17 December 2017

গুচ্ছ কবিতা- সুপ্তা সাবিত্রী




তৃষ্ণা
ঢাকা,বাইপাস,আড়াইহাজার.....
ঘামুক দুপুর আর দুই ঢোক জলের তেষ্টা টলটলা দীঘির হ্যালুসিনেশন আনে।কে জানতো অমন কালো জলে বিকেল এসে নামবে, জোছনা দেখার কথা বলে বীণা দি'র ভোরের মতো মুখ খানা স্থির হবে অদ্বৈত বাসনায়- আমাদের পড়শি বিকেল,রান্নাবাটি খেলা দূর আকাশের তারা গুনতে গুনতে ডুবে যাবে আকণ্ঠ ক্রোধে; দুই ঢোক জলের তেষ্টা বীণা দি'কে সমুদ্রে টান দেয়,স্তনের ভেতর ঘামের জমাট গন্ধে ডুবে যেতে যেতে মনে হয়, আমিও বীণা দি'...
দীঘির জল সাঁতরে পার হচ্ছি সমুদ্দুর!


ভ্যাসলিন - শীতের ঠোঁটকাল
জেনে যাও স্মিত হাসি
পরিশীলিত শীতে
ঠোঁট ফেটে যাবে নচেৎ -

আবরণী কৌটোর ঘ্রাণ ডিঙিয়ে
বিবর্ণ আকাশের ছুটি নেই আজ।

রঙ ফোটার বাজি নেই
মিথ্যে গল্প নেই-
শুধু আছে উড়ে যাওয়া,
কুয়াশার বুকে হাঁটা
শীতল গোড়ালি এঁকে
প্রেমের পত্র কয়েক।

অঘ্রাণী বুক থেকে ধানী গন্ধ আসে,
নিবিড় রাতের চাদরে জড়াজড়ি
একছত্র বিষাদপাণি।




ইঁদুরের ঘর
আমার ইঁদুরের ঘর,
তোমার শহর জুড়ে খরা
ক যদি খ কে খেয়ে ফেলে তবে
গ এর খাতায় শূন্য মিলায় কে?

আমার ইঁদুরের ঘর
তোমার শহর জুড়ে খরা
মধ্যবয়সী পৃথিবীর মতো কামুক বিকেল
যদি পরদিনের সকালকে ধর্ষণ করে তবে,
গর্ভপাত কেন দুপুরের হয়?
এমন রোদক্ষরা দুপুর আগে কেউ দেখে নি।

আমার ইঁদুরের ঘরে আগুন দিয়েছে
তোমার শহরের পিচগলা রাস্তা
ছাইয়ের উড়ান  আতর গন্ধ আনে






রাজপথ
গাছ,আমাদের বিদগ্ধ গল্পের দিন ফুরিয়েছে-
সে কথা বলি নি।
তুমিও শোন নি বহুকাল-

গত সন্ধ্যায় বিশুদ্ধ বেদনা কাকে বলে জেনেছি।
সকালের আলোয় বিগত রাতের স্মৃতিলোপ পেলে,
জেনেছি সুতপার মুখের 'পরে জমে থাকা মেঘ
বেলুন হয়ে আজকাল উড়তে শিখেছে।

গাছ,এমনি বহুকাল রাজপথের সঙ্গী
হতে হতে তুমিও একদিন জেনে যাবে,
হয়তো বিশুদ্ধ বেদনার নাম
কেবল কুঠারের ঘায়ে নয়।

শতাব্দীর পর শতাব্দী চলে যাবে,
স্থিত সন্ধির বুকে এঁকে দিয়ে রক্তিম কাল-
মোহনায় মিলিত ইলিশের স্বাদ
জিভে জ্বলজ্বল;

তারপর- একদিন স্বাদগ্রন্থি
বিবশ ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়বে,
তুমি বারবার ডেকে গেলেও
শুনতে পাবে না কেউ।

গাছ,তুমি আমার গল্প জানো নি
আমিও জানতে চাই নি,
তবুও, এ রাজপথে গল্পের শিরোনাম হয়ে রইলে-
মায়া আর কাকে বলে!




জীবনানন্দের ভোর ভেঙে যাচ্ছে
রাতের সকল বিষণ্ণতা জমিয়ে রেখেছি ভোরের কাকের জন্য। ডানাওয়ালা, নখরায়ুধ কাক; জীবনানন্দ, যাকে জীবনের চিহ্ন ধরে নিয়ে শেষ ট্রামে বাড়ি ফিরে গেলেন-
পেছনের রাস্তা, লাবনীর গাল ভেঙে আসা অভাবের মুখরা দিন সব-টা ফিরে যাচ্ছে স্তবকে স্তবকে।

কণাদ,আমার সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে নাও।
কতো রাত ঘুমুতে পারি না,কতো রোদক্ষরা দুপুর এঁটে আছে মাথার ভেতর... জীবনানন্দের যাপিত সকাল আয়নার মতো ভেঙে পড়ছে ঝুরঝুর করে;অথচ এইসব
ভোরের আলোয় স্নানার্থী হতে আরো কতো দুপুর হেঁটে চলতে হবে...বিরামহীন।
সৌরমাস সমাগত প্রিয়!




                           পাপ একটি অযৌন শব্দ
পারদের চোখ থেকে ঘুম খসে পড়লে হস্ত ও মৈথুন আলাদা শব্দ মনে হয়।
প্রার্থনায় বসে পড়ো ফাদার,
যিশু পাপ দেবে!
"পাপ,অযৌন শব্দ মনে রেখো পুত্র- 
যেখানে শীৎকার একটি পূর্ণ বাক্যের স্থিতিকাল।"




পুরুষ
-আমার আকাশ নিঃশ্ছিদ্র রেখে
প্রেরিত যোনীতে ছায়া দিচ্ছো
তুমি "কে"?

-আমি?
আমি তোমার "পুরুষ"!