সোম কর্মকার...
রিসেপশন থেকে নামটা অ্যানাউন্স করতেই
অপেক্ষারত দুজন মানুষ ছুটে গেছিল রিসেপশনে। কাছের মানুষের জন্য উদ্বিগ্নতা মানুষকে
কী ভীষণ অসহায় করে তোলে। নামটা শুনেই ছুটে গেছিলেন, পদবীটা খেয়ালই করেন সোম সরকার।
পাশের ছেলেটিই বোধহয় সোম কর্মকার। কে জানে সে কার অপেক্ষা করছে।
ছেলেটা ফিরে আসতে সোম বাবুই আলাপ করলেন নিজে থেকে। আসলে তিনি
টেনশন কমাতে চাইছিলেন কথা বলে ।গতকাল মাঝ রাতে সুস্মিতার অ্যাটাকটা হয়েছিল। এখনও
কিছু অ্যাসিওর করতে পারেননি ডাক্তারবাবুরা।
কে জানে, সুস্মিতা তার আগে চলে যাবে
কিনা। একমাত্র মেয়ে জামাই থাকে দুবাই। সোমবাবু রিটায়ার করার পর থেকে বড্ড একলা বোধ
করেন ।দুজন দুজনকে ঘিরে দিন কাটাচ্ছেন। দুজনের একজন চলে গেলে জীবনটাই তো থমকে যাবে। এসব চিন্তা ভাবনা মাথায় আসতেই হিমশীতল ভয় সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সোমের সাথে
কথা বলে একটু টেনশন ফ্রি হওয়ার চেষ্টায় জারি হলেন সোম সরকার।
সোম ছেলেটাকে বেশ ভালো লাগলো সোমবাবুর
।বেচারার মা ক্যানসারের পেশেন্ট। লাস্ট স্টেজ। মৃত্যু খুব কাছে নিশ্চিত জেনে গেছে। অনাথ আশ্রম থেকে এনে সন্তানের ভালোবাসা দিয়েছিল এই মা সোমকে। বড্ড ভেঙে পড়েছে
সোম। নেহাত ছেলেটাকে মনের জোর দেওয়ার জন্যই তার মা-কে দেখতে যাওয়া উচিত বলে মনে
হল সোমবাবুর। অথচ তার জন্য যে এই ভয়ংকর চমক অপেক্ষা করছে তা কল্পনাও করতে পারেন নি
তিনি। সাথী... এক সময়ের প্রিয় ছাত্রী প্রফেসর সোম সরকারের ।সারা কলেজ তাদের নিয়ে
এমন একটা বিশ্রী গসিপ তৈরি করেছিল যার মধ্যে এক ফোঁটাও সত্যতা ছিল না ।তারপর আর
কোনো যোগাযোগ রাখেননি কেউই। সেই কন্যাসম সাথী, যে প্রতিটা মুহূর্ত দুষ্টুমি আর
মজায় মাতিয়ে রাখতো - সে আজ মৃত্যুশয্যায়...
সোমবাবু আবার লেখালেখি শুরু করেছেন
।এই বছর বইমেলায় তার প্রথম বই প্রকাশ হতে চলেছে। সব ব্যবস্থা সোমই করেছে। ...
হ্যাঁ... সোম এখন সোমবাবুর সাথেই থাকে। সেদিনের পর সুস্মিতার জ্ঞান ফেরে নি আর,
সাথীও পারে নি ফোর্থ কেমোর ধকল সহ্য করে টিকে থাকতে। একই সঙ্গে সুস্মিতার চিতায়
আগুন দিয়েছিলেন সোম সরকার আর সাথীর চিতায় সোম কর্মকার। তারপর....নাহ সোম সরকার
দুবাই-এ মেয়ে জামাই-এর কাছে যান নি জীবনের স্মৃতিচিহ্নদের উপেক্ষা করে। সোম
কর্মকারও ফিরিয়ে দিয়েছে বিদেশ যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ ।সময়ের সাথে সাথে দুটো অসহায়
মানুষ একে অপরের সহায় হয়ে নতুন করে বাঁচার আনন্দে মেতে উঠেছে ।
No comments:
Post a Comment