14 August 2016

শুভ্রদীপ চৌধুরী


প্রশান্ত বাবু একপ্রকার জোর করে গল্পটা শুরু করলেন, শুনুন আজকের মত সেদিনও অফিস থেকে ফিরছিলাম, বাসে উঠেই সিট পেলাম তাও আবার জানলার পাশে।বাইরেটা দেখছিলাম, বিকেলের নরম কচি লেবু পাতার মত আলো এসে কেমন মাখিয়ে রেখেছে চারপাশ।সব ভাল লাগছিল।তখনই চোখে পড়ল মেয়েটা!আমার সিটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আবার একবার তাকালাম,সেই মেয়েটাই তো!সংগে সংগে আমার ভেতরটা সাপের জিহ্বার মত কাঁপতে লাগল। দরদর করে ঘামতে লাগলাম।পকেট থেকে রুমাল বের করবো সেই শক্তিও যেন নেই! 
ব্যাগ থেকে জলের বোতল বের করে খানিকটা খেয়ে আবার বলতে শুরু করলেন, আপনি ভাবছেন কে এই মেয়েটি? তাই তো! শুরু থেকে বলি, কলিগ সুশান্তের মেয়ের বিয়ে ছিল, ফিরতে রাত হল।তা ধরুন, বারোটা তো হবেই! হেঁটে ফিরছিলাম। বন্ধ গোডাউনের ভেতর থেকে ভেসে আসছিল চাপা চি
কার! দৌড়ে গেলাম, ভাঙা এক খানা জানালার পাশে গিয়ে দেখলাম, চারটা ছেলে একটা মেয়েকে...
মেয়েটা আমায় দেখতে পেয়েছিল! কারন ওই ভাঙা জানলা বেয়েই রাস্তার আলো আসছিল। মেয়েটা বলছিল, বাঁচান, বাঁচান আমায়। ওরা আমায় এবার দেখতে পায়। আমার দিকে ছুটে আসে। এই পাড়াটা আমার হাতের তালুর মত চেনা তাই ওরা সে রাতে ধরতে পারে নি।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এবার বুঝলেন তো মেয়েটা কে?
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম, বুঝলাম। কিন্তু ওই সামান্য সময়ে অল্প আলোয় আপনি যে মেয়েটিকে দেখেছিলেন বাসের মেয়েটি হয়তো অন্য কেউ!
প্রশান্ত বাবু হাসলেন, ঠিক বলেছেন। সেই রাতের পর আমি মেয়েটিকে দেখি  পরেরদিন ওই গোডাউনে, চিত হয়ে পড়েছিল, হাঁ করে তাকিয়েছিল গত রাতের মত। চারদিকে পুলিশ আর মানুষজনের ভিড়! আমি ফিরে এসেছিলাম। এর পর থেকে মাঝে মাঝে তাকে দেখি। ঘুম আসে না। রাতের পর রাত জাগি। আমি তার ঝুকে পড়া মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম, কোথাও থেকে ঘুরে আসুন।
-গিয়েছিলাম, কাজ হয়নি। সে মেয়েটাও গিয়েছিল ওখানে। আমার আসলে নিস্তার নেই!
চাপা গলায় বললাম, ভাল সাইক্রিয়াটিস্ট এর সংগে কথা বলুন।
-দু বার গিয়েছি, কাজ হয়নি।
 আমার স্টপেজ এসে গেছে দেখে বললাম, যাই।
বাস থেকে নেমে দেখলাম উনিও আমার পেছন পেছন নেমে পড়েছেন! মুখে বললেন, অফিস ফেরতা বাসে সামান্য পরিচয় তবু আপনাকে জোর করে কেন গল্পটা শোনালাম বলুন তো? আমি বললাম কেন?
-দিন কয়েক আগে এক রাতে গোডাউনের ওই ভাঙা
 জানলাটার পাশে গিয়েছিলাম। কি দেখলাম জানেন? দেখলাম, সেই দিনের আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমি আরো এগিয়ে গেলাম বলতে পারেন আমার কাছে। গিয়ে পাগলের মত বলতে লাগলাম, কে? কে? কে-হে তুমি?
উত্তর এল, তোমার সাহস!

আমি চুপ করে তার দিকে তাকিয়ে আছি দেখে তিনি বললেন, যাই। আমি বললাম, এবার বলুন কেন আমায় এই গল্পটা বললেন? প্রশান্ত বাবু সামান্য হাসলেন, যাতে আমার গল্পটা অন্য কাওকে বলতে পারেন। তিনি চলে গেলেন। হে পাঠক, আমি আপনাকে তাই এতক্ষণ প্রশান্ত বাবুর গল্পটা শোনালাম, যাতে...

No comments:

Post a Comment