30 May 2016

বৃতি হক


একটি হারিয়ে যাওয়া সবকিছুর তালিকা, বিজ্ঞপ্তি নয়

মেঝেয় বসে পা ছড়িয়ে শক্ত ঝুঁটিদুটো বেঁধে 
ঝাঁপি যখন উপুড় করে
 
খুব ঝাঁকিয়ে
 
পৃথিবীটা বাইরে আনি
 
জানি, আর এ মনই জানে-
হারিয়ে গেছে পাঁচটি তারা, তেপান্তরের 
মাঠটি আমার, বুনোফুলের গন্ধমেশা সাতটি ভুবন।
হারিয়ে ফেলায় ভীষণ পটু, হারিয়েছি আমার ঢাকা (শুধুই ঢাকা, এক মহাদেশ বলতে পারো),
লালচে চুলের ঝিলিকমাখা এরিয়েলের স্বপ্নচোখে সাগরতলে 
মুক্তো খোঁজা, মামদোভূতের ভয় দেখানো ভাইয়ের হাসি,
 
রুমালচোরের সইগুলো সব, রূপকথা এক- অবিনাশী,
 
বারবি পুতুল,
 
সিন্ডারেলা কাঁচের জুতো, টম সয়্যার আর
 
হাকলবেরি ফিনের সাথে সন্ধিশেষে আমার অধীন রাজ্য যতো,
 
লালাবাইয়ের মন্দ্রঘোরে সুরেসুরে আঁধারবন্দী রাত্রি মুছে মায়ের হৃদয়ছোঁয়া চুমু।
বাবার সাথে তাসপেটানো একটি দুপুর,চায়ের আমেজ, সবুজছায়ায় দোলনাচেয়ার, 
একটি পুকুর, হিমসকালে ভাপা পিঠার নরম মোহ, বাদলাদিনের আড্ডাশেষে
 
সর্ষে ইলিশ আর খিচুড়ী, তাথৈ নাচের ছন্দ রুয়ে ঘুঙুর পড়ে
 
আকাশ ছুঁয়ে বৃষ্টি আনার দিনগুলো সব,
 
রংধনু এক,
 
আড়ং কিংবা রাপা প্লাজায় রূপোর দুলের অলকঝরায়
 
দীঘল চুলের অরণ্যতা, বনলতায় নিজকে দেখা, পাখির নীড়ের
 
চোখটি তুলে সেই তরুনের প্রতীক্ষাতে দোদুলমনের প্রশ্নরেখা...কোথায় ছিলেন?
হারিয়েছি মাতালপ্রহর, চৈত্রদিনের শুষ্কখরায় তোমার পরশ, স্নিগ্ধ আবেশ, 
আমার জারুল চোখের ছায়ায় তোমার বসত, চৌরাসিয়ার
 
বাঁশির সুরে তোমার সাথে ভুবনপাড়ির তীব্র নেশা,
 
বুকের ভেতর ধুকপুকে এক নষ্ট কাঁপন,
 
একটি চিঠি-
 
নীলচে সুরের মূর্ছনাতে অজানা সেই কষ্ট শুধু,
 
নিঝুম রাতের কান্নাভেজা প্রিয় বালিশ, স্বপ্ন দেখার স্বপ্নটুকু,
 
তোমার বুনোগন্ধমাখা খামের ভেতর শুকনো ফুলের পাপড়ি ছুঁয়ে তোমার ছবি,

আর তোমাকে।

No comments:

Post a Comment