শুভা কবিতা অথবা
কথা
আমারতো কবিতা লিখবার কথা ছিলোনা,শুভা।
আমারতো কবিতায় আসবারই কথা ছিলোনা।
আমি বড়জোর লিখতে পারতাম উনত্রিশ
দেশ ভ্রমণ।
আমি, যদি ইচ্ছে হয় খুব বেশী লিখবার
তবে লিখতে পারতাম দৌড়ে পালানো
কোলে পাঁচবছর বয়সী শিশু নিয়ে চারপাশ থেকে গুলি হওয়া সময়, বেলগ্রেড।
লিখতে পারতাম ক্রেমলিনের বেশ্যার
মেয়রপাড়া উচ্ছেদ নিয়েও,
লিখতে পারতাম শরণার্থী শিবির বৈরুত,
যেখানে নামাজের বিছানায় অগাষ্টিনের
যিশুকে ডাকা প্রহর।
লিখতে পারতাম কোকেইনে ভর আলেক্সান্দ্রিয়া
বিশ্ববিদ্যালয়,
লিখতে পারতাম পয়েন্ট টু টু বোর
রাইফেল, নিউ ওয়েলস।
লিখতে পারতাম হুগো শ্যাভেজের দিকে
তাকিয়ে হেসে দেয়া বোগোটা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন রেস্তোরা।
লিখতে পারতাম ভালোবাসাহীন সঙ্গমের
রেড লাইট ষ্ট্রিট অসলো,
ব্রোথেলের বেথেলহাম,
নগ্নতার সুইস সেনাবাহিনী হেড কোয়ার্টার,যেখানে
যোণীর ভেতর লুকায় ধর্ম।
লিখা যেতে পারতো আখের গন্ধময় কোপেনহেগেন
ছয়,
লিমাসল কিঙবা পাফোসের ফেনীল সমুদ্র।
লিখা যেতে পারতো অষ্ট্রিচ পাখির
ডানায় শূন্যতা,
অপেক্ষায় থাকা তরুণীর উরুতে গুজে
দেয়া চিঠি।
কিংবা ক্যানোপির ধারে ডায়মন্ড
হার্বার।
অথবা রয়েল ডাচ পরিবার ঘুমাতে থাকা
সময়ে,
নিরাপত্তারক্ষী সাতাশের উদ্ভিন্নযৌবনার
একান্ত সময় নিয়েও চাইলে লিখা যেতো।
লিখা যেতো কাবুল,পেশোয়ার অথবা
দিল্লী।
লিখা যেতো জেগে থাকা ষোড়শী ঠোঁটে
সাড়ে চারশ বছর, আইয়ানাপা।
লিখা যেতে পারতো তেরো বছরে শিক্ষিকার
ভারী বৃষ্টিপাতে আমার ধর্ষিত হওয়া দুপুর নিয়েও।
লিখা যেতে পারতো আমার শহর ঢাকা
নিয়েও।
শুভা,
সব বাদ দিয়ে আমারতো
নিজ মৃত্যু সনদ পাঠ করা অশ্রাব্য
ভাষনে,
নিজ মৃত্যু সংবাদ জানাবার জানাজা,
কবিতা লিখবার কথা ছিলোনা।
লীলা এবং শুভ্রস্বপ্নের
খোলা জানলা
বাতাসে মিশে থাকা তোমার গন্ধ,
ঘর জোড়া আমাদের ভালোবাসার গন্ধ,
দরোজা খুলতেই
প্রাচীন স্রোতে ভাইস-ভার্সা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে
কাঁপিয়ে দিয়ে যায় ফুটন্ত জ্বরে।
আমি হয়ত বোঝাতে পারছিনা,তোমায়।
তুমি কিভাবে থেকে যাও প্রতিমুহূর্ত,
প্রতিক্ষণ।
যেভাবে যেভাবে আমার হৃদয়ে শব্দ
এসেছে, আমি জাস্ট কবিতার
খাতায় বসিয়েছি।
কিছু যে হবে জানতাম না,
এখনও কিছু একটা যে হয়েছে তাও কিন্তু
না,
সামনেও হবে সে কথা জোর গলায় বলতে
পারছিনা, আমি।
জানলার বাইরের আকাশটা একেকভাবে
ধরা দেয়
একেক সময়ে।
জানলা থেকে দৃষ্টিপাতের জ্যামিতিক
নিয়মই হয়ত দায়ী,
সেটাও কিন্তু নিশ্চিত নই আমি।
কিন্তু ভালোবাসার প্রতিটা স্পর্শে
আমি নিশ্চিত জেনেছিলাম
তুমি, তুমি কেবলই আমার, আমার
আন-আর্মড ভালোবাসা।
তাইতো ভালোবাসার ইশতেহারে গোটা
গোটা শব্দ হেটে যেতে
যেতে কিছু একটা লেখা হয়ে যায়,
লীলা।
" আঙুলে তুলে নেই বাতাস,
পলকে রোদকণাদের।
তোমার চশমা সরিয়ে, চোখ ছুঁয়ে ছড়িয়ে
যাই শরীরে।
হালকা সাদায় ঢাকা পরিপাটি চাদর,
অস্থায়ী।
সরিয়ে মুক্ত করি আকাশপথ, হৃদয়ের।
বলেছি কাছে এসো, যতটা কাছে এলে
দূরত্ব শব্দটা মৃত্যুবরণ
করে। যতটা দূরত্ব থাকলে নিঃশ্বাসে
কাটে নিঃশ্বাস।
বলেছি অন্ধকার চাইছি তোমার, চাঁদের
আলোর উষ্ণতায়।
শুন্যে তুলে নিয়ে তোমায়, বলেছি শূন্যের শরীরে কোনও
পোশাক থাকবেনা।
তোমার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলেছি কোনও
ইনফ্রা থাকবেনা লালের
কাছাকাছি।
তোমার ভেতরে নিজেকে প্রবেশ করিয়ে
বলেছি, স্বপ্ন নয় সিঁড়ি।
ভালোবাসার অক্সিজেন টেনে নিতে
নিতে দুজন ভিজেছি দুজনার
বৃষ্টিতে।
অনুভব করেছি তোমার সাজানো নখের
পালিশে কাঁপন।
আড়াল সরিয়েছি সকল আলোর, মিথ্যের
বেসাতীর।
বিধিসঙ্গত অথবা সম্মত পামীর মালভূমিতে
মাথা রেখে
দুইজোড়া চোখ বরন করেছে সুপ্রভাত।"
এভাবে তুমি থাকো, থেকে যাও শব্দ
থেকে গভীরতর কোনও শব্দে।
যেখানে তোমার ছাদে দাঁড়িয়ে দেখা
আকাশটা ভালোবাসা
শব্দটা থেকেও সুন্দর, হয়ত।
অথচ কি বোকা আমি, কোনও উত্তর চাইনি।
প্রশ্নও করিনি কোনও।
বলে গ্যাছি কেবোল আমার কথাটাই।
জানতে চাইনি তুমি কি ভাবছো?
একটা যুগের স্পষ্ট ব্যবধান রেখা
আমাদের মাঝামাঝি,
মুছে দিচ্ছে অজান্তেই আমার হাতের
রেখায় তোমায়
নিয়ে হেটে বেড়ানোর ইচ্ছে।
লীলা, আমি হয়ত বোকাই থাকবো আমৃত্যু।
আমি হিসাব বিজ্ঞান কিংবা গাণিতিক
সংস্করণে কাচা বড্ড।
আমি তোমাকে বিব্রত করে ফেলেছি
হয়ত, বেশীই।
তোমাকে নিয়ে হয়ত লিখবো, হয়ত চোখের
পাতায় আঁকবো স্বপ্নিল স্থাপত্য।
হয়ত দ্যাখা হবেনা আমাদের, কোথাও।
বারবার এড়িয়ে যাবে তুমি, আর আমি
সব বুঝে মাঝেমাঝে
হুটহাট চলে আসবো শাহবাগ।
এভাবেই লীলা কাটবে বহুকাল, স্পর্শহীন
ভালোবাসায়।
তুমি হয়ত জানবেই না তোমার গন্ধ
আমি পাই,
তোমার গন্ধ আমি পাই, প্রতিদিনকার
বাতাসে।
যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দেয়ালে হয়ত
দেখবে কোনও অজ্ঞাত মৃত্যু খবর,
বুকের ভেতর একটা কান্না চেপে আসবে
হয়ত,
চোখের পাতায় হয়ত ঘুচে যেতে পারে
ব্যবধান,
হয়ত সেদিন তুলে নেবে মুঠোফোন।
ওপার থেকে এক অচেনা কণ্ঠস্বর বলে
দেবে
মৃত্যুটাও আমার জন্মের মতন একা।
আচ্ছা সেদিন, সেদিন কি তুমি একটা
লাল রক্তজবা টিপ পড়বে?
আচ্ছা সেদিন, সেদিন কি তুমি কাঁদবে
একবার?
সেদিন কি একটা বৃষ্টি মুছে দেবে
তোমারামার এক যুগের ব্যবধান?
__________________________________________________________
No comments:
Post a Comment