাত
ঢকঢক গিলে ফেলি তরলং মধুবৎ
আসেনি সুপ্রিয় কেউ, কিম্বা ঋভু, ঋষি,
সম্পর্ক কাঁচের দেয়াল, মানি তা আমি
কেউ কেউ বলে, " আলোতে এস, মুখটা খোল,
বিচার চাও,অন্তর্জালের দুনিয়া, জানো  তো?"

কারো সাথে নেই, পাছে নেই, শূন্য ঘরে একা!
একাই হাঁটি, একাই গাই, আঁকিবুকি  একা!




ভুলে গেছি পাসওয়ার্ড
জীবনের গোপন পাসওয়ার্ড ভুলে গেছি সেই কবে!
বহতা নদীর কোনো পরিচয় লাগেনা,
তিরতির করে বয়ে যায় অয়ন্ত অসীমের টানে।
অথচ আমি আঁধারে আঁধারে সোনা খুঁজি,আনাড়ি হাতে
অনভ্যাসে বলি প্রিয় কথা!
বসন্ত বাউরি ডেকে ডেকে চলে গেল
জীবনানন্দের দেশে, আর এইদিকে
পৃথিবী পাটরানি হয়ে বসে আছে ধুলার রাজত্বে!
কাঁচা আমের ঘ্রাণে জিহ্বায় জল আসে,
জলের কলস খালি পড়ে আছে ঘরে,
আর আমি চাতকের মতো মেঘের তপস্যা করি,
প্রকৃতির গালে খাণ্ডব দাহন!  হা ঈশ্বর!
কোথায় যাবো আমি এখন, ভুলে গেছি
যে বেঁচে থাকার সেই গোপন পাসওয়ার্ড !




বাস্তুহারা প্রলাপ
উদ্বাস্তু পদ্যের মতো হামলে পড়েছ,
বিস্তার করছ সভ্যতার জরায়ু!
মানব দেহের তাপ বাড়াচ্ছো আর
সেধে সেধে বিজ্ঞানের রঙ ঢঙ
দেখছো, পজিটিভ আর নেগেটিভ
দুটো অংশে নিজেকে বিভক্ত করে,
সার্কাসের দর্শক সাজিয়েছ পৃথিবীকে,
অন্য গ্রহগুলো হতভম্ব!
সভ্যতাতো সাতপাঁক ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত,
এখন সে গর্দভ সাজতে চায়না, অথচ
তুমি পা ছড়িয়ে বসে আছ
যেন এক অবুঝ বালক!
যে নাকি বায়না ধরেছে যে
অসময়ে  বৃষ্টি  হোক !

No comments:

Post a Comment