29 November 2016

নিবেদিতা পুণ্যি সঞ্চারিণী




আব্দার
তোমার কাছে ভালবাসা ধার নিয়ে; বাঁচতে চেয়েছিলাম,
ভালবাসা পেয়ে তো নয়!
হাত পেতে চেয়েছিলাম - দু'পায়ে মাড়িয়ে যাওয়া স্পর্শ-ধূলি। 
দু'হাঁটু মুড়ে করজোড়ে ভিক্ষা চেয়ে বলেছিলাম, আজীবনের দাসী করো প্রিয়! 
তবুও তো পাবো তোমায়; কিছুটা সেবার অধিকার।
ভালবাসা না-ই বা দিলে, হেলা-ই নাহয় দিও! 
দাওনি, নাও-ও-নি!

আর কত নরম হ'বো?
আসলে কী চাইতে আমার কাছে ভিড়েছিলে, বলো তো?
আমার মৃত্যু?
মেরে ফেলছো না কেন তবে? দূরে থেকেও কেন তাকিয়ে থেকে আরো দূর্বল করে দিচ্ছ?
না কি আমাকে মারতে গিয়ে; আমার চোখের ছায়ায় তুমি কেঁপে ওঠতে পারো,
আমার চোখে তোমার প্রতি গভীর প্রেমানুরাগের সুরমা আঁকা দেখে; ছুঁয়ে দিতে 
ইচ্ছে হতে পারে তার সুচারু, আমার উন্মুখ মরাল গ্রীবাদেশে-
এঁকে দিতে ইচ্ছে হতে পারে জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ চুম্বন; যা কোনদিন আর কাউকে দিতে ইচ্ছে 
করবে না তোমার, তুমি তা জানো!
না কি চোখের কোল বেয়ে গড়িয়ে পড়া অশ্রু দেখতে গিয়ে; থেমে যেতে পারে 
তোমার দু'হাতের হিংস্রতা! বেরিয়ে আসতে পারে- শক্ত ঘৃণ্য সেই অমানুষ রূপের 
ভেতরকার বিদগ্ধ এক প্রেমিক পুরুষ,
বলো! তোমায় আমি যা জেনেছি; তা তাহলে মিথ্যে নয়?

বলো, কেন বার বার দেখতে চাইতে?
এখনও কেন আসো, নানান মুখোশে?
যা বলতে ইচ্ছে করে তোমার; আমার হাতে হাত রেখে,
চোখেতে ডুবিয়ে দিয়ে তোমার দু'চোখ!
নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে থেকে ব্রীড়া আমার সকল অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে
আমি আমার প্রেমিক পুরুষের সমুখে বসে।
তুমি জানো, তুমি পারবে না এই সর্বনেশে রূপে উতল আমাকে দেখে-
খুব সহজে এড়িয়ে যেতে, উপেক্ষায় ঠেলে দিতে।
সূর্য রূপ অহং পৌরুষের সবটুকু গ্রাস হবে চাঁদের আয়ত্বে,
দুর্নিবার ইচ্ছেগুলো তখন গ্রাস করতে চাইবে চাঁদকে; তোমার গহন লোমশ বুকে,
তুমি তা জানো বলেই এহেন পরাজয় মেনে নিতে না চেয়ে; পালিয়ে যেতে চাইছো,
বাঁচতে চাইছো যুদ্ধে না নেমেই; পলাতক ভীরু জয়ীর পোষাকে,
তোমার এমন কাপুরুষতা কী সাজে?
তুমি কী ভেবেছো আমি বুঝিনি! কে আসে- বিচিত্র সেই বেশে?
কে আমার অধর ছুঁয়ে দিয়ে যায়,গভীর ভালোবেসে?
চুপি চুপি গান শুনে, কে আমার মন বুঝতে চেয়ে!
ভাবো আমি কিছুই বুঝিনা, তাই- না?! 
সব-ই বুঝতে পারি! বুঝতে পেরেছি এ-ও, তোমার চাওয়া আমি-ই!
তোমাকে বুঝতে পেরেছি, এটাই বড় অপরাধ বুঝি?
ফুরায় না যা, আমাকে দি‌য়ে-ও এমন শাস্তি!?
ভালোবাসার মত করে; যে ভালবাসতে জানে,
তাকে কী ভুলে থাকা যায়, না পারছো?
কত কী ব্যস্ততায় জড়িয়ে রেখে নিজেকে, কত শত কাজে; আমার কাছ থেকে দূরে আছো, 
বেশ তো! ভালো আছো?
জিজ্ঞেস করেছিলাম, আমার অবস্থানটা কোথায়?
ঘৃণায়, না ভালবাসায়?
মেলেনি উত্তর তারও আজো...

শব্দহীন নিরবতার কাছে তাই প্রশ্ন,
মৃত্যু যন্ত্রনার চেয়েও আরও বেশী যন্ত্রনা-ই যদি দেবে,
এই উপকারটুকু তবে করে যেও,
তোমার বুকে ল্যাপ্টে, জাপ্টে পিষে মেরে ফেলো!





নিবেদনের ডাক
তা’র ডাকগুলো একে একে জমা হচ্ছে। একদিন এক সাথে করে সে’সব
তোমার সাথে; অনিবিড় দিনগুলির মিমাংসাতে, ভিড়বেই কাছে!
প্রতিবার ডাকে সাড়া না পাওয়ার ব্যর্থতায়; মুহ্যমান দু’চোখে নেমে আসা-
অশ্রু জল, জেনো ব্যর্থ নয়। তার প্রতি ডাকে, অ-শর্তে স্থাপিত
তোমার নিঃশর্ত পক্ষপাতে, আরো বেশি নিজস্বতায়;
পরম বুকে মনো-ধ্যানে কাছে টেনে, কাটিয়ে দিয়েছে সারা রাত।
জ়েগে উঠেছে প্রতিটি ভো্র, তোমার অক্ষীয় প্রেমের স্মরনে।
প্রতিদিন গাঁথা সেই রিক্ত অশ্রু মাল্যের হার, একের সাথে অন্যের হাত-
ধরাধরি করে; প্রীতি অর্ঘ্য ঢেলে; ভালবাসাকে জড়িয়ে দেবার প্রতিজ্ঞায়,
বরণ মালা পরিয়ে দেবার সে আয়োজনে, একদিন নিশ্চই সে আসবে!
তোমার এতদিনের অপেক্ষার সেই প্রতীক্ষাময় দিনে, বলো সেই দিনটিতে তুমি;
তা’র আবেগের সবটুকু ভাব বুঝে নিতে পারবে? পারবে দুষ্পাঠ্য ওই দৃষ্টিকে
পড়ে নিতে সহজে? এত বছরের সঞ্চিত দৃষ্টি! চাহনির লজ্জ্বা ভেংগে সবটুকু কথা ঢেলে; সে যখন তোমার চোখে তার বিশ্বাসী চোখ রেখে তাকাবে, অভাবনীয় সে ভাষা পড়ে নিতে পারবে তো!
অন্য আর কোথাও কোনা-কানি-ও বিলায়নি যে; তার অনুভূতি অনুভব, আপন উপলব্ধিতে বুঝে; রাখবে কি তোমার ওই ডাগর চোখ অপলক তা’র চোখে? ঠিক সেই ছবিটির মতন! অথবা তার চেয়েও আরো বেশি শোভন; কারুময় দৃষ্টি মেলে?
দু’চোখের ল্যাপ্টে যাওয়া কাজল-কোন; বৃদ্ধাঙ্গুলে মুছে, চিবুক ছুঁয়ে তুলে ধরবে কি তার আনত মুখ? মুদে থাকা দু’চোখ দেবে কি খুলে; আলতো চুম্বনে?
চোখের পাতায় একে-একে বুলিয়ে যেতে থাকবে কি তোমার মুগ্ধকরা সেই দৃষ্টি?- মধুকর!
চোখে চোখ রাখা তোমার দু'চোখে; তার অপূর্ব সর্বনাশ দেখে;
বিবশা দেহটা এলিয়ে দিয়ে যখন; তোমার শরীরে ঢলে পরতে চাইবে অরুণা,
পারবে কী তার সমগ্র দেহ মনের ভার কোলে; বুকে; জাপ্টে তুলে নিতে?
চোখ তার চোখ থেকে ফিরিয়ে নেবে না তো?
দৃষ্টি মনোহর! সেদিনের সেই অপূর্ব মুগ্ধতার ক্ষন; দীর্ঘ অনেক বছর তার ডাকে সাড়া না দেয়ার কারণ দর্শীয়ে; ভালোবাসার হার-জিত খেলায় জ়েতার তুরুপের তাস হাতে পেতে যেন আবার; জেদ ধরো না! তোমার সবটুকুন নৈবেদ্য নিয়ে; সেদিন তোমার সেই সম্পুর্ন হার মেনে নিতে; আর তার সবটুকুন উজাড় করা নিবেদন গ্রহন করে নিতে; তুমি ও তোমার দেহ-মন তৈরী তো? 

No comments:

Post a Comment