মা ও আপেলের ঘুম
মায়ের আঁচল থেকে টুপ-টাপ খসে পড়তো সংসার, দিদিরা তা কুড়িয়ে
এক্কাদোক্কা খেলতো।
আমি ভাবতাম সংসার বুঝি খেলা।
বাবা বলতেন- সংসার একটি বিজ্ঞান।
মা বিজ্ঞান জানতো কিনা জানিনা,
তবে সে যখন সারা বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের মতো হেঁটে বেড়াতো তখন
যাবতীয় গতির সূত্রগুলি তার পিছে পিছে দৌড়াতো।
আপেলগুলি মাধ্যাকর্ষণের মতো ঘুমিয়ে থাকতো আলমারিতে।
একদিন মাও ঘুমিয়ে গেলো। কী দ্রুত উড়ে গেল একটি ডানাওয়ালা ঘড়ি।
আজ সমস্ত বোধ তার কবরের কাছে স্তব্দ হয়ে যায়।
আর সে বিজ্ঞানের সীমায় অদৃশ্যমান এক নদী।
সহজপাঠ
মুঠোভর্তি
ভালোবাসা ছিল, খুলে দিলেই জল। আঙুলের ডগায় থৈথৈ স্নান।
অনামিকায়
যে আংটি চকচক করে উঠতো, আমরা তাকে শকুন্তলা বলে ডাকতাম।
যার
গায়ে তোমার নামের চারুকাজ।
সন্ধ্যার
সহজপাঠে বাড়ি এঁকে দিতে- বাংলাখাতায় পেন্সিলের সংসার।
আমাদের
দরজা- জানালায় আজও উড়ুক্কু হাওয়া।
শুধু
তুমি নাই জেনে গেছে দূরন্ত শালিক।
তবুও
উঠোনজুড়ে পাখি আসে, পাখি যায় -
ওয়ান
ফর সরো, টু ফর জয়....
আয় চাঁদ
তুমি অক্ষর এঁকে দিলে আমরা জ্বলজ্বল করে উঠতাম। বিসর্গ বর্ণের
মতো খুলে যেতো চোখ-
অজস্র দৃশ্যের অন্ধকার।
তুমি জ্যোৎস্নায় দাঁড়ালে গাছগুলি ডাক দিতো হাওয়া-
টুপটাপ হাওয়া।
আমাদের ষোলকলার সংসার; এমশঃ গোল, ক্রমশঃ চন্দ্রবিন্দু ঘুম।
অঙ্কুরিত শব্দ যেন ভাবী কালবেলা।
উড়ে যেতে যেতে আমরাও মায়ার মৈনাক।
এখনো জ্যোৎস্না আসে, রাতের আঙুলে বাজে নির্জন সরোদ।
সাতটি বকুল গাছ এখনো আকাশ,
সোমম-লে তিরতির তুমি-
আয় চাঁদ... আয় চাঁদ...
ঘরোয়া
মা
কাগজের নৌকা বানালে, আমরা তা ভাসিয়ে দিতাম।
জল
তাকে নিয়ে যেতো-
কখনো
দীর্ঘশ্বাস চুরি করে ঘুড়ি বানাতাম আর উড়িয়ে দিতাম আকাশে।
উড়ে
যেতো সংসারের বাতাসকণা।
ঘরোয়া
শিল্পে মা ক্রমশঃ রূপকথার মতো- একাএকা নৌকা বানাতো, কাগজে দীর্ঘশ্বাস বানাতো।
আমরাও
ভাসিয়ে দিতাম, উড়িয়ে দিতাম।
কী
জানি, মা তার বেদনাকে এভাবে ভাসাতো কি না, উড়াতো কি না !
দ্বাদশ নামের মতো
সংসারে দুপুর নামে কিছু রোদ্দুর ছিলো, তুমি ভাগ করে দিলে আমরা
ঝলমল করে উঠতাম।
দিগন্তে কিরণকণা- দ্বাদশ নামের মতো তোমার উড়াল। চোখ মেলে দেখে
নিতে কার চোখে বারমাস আঁকা।
রোজ বড় হতো ছায়াগাছ, রোজ উষ্ণ নিয়ে বেজে উঠতো শরীর- আমাদের
অধিক বেহালাবেলা।
কূহু ছিলো- জননীজিহ্বা জুড়ে কথার সোহাগ, কবিতার লাল
কলাবউ।
হাতভর্তি প্রণয়রেখা, আকাবাঁকা রাশিচক্র, একেবেঁকে আলো এনে
দিতো।
সারাদিন ঘূর্ণি ছিলে, সারাদিন পাখি।
সাদারঙ
চলো,
ফেরার পথে বায়েস্কোপ দেখি, দৃশ্যের দিকে চোখ রেখে বলি-
জয়তু
বিন্দু....
জয়তু
বিসর্গ....
শুরু
ও শেষের মাঝখানে তোমার সন্তান ভাল নেই- দুধভাত ছেড়ে গেছে তারে।
অজস্র
বর্ণিল ছিল, শব্দের সিঁড়িপথ ছিল। তোমার অন্ধকারে উড়ে গেছে পাখি-
এক
জোনাকি.... দুই জোনাকি....
জোনাকির
ওড়াউড়ি।
আলো
অন্ধকারে তোমার সন্তান ভাল নেই- জুঁইফুল ছেড়ে গেছে তারে।
আমাদের
নদীগুলি, আমাদের বৃক্ষবন তোমার অপেক্ষা করে।
তুমি
এসো, আমাদের হাতে হাতে-
জুঁইফুল
দেও....
দুধভাত
দেও....
No comments:
Post a Comment