27 December 2017

এক পৃষ্ঠা কবিতা- অপরাহ্ণ সুসমিতো


ক্রিয়াপদ
বউটা বারান্দায় খালিপায়ে ধপ্-ধপ্ হাঁটছিল
সে সভাপতির কাছে আকুল ক্ষমা চাইছিল
লোকটা কাফনের কাপড় যাকাত দিচ্ছিল

শুকর ছানাটা বোকাবোকা চাইছিল
সম্পাদক কবিতার ভিড়ে হাঁপাচ্ছিল
কেরাণীটা ঈদের মৌসুমে বেশি করে ঘুষ নিচ্ছিল
গাজার শিশুটা বোমার শব্দে কাঁদছিল 

ওই লোকটা পান-বিড়ি খাইয়ে ভোট চাইছিল
মেয়েটা বাসে লাফাতে লাফাতে উঠছিল
মেয়েটা গান শেষ করেই টাকার জন্য হাত পাতছিল
আমার বন্ধু তার বউয়ের গলা টিপে ধরছিল

শীতের ভীড়ে চাদর সরিয়ে লোকটা হাত পোহাচ্ছিল
পুলিশ বন্ধু বাচ্চাটাকে বড় রাস্তা পার করছিল
বনের ছায়ায় রোদের খোঁজে কবি একা হাঁটছিল
উকিল লোকটা জজ সাহেবকে এতো এতো ঘুষ দিচ্ছিল
বাড়ির কাছে মেঘলা দুপুর গরম খাবার ভাঁপ দেয়াতে ভাসছিল
সখের পলাশ বউকে রেখে একা একা হাসছিল
জামার কাছে নীল বোতামটা রাত দুপুরে নাচছিল
বকুলসহ কবি এবার কোথায় যেন কাঁপছিল হাসছিল



নিত্য পুরাণ
ভাইবে অপরাহ্ণ বলে
কে যায় কোথায়
কে কে নাচায়
কে পুরে থাকে খাঁচায়?

কে আসে সেখানে
কে থাকে শিথানে
কে থাকে আশায়
কে আমাকে বাঁচায়!


চন্দ্রঘোনা
শুনে যাও অভিন্ন গোলাকার সেই কিশোরী চাঁদ বাণ
সে আমি সেই চাকমা মাঝি হুম হুম তরবারি কর্ণফুলী পান,
টানটান করে রাখে পাহাড়িয়া মৌমিতা,সংহিতা শোনো চন্দ্রিমা
রূপবান সিনেমা,কমলা ভঙ্গিমা ।

কে জানে কোথায় থাকে চিতমরম,ন্যাড়া মাথা প্রবারণা পূর্ণিমা ভিক্ষু
চিক্কুর পারে অহিংস নদী পথ
কোনো বিশেষণে থাকে না সে রথ,
ডাকাতের মতো বৃষ্টি নেমেছিল চন্দ্রঘোনা
যুবকের পকেটে ঘুমিয়ে ছিল গাঙ বোনা

কেউ কেউ ভাঙ্গনের পথে গান গায়
কেউ কেউ হারাতে হারাতে সব পায়
আমার শ্যামলা মা চোখ বড় করে কাজল পরায় বোনকে
কে জেনে ফুঁপিয়ে কেঁদে ফেলে কান্নার চুড়ি ফিতা ছলকে

সবাই ডাকছে বুনন তরাসে হেই রাঙ্গা শোন আয় আয়
চন্দ্রঘোনার তরুণ সবুজ সংঘে সে
কী যেন খুঁজে পায়।




শরীর
মধ্যযুগ থেকে নেমে এলো সে মধ্যবর্তিনী অস্ফুট ছেনি কামারে
কী করে পরাই তারে যুগের প্রমিত শরীর আর মেঘদূতী খামারে

নৌদস্যু বিহার করে নিশিদিন ভাস্কর্য তোমার প্রাচীন দেহতটে
শরীর ভ্রমর গুনগুন পাল উড়াক পালংকে কামজ প্রচ্ছদপটে।




বিবাহ নিয়ে রচনা
বিবাহের মন্ত্র উচ্চারণ করেই তুমি প্রভু হতে শুরু করো ,
তোমার আচকানের পকেটে আদেশনামা,নিকাহনামা ।

তুমি মনে করো আজ থেকে তোমার হাতেই সোনালী কাবিন,তুমি নিরঙ্কুশ
এই আশ্চর্য সংসার সংসদে কার্যবিবরণী লেখা হয় অদৃশ্যে 
প্রতি চরণে তোমার শ্রীচরণেষু ।

তোমার অলৌকিক মা আমাদের সংসারে আরেক জাঁহাপনা
আমার চুলের বিনুনী,শাড়ির রঙ ঠিক করেন তিনি আর আমাদের সন্তানের নাম রাখেনও তিনি, তার নামের সাথে গৌরব মিলিয়ে । 

আজব দেবর কথাচ্ছলে খোঁচা দেবে,একবার আমাদের নীলফামারীর বাড়িতে শোবার
কষ্ট হয়েছিল বলে । 
পছন্দ করি না,তারপরেও সারা ঘরে দেবরজী অলম্বুস খালি গায়ে হেঁটে বেড়ায় । 

কোনো মন খারাপের সন্ধ্যায় ছাদ থেকে চাঁদ দেখা গেলে ছাদে উঠে এলে
সোনালী কাবিন হাতে তুমি সন্দেহ শুরু করো,আমার অতীত টেনে খানখান করো
আমার মায়ের প্রথম বিয়ে নিয়ে শুরু হয় তোমার কত্থক নৃত্য । 

মধ্যরাতে আমাদের দুধ ভাত ছেলে কেঁদে ওঠে । আমি তাকে বুকে নিয়ে সংসার গরাদে একাকী 
হাঁটতে থাকি । মনে হয় যেন দূরগামী জাহাজের ডেকে আমি একাকী নাবিক ..

ওয়াল্ট হুইটম্যানের ও ক্যাপ্টেন মাই ক্যাপ্টেন ।
সমুদ্রে ভাসতে ভাসতে আমি বাবুটার নরোম বুকে মুখ ঘষতে ঘষতে প্রলাপ বকি :
আমাকে সংসারের গল্প শোনাও,বাবা ।




No comments:

Post a Comment