27 December 2017

একগুচ্ছ কবিতা—শারমিন আক্তার


ভবঘুরে
তোমাদের ঘরে সুখী কোন কবিতা
          রোজকার সংসার গোছায়
              আঁচল পেতে
ওদিকে আমার ঘাম শুষে খায় রাজপথ
ভদ্র পল্লীর গুটিকয়েক বিধাতার মতন

যেন মজলুম হতেই এসেছি আমি
ডিসকাউন্টের ফর্দে চাপা মানুষ এক
     বিষণ্ন পাহাড় গ্লানি সমেত
          কুঁজো পিঠের ধু-ধু শহরে।
ছায়াপথেই শেষ মিলল সরাইখানা
     কী করে আর বাড়ি যাই!


অন্তপুরের গল্পকথা
কিয়ৎ লাল পিঁপড়ে তাড়িয়ে বেড়ায়
     বুভুক্ষু সুড়সুড়ির গোগ্রাসে
          সুজনি ঘাসে লেগে আছে
              তার উন্মাতাল গাঢ় শ্বাস।
                   এখানে এখন গল্পে উদ্বেল আমাদের অন্তপুর।
কিছু ঢেউ
     উঠতে না উঠতে না উঠতেই মিলিয়ে গেল
          যেন কথার ফাঁকে আটকে গেছে কথা
              যেটুকু শোনা গেল- সশব্দ মৌনতা
                        তৃপ্তির মাঝে অনন্ত অতৃপ্তি
নিভৃতে ঘুমিয়ে গেল
পাতাদের কোলে।




মৌনব্রত
ভাগীরথীর মিথ গলে
     তুমি এক সমুদ্রসম মৌনতা,
আজকাল তাই নাকি প্রাক্তন
ঝিঁ ঝিঁ পোকার ঠোকরে অতীত খোঁড়ে।
আমিও সেখানে শিলালিপি খুঁড়ি
দিন, ক্ষণ, কাল, পরিক্রমা শুদ্ধু।

বাতিকগ্রস্ত বৃশ্চিকলগ্ন তখন
শ্যামলিকার ভাঁজে সেঁকে জান্তব ফিসফিস
আপ্লুত মর্মর ঐ জরাগ্রস্ত বন্যতার
     শোনা যায় কালেভদ্রে।

ওদিকে বেওয়ারিশ শব্দদূষণ
অষ্টপ্রহরে জয়ন্তীর হিসাব কষতে ব্যাস্ত।
আহ! আটকুঁড়ে আহ্নিকের বুঝি ফুরসত থাকতে হয়?
শুধু বাষ্পীভূত কথাদের যূপকাষ্ঠে
মড়ক লেগে থাকে “মৌনব্রত”




                                                    গল্প
কবিতার বোনা পাঁড়ে শাসন করি শব্দ
          তোমায় নিয়ে লিখব বলে
ঘুরে আসি তের নদী, সাত-সমুদ্দুর
          সেখানে নিঃসীম বেলাভূমে
ভুলোমনা বালুকণা তিরতির করে
বয়ে চলে স্মৃতি আশ্রয়হীন শরীরে তাদের,
দিগন্তে মিলে লাল সূর্যে
সতর্ক লাল টিপ ভেবে তোমার কপালের,
ফেনায় মেখে তোমার আবেগ
ঢেউ হয়ে গড়ায় চোখের জলে।

এমনি কোন আস্তিনে গোটানো সন্ধ্যায়
চুপচাপ শোনে গল্প তোমার
উত্তাল বন্য হাওয়ায়
কচি ঘাসের ডগায় ক্ষণজন্মা শিশিরের গল্প।


No comments:

Post a Comment