08 October 2016

শ্যামলী চ্যাটার্জী





ফেসবুক খুলে আপডেট নিতে নিতে সায়ন্তিকার হঠাৎ একটি ছবি চোখে পড়ল.... “বাঃ বেশ তো, ওমা নিচে আবার লেখা, “ওয়ালে কিছু লেখার জন্য আমন্ত্রণ রইল... দি লিখে দু-চার লাইন..”
ব্যস পরিচিতির ঐ শুরুয়াত। তারপর এ-ওর লেখার উত্তর প্রতি উত্তর দিতে দিতে ফেসবুকেই ঘনিষ্ঠতা। লেখার তাগিদের চেয়ে লেখার প্রতি ভালোবাসা যেন পরস্পরকে বেশি ভাবায়। কর্মসূত্রে এরা একে অপরের থেকে বিস্তর দূরত্বে, অবশ্যই মনের দিক থেকে নয়। সায়ন্তিকা কেমন যেন একটু সোহাগী, ন্যাকামি করতে ভালোবাসে। মনন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা সেটা। তাই মেঘ ও রৌদ্রের খেলা চলতেই থাকে দুটি অন্তরে প্রায়শই। ভুল গুলি নিজ হাতে শুধরে দেয় মনন, দূরে থেকেও...তাই এত ভরসা। দিন-মাস কেটে যায় কণ্ঠস্বরের প্রেমে আর মন ভরে না । ফলে সাক্ষাতের তাগিদ তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায় দুজনকেই। 


হঠাৎ একদিন দূরভাষে মননের আশ্বাস...আসছি তো অক্টোবরে।” একমুঠো সুগন্ধি বাতাস যেন ভরিয়ে দেয় সায়ন্তিকার মনপ্রাণ। আর মাত্র কটা দিন তাও যেন কাটতেই চায় না। ইস্ প্রথম দেখা, কি পরবে সে, ওয়েস্টার্ন নাকি পিওরলি ভারতীয় নারী সেজে ধরা দেবে সে তার প্রেমাস্পদের চোখে। কিছুই তো বুঝে উঠতে পারেনা, একবার কি জেনে নেবে কিভাবে মনন তাকে দেখতে চায়। নাহ্ থাকুক সারপ্রাইজ। ঠিক করে শাড়ি পরেই যাবে, সাদা রঙ তার প্রিয়। অনেক ভেবে জামদানীটাই বের করে। উফ্ এত ভালোলাগা আগে কখনোই অনুভূত হয়নি তো তার। মন যেন আজ উন্মত্ত রাধা। ক্লাস নিতে গিয়ে বেশ কয়েকবার উন্মনা হয়ে পড়ছে সে। মন জুড়ে যেন বন ময়ূর চায় হারাতে কোন সুদূর। 

তুলনায় মনন যেন বেশ খানিকটা সমাহিত। কে জানে অনুভূতি প্রকাশে সংকোচ বোধ করছে হয়ত। তবু কোথায় যেন একটা সম্পর্কের গভীরতা উপলব্ধ হয় অগোচরে। অবশেষে সেই দিন প্রায় উপস্থিত। কালই ছুটি নিয়েছে সে স্কুলে। খুব ভোরে ট্রেন ধরে বেরিয়ে পড়বে সে। অনন্ত অপেক্ষার রাত যেন আর কাটতেই চায় না।
প্রাণভরে সাজে আজ। মনন যে ভীষণভাবে লক্ষ্য করে এসব। বার বার সাবধান বাক্য তার “লাবণ্যকে ধরে রেখো কিন্তু” মাইগ্রেনের ব্যাথাটা খুব ভোগায় তবুও আজ একটু মিষ্টি পারফিউম ছড়িয়ে নেয় সারা শরীরে। হালকা করে কাজল দেয়, দিঘল চোখ দুটিকে আরো বেশি আবেদনময় করে তোলে।  মেরুন ব্লাউজের সাথে মানিয়ে ঠোঁট দুটিকে হালকা লিপস্টিকে রাঙায়। 

উদাসী ভাবে ট্রেনের বাইরে চোখ রেখে কি ভাবছে সে আসলে মনের উত্তেজনা টুকু কোন রকমে চেপে রেখেছে সে, কেউ যেন না জানতে পারে। এ যেন তার একান্ত ব্যক্তিগত। এয়ারপোর্টে এসে অধীর নয়নে বার বার ঘড়ি দেখে সে। দুর কেন যে এত দেরি করছে ফ্লাইটটা। দূরে মানুষের ঢল, সবাই সবার প্রিয়জনদের খুঁজে নিতে ব্যস্ত। ওই তো... হ্যাঁ হ্যাঁ... ও--ই। এতদিন দেখা ফেসবুকের মুখটার সাথে মিলিয়ে নিতে চেষ্টা করে। হুম্ মিলে যাচ্ছে অবিকল । এত্তোটুকুও ভুল হয়নি তার। ওই দ্যাখো সে ও তাকিয়ে তার দিকে ঔৎসুক দৃষ্টি নিয়ে। কি দেখছে সে অত! বারেকের জন্যে লজ্জায় সংকুচিত হয়ে যায় সে। 

ওরা তন্ময় হয়ে পরস্পরের চোখে চোখ রাখে আচ্ছন্নের মত। দুজনেই যেন জীবন্ত মূর্তি। ওপরে নীলাকাশ দিগন্ত বিস্তৃত। এক টুকরো নীলিমা যেন নেশায় বিভোর করে রাখে উভয়কেই । মননের মানসচক্ষে ভেসে রয় একরাশ মুগ্ধতা....এই কি তার মানস সুন্দরী নাকি ভোরের সদ্য ফোটা জুঁই ফুলটি! আতিশয্য প্রকাশের ভাষারা পথ হারায়।                        



No comments:

Post a Comment