আর মাত্র
ছয় মাস তারপর এস.এস.সি পরীক্ষা। হাবিবা এবার পরীক্ষা দেবে। ডাগর ডাগর চোখ পনের বছর
বয়সের হাবিবা। সেই এত্তটুকুন বয়স থেকেই মাথা চিবুক ঢেকে টাইট করে হিজাব পড়ে, একান্নবর্তী পরিবারের সদস্য হওয়ায়, বলে-কয়ে এ পর্যন্ত পড়েছে সে। চোখ
জুড়ে তার বেড়ে ওঠার স্বপ্ন আঁকাশ ছুঁইছুঁই করে। পরিবারের অন্য কেউ ম্যাট্রিক পাস
দেয় নাই এ নিয়ে কিছুটা অহংকারও কাজ করে মনের ভেতর। বড় ভাইয়ের বউরা তাই খোটা দিতেও
ছাড়ে না।
-“মাইয়া বড় হয়া গ্যাছে এ্যাহন এ্যাতো পড়া কিসের ভাল পাত্র দেহাই বিয়া দিয়া
দিক, সংসার করবো”।
হাবিবা
চমকে যায় কিছুটা ভয়ও পায়। বিয়া? এ্যাহন কি বিয়ার বয়স? হাবিবা মনে
প্রানে ছোট হতে চায় যাতে তার বিয়ের কথা না ওঠে বাড়িতে। কাজও করে বিস্তর। রোজ স্কুল
যাওয়াকালে পাঁড়ার ছেলেরা তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। হাবিবার ভয় লাগে, তবে ইচ্ছে করে টং
দোকানে চা খেতে। চা খেলে নাকি রাত জাগা যায় তবে তো সে রাত জেগে বেশী করে পড়তে
পারবে। রোজকার এই ইচ্ছাকে একদিন পূর্ণতা দেবে হাবিবা ভাবে। কিন্তু কেই দেখে ফেললে
তার পরে কি হবে সেই ভয়ে আতংকিত হয়ে থাকে, রোজকার এই আতংক
হাবিবার ভাল লাগে না। ইচ্ছে করে সব ছেড়ে দূরে কোথাও হারিয়ে যাবে যেখানে সে রাত হলে
ছাদে জোসনা দেখতে পারবে সুমীদের সাথে ঘুরতে যেতে পারবে যেখানে টং দোকানে চা খেতে
পারবে। হাবিবা দিন দিন বড় হয় আর তার প্রতি পরিবারের বাধ্যবাধকতাও বাড়তে থাকে সেই
সাথে বাড়তে থাকে হাবিবার হারিয়ে যাবার প্রবল ইচ্ছা। একদিন কোচিংয়ে এক ছেলের সাথে
পরিচয় হয় হাবিবার ওর নাম জামিল।
জামিলের
চোখে-মুখে যেন সবাইকে ভরসা দিতে পারার ছায়াটা খুব খেলা করে। হাবিবা মুগ্ধ হয় সেই
সাথে হাবিবার সরল মুখখানার মাঝে জামিল ও বন্দী হয় গভীর মায়ায়। এক সময় হাবিবার
বিষণ্ন সময় কেটে ছোট ছোট স্বপ্ন পূরণ হতে থাকে জামিলের সাথে। টিপটিপ করা ছোট্ট
বুকে ধীরে ধীরে জন্মায় সাহস। জামিলও আগলে রাখে তাকে পবিত্র ভালবাসায়। হঠাৎ করে
একদিন হাবিবার বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয় ঠিক হয়ে যায় দিনক্ষণ ও এস.এস.সি পরীক্ষা শেষেই
বিয়ে। এলোমেলো ভাবনায় হাবিবার সত্যি সত্যি হারিয়ে যাওয়ার ইচ্ছাটা প্রবল হয়ে ওঠে
জামিলও শক্ত করে ধরে রাখে তার হাত। ভাল থাকার সীমাবদ্ধতাকে ছেড়ে ওরা পালায় অফুরন্ত
ভালবাসার দিকে। মা-বাবা তার ভাল চায়না এই ভাবনার জল চোখে হাবিবা সমাজের নীতিকেও
তিরস্কার করে। মাত্র ইন্টার শেষ করা জামিল ভালবাসার হাত ধরে কিছুদিন বাইরে লুকিয়ে
থেকে বাসায় এসে ওঠে হাবিবাকে নিয়ে। জামিলের পরিবারে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে প্রতিবেশীর
সমালোচনায় মুখ ডাকে। কিছুদিন যাওয়ার পর সব ঠিক হয়ে যায়।মা-বাবা ও ছোট বোনটার জন্য
মন খারাপ শেষে হাবিবাও গুছিয়ে ওঠে সংসার। দিন কাটতে থাকে একদিন রান্নাবান্না শেষ
করে জানালার পাশে এসে দাঁড়ায় হাবিবা দৃষ্টি ফেলে বাইরে একদল মেয়ে খাতা-কলম নিয়ে
পরীক্ষা দিতে যাচ্ছে হঠাৎ ছ্যাত করে ওঠে হাবিবার বুকটা
জানালার শিকে শক্ত হয়ে ওঠে হাত। আজ এস এস সি পরীক্ষা হাবিবার চোখে পানি চলে আসে
জানালার ওপাশে সমস্ত পৃথিবীটাই ঝাপসা হয়ে আসে। হাবিবার স্বপ্ন হারিয়ে যায়। এভাবে
হারিয়ে যায় হাবিবা নিজেও।
No comments:
Post a Comment