=১=
সংগ্রাম
প্রতিনিয়তই মানব মন, নিজ সত্তা, নিজ অহং,
নিজ বিবেকের সহিত করিয়া থাকে। মৌখিক ভাবে সে স্বাধীন বলিয়া বড়াই
করিলেও মূলত সে তাহার নিয়তির নিকট পরাধীন সেই প্রথম লগ্ন হইতেই। তাহার স্বাধীন
চলনের অধিকার নাই, স্বাধীন কথনের জো নাই, স্বাধীন মনোবিকাশের অবকাশ নাই। কেবলই ঝুটা সামাজিকতা আর লোকাচার
আগলাইয়া সে জন্ম জন্মান্তর কাটাইয়া দিতে সক্ষম । ইহাকে সুখের আতিশয্যেই বল আর
আপোষই বল। জেহাদ ঘোষণা করিয়া নিজের অধিকারটুকু অর্জন কিম্বা এক্তিয়ার টুকু বুঝিয়া
লইতে সে পরাঙ্মুখ। ফলে সারাটা জীবন জ্বালাময়, কি সুখ কি
দুঃখ বুঝিতেও পারেনা, বলিতেও অপারগ রহে।
=২=
শরতের নির্মল আকাশ, প্রকৃতির স্বচ্ছতা জানান দিচ্ছে আদরের কন্যা উমার আসার সময় হয়েছে। ঘরে
বাইরে সাজো-সাজো রব, যার প্রভাব কুসুমপুর গ্রামটিতেও
পড়েছে। নদীর পাশেই গ্রাম, গ্রামের প্রান্তেই আদ্যাশক্তির
মন্দির। প্রতিবছরই মৃন্ময়ীর অর্চনা হয় ষোড়শ উপাচারে। জমিদার প্রথা উৎখাত
হলেও তাদের পর প্রজন্মই পূজার তত্ত্বাবধায়ক। মহাঅষ্টমীর প্রাক লগ্নে গর্ভগৃহ
একপ্রকার ব্যস্ত। অর্ঘ্য থালি হাতে এক দরিদ্রা রমণী সসংকোচে দূরে অপেক্ষমানা। যদি
কেউ তার ভোগ দেবীর চরণে নিবেদন করে দেন। সমস্ত ব্যস্ততাকে জলাঞ্জলি দিয়ে, মন্দিরের পরিবেশকে ততোধিক কলুসিত করে বড়কর্তার হুঙ্কার.... “ওরে পাপিষ্ঠা কোন সাহস বলে নীচ জাতি হয়ে মন্দিরে প্রবেশের অনাচার করার
সাহস পাও?”
শত নরনারীর আনন্দ
কোলাহল নিমেষে স্তব্ধ হয়। সন্ত্রস্তা রমণী এবার সাহস করে বলে বসে... “কিন্তু বাবাঠাকুর অই দুগ্গাপিতিমে যে আমার শ্বশুর সোয়ামি মিলে দিন রাইত
এক করি গড়লে...তখন তো মায়ের জাইত গেলো নি!” উপস্থিত সকলের
কেউ ভাবলে- “এ সাহস নাকি স্পর্ধা!” শিক্ষিত ছোটকত্তা প্রতিবাদ করতে গেলে জুটল তিরস্কার ও বহিষ্কার।
পরের বছর তিনি
সাড়ম্বরে মন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন যার প্রবেশ পথটি সবার জন্য অবারিত। আনন্দাশ্রু
মোচন করে ছোটকত্তা ভাবলেন...“দেখ দেখি জগন্মাতার সন্তানদের তুচ্ছ
করে সাধ্যি কার!”
বড় তরফের দেবায়তন
আজ আনন্দ উচ্ছলতা রিক্ত, বিষণ্ণতায় পর্যবসিত।
No comments:
Post a Comment