আনমনা
রোদ্দুর ভেজায় হৃতমহল
বাদামী এনভেলাপ খুলতেই উড়ে যায় গুচ্ছ গোলাপ;
টুপটাপ
লাজুক
শব্দগুলো লুকোতেই পশ্চিমে ওঠে মেঘের দেয়াল। তখন
জানালায়
নেমেছে ঘনঘটা, আঁচলের আড়ালে রোদনসূত্র গুছিয়ে নিয়ে
এক ঝাঁক বিহগ
ঠিকানা ভুলে উড়ে যায়। মোহনচূড়ার পিঞ্জরে লেখা গিরিখাদের
পাণ্ডুলিপি
পড়তে পড়তে অশ্রুপাতের রং বদলায়। বালিকা তখনো খণ্ড খণ্ড মেঘপুঞ্জের
মাঝে দৃষ্টি
ফ্যালে; প্রত্যাশিত আলোক বিন্দু দেখাবে বৈকুণ্ঠের দুয়োর।
সব ভাঙা
স্যুটকেস, জামার বোতাম, স্কুল ইউনিফর্মের
ছেঁড়া হাতা,
পিতলের মেডেল
গোছাতে
গোছাতে অভাগিনী, শুকিয়ে ফ্যালে অদৃশ্য সজল প্রপাত। ফিরে যায়
লিখিত দলিলে,
যেখানে কালির স্বাক্ষরে ঘটেছিল শুধুই দেহ বদল। তবু বদলে যায়নি
মনের অভিধানে
লেখা যত সুখ-যাতনার ত্রিলিপি। পুরুষতান্ত্রিক নীতির কাছে হেরেছে
মূল্যবোধের
সবক’টি অনুরাগ; চুর-চুর হয়ে গ্যাছে ছান্দসিক ইচ্ছে যত।
একদিন দখিন
হাওয়ায় সরে যায় বুকের কাপড়; হু হু করে ঢুকে পড়ে কোনো ইংলিশ
হ্রদের
বৈকালিক ঐকতান। উদ্বেলিত
ঢেউ, আঁধার চৌচির ক’রে এসে দাঁড়ায় অন্দরচিত্তে। কবিয়াল যেন
ঠিক ঠিক
অস্পৃশ্য অবয়ব। যেদিন
বেডরুমের সব ধুলো সরিয়ে একদল প্রজাপতি ঘরময় ওড়ে, সেই থেকে
রুপুর সব
অজানা সৈকত হঠাৎ শ্রাবেন ড্যাফোডিল আর পুরুষ জিনিয়ার বাগান হয়ে ওঠে।
আনমনা
রোদ্দুর ভিজিয়ে দিয়ে যায়, পড়ে থাকা হৃতমহলের
ঝিমানো
বাতিগুলো।
নিমগ্নতায় ইস্টিমারের অন্তরিপা গীত
তোমাকে দেখার পর এক অবিরাম সোনালি মেঘ নেমেছে সমুদ্রালয়ে।
তামাটে তানপুরায় বেজেছে হাওয়াই বাঁশি। ভেজা ভোর আলোকরাশি
ছড়িয়ে দাঁড়িয়েছে
গৃহমন্দিরে। তারপর থেকে দিকভোলা হরিণ বালক ইচ্ছে করেই
ভুলে যায় ফেরার ঠিকানা।
তোমাকে দেখার পর ক্লাক্টন সীর সব মধ্যরাতের বাতিরা
নেমেছে
বালুর সংসারে। আঁজলা ভরা এক শীতল-শুভ্রতা পান করতেই
কলরোল বেজে উঠেছে নির্জন রথে। সেই দেখার পর চৈতন্যের
ভেতর
আলোর জোনাক ছুটছে গ্রহপুঞ্জের মতো।
বিষাদসূত্রে বাঁধা যত দগ্ধ ঋতুর গান, সব যেন মুছে ফেলেছে
উইলোদের বেলান্তের ছায়া।
উড়াল পর্বত থেকে কাস্পিয়ান সমুদ্রে ঝরে পড়া নিশ্চুপ বিরহ
থেকে রাগিণী শিখেছে
উন্মাদনার স্বরলিপি। অম্বলা নদীর বুকে দাঁড়িয়ে ওয়াটারমিল
খুঁজেছে
রুপুর হাতে জড়ানো অদৃশ্য মায়ার প্রপাত।
তোমাকে দেখার পর থেকে তুষার ওমে মুছে গ্যাছে
ডী-নদীর নিঃসঙ্গ অস্থিরতা। সোয়ানের ডানায় জলবায়ু ফেলেছে
সবুজ চিহ্ন; শিমুল তুলর মতো উড়ছে সফেদ ঢেউ শৈতিকা
ভূ-গ্রহে।
তোমাকে দেখার পর
লণ্ডভণ্ড করা টিসুনামি, ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক ফিরে
গ্যাছে, ব্যাকওয়ার্ড দৃশ্যের মতো।
ঠিকঠাক পত্রারাণ্যে নেমেছে আনন্দআলো। কার্জন পার্ক গাইছে
নিমগ্নতায় ডুবে থাকা
ইস্টিমারের অন্তরিপা গীত।
ছেড়া
ছেড়া মেঘপুঞ্জ
১।
প্রাচীনা
রূপবতী বন্দরে ভিড়েছিল সাইরেন পেরিয়ে আসা আলবার্টাস,
ঘুম চোখে
মানচিত্র দেখতে দেখতে জেনেছিল, কাঁটা তারহীন
ভূগোলকের কথা। একদিন প্রত্যাশার দেয়ালে ফুটবে জোস্নার ফুল, তাইতো তামাটে ডানায় জমে থাকা ওম, ভুলে গ্যাছে ফেরার ঠিকানা।
২।
দক্ষিণ
পাঁজরে জমে থাকা একশ’টি প্রপাত, বিস্ময়বোধক চিহ্ন ঢেকে দিতে
কিছু সোনালি
মাছ বদলে ছিল গতি। তবু সে প্রপাত এখনো বহমান
৩।
যুদ্ধাহত
জাহাজ সব বিষাদ কুড়িয়ে এনে দাঁড়াত উঠোন ঘাটে, এক মৃত্যুজাত ট্রাক
দিব্য ফেলে
যেত খবরের কাগজ। মৃতের নামের জায়গায় লিখত ফুলের নাম,
আমরা সেসব
ফুলের নাম জেনে নতুন অবলম্বন খুঁজতাম পারা ঝরা আয়নায়...
৪।
সূর্যের নষ্ট
আলোয় ভোর গুলো রোজ রোজ পুড়ে যায়, স্ট্রবেরির শরীর থেকে খসে পড়ে
শিশুদের রক্তের
হিমোগ্লোবিন, তবু লেন্সের পর লেন্স লাগিয়ে ঘাতক খুঁজে পাই না।
৫।
ভোর হতেই
ক্ষয়ে যাওয়া জীবনের নামগুলো কুয়াশার মত
ঝরে কফি কাপের বারান্দায়
এত অন্ধকার
এত বিভেদের দেয়াল তবু স্বপ্নের সোনালি মেঘ নামে আকাঙ্ক্ষার দরজায়
সমুদ্র এবং শহরিকা—১
এ শহর কবিতাহীন ইস্পাত
আর কাঁচের। হিম আর বরফের। ভীষণ একলা
টেমসের ঢেউয়ে ঢেউয়ে
হারায়ে কুল। বার্চপাইন উইলোদের সংসার। এবেলা
কেড়ে নিয়েছে ঘুমবার
টেন্ডারের। অস্তরাগের কোলাহল ডুবতেই ঝাঁকসী গাল
ভুলে গিয়ে তুষার-ওম, দীঘল গ্রহপথ পাড়ি দিতে দিতে পৌছে যায় ক্রান্তিকাল
তবু কবিতার উপাদান
নাগরিক হাওয়ায় ওড়ে অনিঃশেষ। সে যে বালিকার শর্ট
স্কাটের ন্যায়
ছান্দসিক, পালক বিহীন ইষ্টিমারের খুলে দেয়া বোতাম। লুটপাট
সমুদ্র এবং
শহরিকা—২
উড়ছে মেঘধূলি, মুঠো মুঠো;
লেপ্টে যাচ্ছে শরীর। অনিরুদ্ধ মেঘের ঠাস
ছায়া
মেখে নেমেছে সমুদ্রবতী। ডানায় ছড়িয়ে বালি, রোদ্দুর ছোঁবে
বলে তুমুল মায়া
ফেলে বৃক্ষ বিভাস থেকে
উড়ছে ধোয়া। রুপোলি বন্যায় আরো কিছু ধুলিজাল
সাইরেনে যাচ্ছে বেজে। সমুদ্র-ফেনায়
নিশিকালের সঙ্গমে পড়ে থাকা অনাদিকাল
শঙ্খের গহবরে আদিম
চুম্বন খুঁজতে। অজাত অশ্রুপাত। অঙ্গার ও আগুনের
আত্মিক ঘ্রাণ ভুলে জলজ
ভ্রমণে তুলে নিয়ে যাচ্ছে গৃহ্যসূত্র নিষ্প্রভ ঢেউয়ের
সমুদ্র এবং শহরিকা—৩
নিসর্গের ডানা বেয়ে
কুয়াশা নামলে, লিরিল বালিকা ড্যাফোডিল পেরুতে পেরুতে
ফেলে যায় তারা গুচ্ছ। বিনির্মিত পথ রেখে
শিলাখণ্ডের জমানো খনিজ পেয়ালাতে
পান করে সবুজ আপেলের
জন্মান্তরবাদ। দূরে। বহুদূরে ঘাসের সমুদ্রে বেড়ে ওঠা
বাকলহীন বৃক্ষ ঠিক যেন
প্রতীক্ষিত যুবক। খুলে যায় গিট। জটিল সমাধানের রিমোট
শহরের অন্তর্জালিক
চিঠির বলাকা ফেলে গেলে দীর্ঘশ্বাস, দাঁড়িয়ে ল্যাম্পপোস্ট
ঠিক এক শতাব্দীর পর
সমুদ্রের কংক্রিট ঢেউ উড়বে অরন্যার ঝুলবারান্দায়
সমুদ্র এবং শহরিকা—৪
ক্ল্যাকটন
সৈকতের গ্রীবা থেকে মুছে যায় ধুলো পাহাড় বালির প্রাসাদ; বেলাশেষে। আলোছায়া
নেমে
যায় উজ্জ্বল নীলগহনে। বৃষ্টিহ্রদ পেরিয়ে যেতে, থোকা থোকা
ঝুমকো আলোর ফুল
অন্ধকার
গ্রহণকালে মুছে ফ্যালে তীব্রদহন। ব্যাথিত প্রতিধ্বনি খুঁজতে আজো
কলরবের দূ'কুল
অপেক্ষায়, স্থিরজল রাশির
কাছে। হ্যারিস পাখির বাদামী চোখেই বিষাদ কলতান; মোহ—মায়া
এক
শুক্লপক্ষের কাছে গুহ্য চিত্রলিপি জমা রেখে অন্যদিগন্তে লেখাতে চায় নাম। এরপর
রাত্রি
দেবীর সব বাতি ঝলসে উঠলে মায়া ভুলে যায় সব ফিনিক্সরা। নিস্তব্ধতা অতঃপর
সমুদ্র এবং শহরিকা—৫
আরও একটি অগ্নি তুষার অপেক্ষার
কাল। এ শহর ভিজবে বলে আড়িপাতা গুহাতেই
বুনেছিল প্রার্থনারনক শিকরা শিশির। রিজেন্টলেকের শীতল জল
গুচ্ছ প্রত্যাশারই
শেকল বেয়ে উড়ো হাওয়ায় ছড়িয়েছে
ডানা। সমুদ্র-পথ জেগে ওঠে। বিরাম চিহ্ন এঁকে
স্টারলিংক উষ্ণ-গিরি-পর্বত পেরিয়ে দাঁড়িয়েছেন গরকা র্নিভালে। ধুলোস্নাত এ শহর
ভিজবে বলে ডুবসাঁতার নেমেছে পথে। পাললিক তটে রকবাঁধা
সমুদ্র কল্লোল
সন্তর্পণে সয়ে যাচ্ছে অগ্নিরথের
বিরহ বেহালা; কান পেতে শুনছে জলমহল
সমুদ্র এবং শহরিকা —৬
জাগ্রত
রক যেন শৈবালিক পাহাড়,
অনাবৃত জল সমগ্র আহ্লাদে আচ্ছাদিত
শঙ্খ-গহ্বরে কান
পাতলেই সমুদ্র গর্জন উঠে আসে; স্বাপ্নিক নিরবধিত
ঢেউয়ের
প্রপাত তাড়িয়ে দিয়ে যায়,
নুড়ি পাথরের মৃত আকাঙ্ক্ষা গুলো
আর কিছু
ক্লান্ত আকাশ একে একে পেরিয়ে যায় ফেরার গুঞ্জন শুনে। আলো—
আন্ধকারে
এ নগর গুছিয়ে নেয় গণিতের পৃষ্ঠা শিল্প। আর আমরাও বিদায়ী পাঠ
লিখতে
লিখতে মায়ার লবণাক্ত ক্লেদ লুকিয়ে রাখি দ্বিপ্রহর। ফেলে যাই হারভেস্টার মাঠ।
No comments:
Post a Comment