05 July 2016

আরিফুন নেছা সুখী



আলিঙ্গনের পূর্ব ভাবনা
সকাল থেকে বারবার নিজেকে দেখছে মেয়েটি। আহা মরি সুন্দরী না হলেও দেখতে একেবারে খারাপ না। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে দেখে, তারপর পরিপাটি করে সাজিয়ে তোলে নিজেকে। নিরাভরণা শরীরটা মুর্হুতেই হয়ে উঠে পরিপাটি । নিজের পছন্দের, খুব পছন্দের বললেও ভুল হবে না এতটুকু। সেই খুব পছন্দের পোশাকটি পরেছে আজ। কেননা ঘন্টা খানিক বাদেই তাকে দেখতে আসবে হাজার লোক...।
আজ মেয়েটি আত্মহত্যা করবে। আত্মহত্যার ফুটনোটে লিখেছে ‘আমাকে দয়া করে গোসল করাবেন না। আমি আত্মহত্যা করার পূর্বে খুব ভালমতো গোসল করেছি।’ এরপর মেয়েটা তার মায়ের মৃত্যুর পর যে শাড়িটা সব সময় তার সাথে রাখতো সেটা বের করে। দশ বছরের পুরনো শাড়িটা মজবুত আছে কিনা টেনেটেনে দেখে। তারপর ভাঁজ খুলে নাকের সাথে চেপে ধরে, হঠা করে বিস্মিত হয় সে। পুরনো অব্যবহৃত শাড়িতে সে তার মায়ের শরীরের ঘ্রাণ পায়। মনে হয় শাড়িটা যেন মায়ের পরণে। শাড়িটা নাকে চেপে ধরে রাখে দীর্ঘক্ষণ; তারপর বলে আমি আসছি মা। তোমার কাছে আসছি।
শাড়িটা খাটের উপর রেখে চেয়ারটা টানতেই ধাক্কা খেয়ে টেবিলের উপর থেকে পড়ে একটা খাম। খামটা হাতে নিয়ে খুলে দেখে দুই ফাইল ঘুমের ট্যাবলেট। প্রথমে ভেবেছিল টপাটপ ট্যাবলেটগুলো গিলে নেবে তারপর বিছানা, ঘুম এবং শেষ ঘুম। তারপর আবার ভাবে না! আত্মহত্যার মতো একটা বিষয় এতটা সাধারণ হবে ভাবা যায় না! তাই উদ্বন্ধনটাকেই বেশ রোমাঞ্চকর বলে মনে করে সে। ট্যাবলেটগুলো আগের জায়গায় রেখে চেয়ারটা ঠিক দরজা সোজা নিয়ে আসে। দরজাটা ভিড়িয়ে চেয়ার দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে দেয়।
কয়েকবার নাম ধরে ডাকার পর সাড়া না পেয়ে যেন দরজা ভাঙা না লাগে। দরজাতে ধাক্কা দিলেই যেন পায়ের নিচ থেকে চেয়ারটা সরে যায়। আর তখনি আত্মহত্যাটা সম্পন্ন হয়। কে কি বলে এটা শোনার বড় ইচ্ছা তার।
মায়ের শাড়িটার একপ্রান্ত সিলিং ফ্যানে ঝুলিয়ে দিয়ে ফাঁস লাগার গিট তৈরি করে। তারপর চেয়ারের উপর উঠে দাঁড়ায়। সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবে, এইতো আর কিছুক্ষণ তারপর আমি আর এই পৃথিবীর কেউ না। চলে যাবো না ফেরার দেশে, আমার বাবা মার কাছে। আমি চলে যাওয়ার পর কেউ কি দু ফোঁটা চোখের জল ফেলবে আমার জন্য? নাকি হাঁফ ছেড়ে বাঁচবে সবাই। বারবার এই কথাগুলো তার মাথার ভেতর ঘুরপাক খায়।
কেউ কি ভাববে, কেন এই মেয়েটা এই বয়সে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলো। নাকি বিয়ে শাদী কিছুই হলো না, আত্মহত্যা করলো। বেহেশতের পথটাও বন্ধ করে দিল নিজের হাতে। এই নিয়েই তর্জমা হবে বেশি।
মেয়েটি ভাবে, তার ভাই বোন কি তার স্মৃতি মনে করে কাঁদবে? খুঁজে বের করবে কেন তাদের বোনটা এমন সিদ্ধান্ত নিল? বড়ভাই কি মনে করবে এই ছোট্ট বোনটিকে কতদিন কাঁধে করে নিয়ে বেড়িয়েছে। ভাবীরা কি মনে মনে আগরবতি মানোত করবে মসজিদে দেয়ার জন্য। একজন কি আরেকজন কে বলবে
-একটু বেশি বাড়াবাড়ি করতো বলেন আপা। যাক, এটা মানতে হবে, বিয়ের পর যদি এমন আনাড়িপনা করতো তাহলে কি বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হতো। আর একটা বাচ্চা থাকলে তো কথায় নেই।
এসব কথপোকথনের মধ্যে হুজুর তাগাদা দেয় কাফন পরাতে হবে; মূর্দাকে গোসলের ব্যবস্থা করানো হোক। কেউ একজন বললো মূর্দার শেষ ইচ্ছা তাকে যেন গোসল করানো না হয়। সে মৃত্যুর পূর্বে গোসল করেছে।
-আসতাগফিরুল্লাহ কী কলিকাল আইলো, মূর্দার গোসল কি জিন্দাকালে হয়? তানারে বরই পাতা গরম পানি দিয়া গোসলের ব্যবস্থা করান। তানাইলে আমি জানাজা পড়াইতে পারুম না।
এই কথাটা ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে যায় তার। কেউ হয়তো পাত্তাই দেবেনা বিষয়টা। চিরাচরিত নিয়মেই গোসল করানো হবে তাকে। তারপর গোসল করানো মহিলারা ইনিয়ে বিনিয়ে তর্জমা করবে তার শরীরটার।
সম্পূর্ণ একা ঘরটাই কত কি যে মনের ভেতর খেলা করে তার ইয়ত্তা নেই। ঘরের বাইরে গাড়িগুলো ছুটে চলেছে আপন মনে। ভ্যাঁ ভ্যাঁ পোঁ পোঁ শব্দ অন্য দিন অসহ্য লাগলেও আজ বেশ ভালো লাগে তার। ভাবে কবরে শুয়ে কি এসব শব্দ শোনা যাবে? মুহুর্তেই মনে পড়ে কাজী নজরুল ইসলামের সেই কবিতাটা “ মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই ...।
হঠা ভাবনা অন্যদিকে মোড় নেয়। শুনেছি মৃত্যু নাকি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হওয়া, আচ্ছা আমার ঘুমটা যদি ভেঙে যাই! তখন যদি আমি কবর থেকে ডাকি, কেউ কি শুনতে পাবে? আর না পেলে আমি একা একা কবর খুঁড়ে বের হয়ে এলে আমায় কি ঘরে তুলবে? নাকি রবীন্দ্রনাথের ‘জীবিত ও মৃত’ গল্পের কাদম্বিনীর মতো ‘মরিয়া প্রমাণ করিতে হইবে আমি মরিনাই।’
হঠা তার চোখ দেয়ালে টানানো ঘড়িটার দিকে যায়; ঘন্টার কাঁটাটা পাঁচকে ছুঁই ছুঁই করছে, আর বেশি সময় নেয়া যাবেনা, খানিক পরেই ভাইয়া ভাবী বাসায় ফিরবে, তার আগেই কাজটা সারতে হবে। এমন সময় মনে পড়লো ভাইয়ের মেয়েটা স্কুল থেকে ফিরেই তার রুমে আসবে। আর বুয়া সে ও তো আসবে ওরা আসার পরপরই, সে এসে যখন দেখবে আমি আর নেই, সে কি আকুলি বিকুলি করে কাঁদবে আমার জন্য। না বাড়িওয়ালার মা মারা যাওয়াতে তার কান্না দেখে সবাই ভেবেছিলো সে বুঝি তাদের আত্মীয় কেউ। আবার তার কাজ নেয়ার বয়স মাস খানিকের মতো তাতেই এতো দরদ, অবশ্য পরে বুড়ির পিন্ডি চটকাতে এতোটুকু কার্পণ্য করেনি। আমার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটবেনা। চোখ দিয়ে পানি গড়ালেও মনেমনে বলবে
-বেটি আমার লগে খালি খালি রাগ দেখাতো। আর হে নিজে দুধ চা খাইয়া আমার লাইগা তলানির মধ্যে পানি দিয়া রাখতো। বেটি খুব চালাক, চিনি নিজে উডায় দিতো, পানসি ভুড্ডা...। তারপর আবার বিলাপ ও আফাগো কয় গেলেন গো...।
মেয়েটার খুব আফসোস হয় আহারে, এই দৃশ্যগুলো যদি নিজের চোখে দেখা যেত। এমনি হাজার ভাবনার ইন্দ্রজালিক জালে জড়িয়ে পড়ে সে। জাল ছিঁড়ে আর বের হতে পারেনা। সারা জীবনের হাজার স্মৃতি মাথার ভেতর জট পাকায়, বেরিয়ে আসার জন্য একে অপরকে ধাক্কা দেয়। মনে পড়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য মাকে কেমন নাজেহাল করেছিলো সে। এটুক মনে হতে না হতেই মনে পড়ে ক্লাস ফোরে পড়ার সময়ের প্রেমপত্র পাওয়ার কথা। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। এমন বেশ কয়েকটা প্রেমপত্র পেয়েছিলো ক্লাস টেন পর্যন্ত। তারপর তো মহিলা কলেজ । মোবাইলের যুগ। মোবাইলেও কয়েকজন দিয়েছিলো প্রেম প্রস্তাব, কিন্তু গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়নি কাউকে। তবে সে নিজেও যে কাউকে পছন্দ করতো না তা কিন্তু নয়। নিজের পছন্দ নিজের মনে নিয়েই স্বপ্নলোকে ভেসে বেড়াতো। হারিয়ে যেত স্বপ্নের মোহে দূরদেশে, অচেনা কোন দ্বীপে। মিলনসুখে শিহরিত হতো মন। এভাবেই ভালোবাসার কিঞ্চিত ছোঁয়া পেয়েছিলো বাইশটি বসন্তে। তারপর হঠা করেই আত্মহত্যার প্রেমে পড়ে যায় সে। অনেকবার চেষ্টা করেও নিজের হাতে দিতে পারেনি প্রিয় জীবনটাকে।
কিন্তু আজ সে কাজটা করবেই, মানসিকভাবে প্রস্তুত। আর পেছন ফিরে তাকানোর উপায় নেই। বেঁচে থাকার সমস্ত বাসনা তার উবে গেছে। আজ তাকে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতেই হবে। যে পৃথিবীতে তার কেউ নেই সে পৃথিবীতে কেন বেঁচে থাকবে সে?
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে কাপড়ের গিটটা সে মাথা গলিয়ে গলায় পরে ফেলেছে বুঝতেও পারেনি। এবার সে গিটটা থেকে মাথা বের করার চেষ্টা করে, কিন্তু সমস্ত নিয়ন্ত্রণ এখন কাপড়ের গিটটার হাতে। ভয়ে, আতঙ্কে, আড়ষ্ঠ হয়ে কাঁপে তার হাত দুখানি। হঠা বাঁচার ইচ্ছায় মরিয়া হয়ে ওঠে সে। কিন্তু গিট তাকে ছাড়তে নারাজ। চারিদিকে যমদূতের আনাগোনা স্পষ্ট। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, চেষ্টা করে একটা শব্দও বের করতে পারেনা। অথচ জোরে কথা বলার জন্য মার কাছে বকা খেয়েছে প্রায়শঃ আজ একটা শব্দও বের হয়না গলা দিয়ে...।
ফর্সা মুখটা টুকটুকে লাল হয়ে উঠে। চোখের কর্ণিয়া দুটো বের হয়ে আসতে চাই চোখ থেকে। হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে এক সময় ঠান্ডা বরফ হয়ে যায়। মৃত্যু তাকে আলিঙ্গন করার চেষ্টায় রত। মেয়েটা নিজেকে বাঁচাতে মরিয়া। দুজনের এই যুদ্ধক্ষণে দরজায় খুট করে আকস্মিক ধাক্কা...।
পায়ের নিচ থেকে সরে যায় চেয়ার। মেয়েটা হাত পা ছুঁড়ে ঝুলতে থাকে সিলিং ফ্যানে। ভাইয়ের ছোট্ট মেয়েটা দরজা খুলেই পেছন ফিরে দৌড় দেয় আব্বু...।
এদিকে সিলিং ফ্যানে ঝুলন্ত মেয়েটার প্রায় পুরো শরীর ঢেকে আছে একরাশ কালো চুলে। হাত পা ছোঁড়া বন্ধ হয়ে গেছে। সবাই যখন ঘরে ঢোকে, তখন সে ওপারের বাসিন্দা। ঘরের মধ্যে সুগন্ধীর গন্ধ মৌ মৌ করছে। ভেজা চুলে শ্যাম্পুর গন্ধ। শরীরে শ্বেত শুভ্র পোশাক, সফেদ মুখ...।

লোকারণ্য উঠানের ঠিক মাঝখানে চি হয়ে শুয়ে আছে এক তরুণী। এই গরমেও তার শরীর আবৃত একটি ঘিয়ে রঙয়ের চাদরে। মাথার কাছে জ্বলছে সুগন্ধি আগরবাতি। পাশে মহিলারা কোরআন তেলাওয়াতে ব্যস্ত। ওদিকে জ্বলন্ত উনুনে ফুটছে গরম পানি আর বরই পাতা...









সিআইডি শিং সাহেব ও বজলু গোয়েন্দা

সকাল সকাল বাড়িতে সে এক হুলুস্থুল কাণ্ড। মা ঘুম থেকে উঠে বাবাকে বললেন, ‘তাড়াতাড়ি ওঠো, দেখো কী হয়েছে!’ বাবা তড়িঘড়ি উঠে বললেন, ‘কী হয়েছে? কী হয়েছে?’
মা-বাবার কথার ঝড়ে আমি মামাকে ডাকি, মামা ডাকে আমাকে। শেষমেশ দু’জনেই উঠে মা-বাবার ঘরে গিয়ে দেখি, বাবা খাটের ওপর দাঁড়িয়ে, মা চেয়ারে জড়সড় হয়ে বসা।
কী হয়েছে, জানতে চাইলে মা মেঝেয় পড়ে থাকা কী যেন একটা দেখালেন। ভালো করে দেখতেই বুঝি, একটা শিং মাছ এবং মাছটা জ্যান্ত।
মামা বললেন, ‘সামান্য এই মস্য দেখিয়া ভীত হইয়া সকাল সকাল বাড়ি মাথায় তুলেছ, আপা।’ মা বললেন, ‘একদম ফাজলামো করবি না, বজলু। সামান্য মস্য! জানিস, সে রীতিমতো কলিংবেল টিপে বাসায় ঢুকেছে।’
মামা এবার তাঁর গোল কাচের চশমাটা শার্টের কোনা দিয়ে মুছে আবার চোখে দিলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ভাগনে, রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি।’ মামার কথা শোনামাত্র আমি বাধ্য ভাগনের মতো দৌড় দিয়ে মামার আতশি কাঁচ মানে ম্যাগনিফাইং গ্লাস নিয়ে এলাম। ও, বজলু মামা সম্পর্কে তো কিছু বলাই হয়নি। তিনি আমার মা’র একমাত্র ভাই, এমএ পাস। কোনো কাজ করেন না, তাঁর ইচ্ছা, তিনি ফেলুদার মতো একজন বিখ্যাত গোয়েন্দা হবেন।
আমার সেই বজলু মামা আতশি কাঁচ নিয়ে মাছটি পরীক্ষা করে বললেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক যা ভেবেছি, তা-ই। মাছটা পুলিশের লোক। এটা হলো ছদ্মবেশী সিআইডি।’ মামার কথা শুনে তো আমাদের চক্ষু ছানাবড়া!
সেদিকে তিনি ভ্রুক্ষেপ না করে বললেন, ‘তা না হলে কলিংবেল দেবে কীভাবে? মাছ তো আর কলিংবেল চাপতে পারে না। কলিংবেল চেপেই ফুসমন্তরে শিং মাছ হয়ে গেছে। আপা বল তো, ঠিক কী হয়েছিল তখন?’
মাঝখান থেকে বাবা বললেন, ‘তার আগে মাছটা পানির মধ্যে দেওয়া দরকার।’ মা বললেন, ‘এ জিনিস ধরবে কে?’
বাবা বললেন, ‘আমাদের মিস্টার বজলু গোয়েন্দা থাকতে তুমি ভাবছো কেন! সেই এই কাজটা করবে।’
মামা ঢোঁক গিলে বললেন, ‘না মানে আমি!’
মামার বিপদে এগিয়ে গেলাম আমি। বললাম, ‘মামা, মাছটা পানির মধ্যে না রেখে এখানে থাকাই ভালো। তাতে আমরা এর গতিবিধি লক্ষ রাখতে পারব।’
মামা আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘শাব্বাশ ভাগনে, গোয়েন্দার সংস্পর্শে তুইও দেখছি বেশ গোয়েন্দাগিরি শিখে নিয়েছিস। আপা, এবার বলো তো, সকালে ঠিক কী হয়েছিল।’ বাবা এতক্ষণে খাটে বসলেন, তাও দেয়ালঘেঁষে। মা বলা শুরু করলেন। ‘কলিংবেলের শব্দে ঘুম ভাঙল। ভাবলাম বুয়া এসেছে। তাই লুকিং গ্লাসে না দেখেই দরজা খুলে দিই। দরজা খুলতেই এক লাফ দিয়ে মাছটা ভেতরে চলে এল। তখন আশপাশে, নিচে-ওপরে কেউ ছিল না। তারপরের কাহিনি তো জানিস।’
মামা বললেন, ‘মাছটা ঢুকে কি তোমাকে সালাম দিয়েছে, নাকি গুড মর্নিং বলেছে?’
মা রেগে বললেন, ‘বজলু, মার খাবি কিন্তু।’
মামা বললেন, ‘না মানে সিআইডিরা তো বেশ ভদ্র হয়। তাই সালাম দেওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু না। তোমাকে যা প্রশ্ন করছি উত্তর দাও।’
মা বললেন, ‘না, সালাম দেয়নি, গুড মর্নিংও বলেনি।’ ‘মাছটা কি এদিক-ওদিক তাকিয়েছে? মানে কোনো কিছু খোঁজার চেষ্টা করেছে?’
মা বললেন, ‘না, তেমন কিছু করেনি।’
মামা বললেন, ‘আচ্ছা, মাছটার শরীর থেকে কোনো আলো এসেছে কি না দেখেছ?’ ‘না, আলো আসেনি’ বলেই মা বললেন, ‘আরে, মাছটা কই গেল।’ সারা বাড়ি খুঁজে শেষে মিস্টার সিআইডি শিং সাহেবকে দেখা গেল রান্নাঘরের সিংকের নিচে পানি খেতে। এবার আবার জেরা শুরু...
মা বললেন, ‘আমি আর কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না।’
মামা বললেন, ‘আরে বাবা, এত অধৈর্য হচ্ছ কেন, আপা।’
মা বললেন, ‘তাড়াতাড়ি ওই মাছ বিদায় কর।’
মামা বললেন, ‘আপা, আরেকটা প্রশ্ন, এরপর আমি আর কোনো কথা বলব না।’ মা কোনো কথা না শুনে তাঁর রুমে চলে গেলেন। ‘মাছটার পেট থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছিল কি না, জানা হলো না, ভাগনে।’
আমি বললাম, ‘বুয়াকে ডাকি, সে মাছটা ধরুক, আমরা পরীক্ষা করি।’ বুয়া বুয়া করে কয়েকটা ডাক দিয়েও তার সাড়া পাওয়া গেল না।
মামা বললেন, ‘ভাগনে, মাছটাকে একটু নাড়ানোর ব্যবস্থা কর তো, যাতে শব্দ হয় কি না বোঝা যায়।’ রান্নাঘরের সেলফ থেকে বড় একটা চামচ নিয়ে মাছটার দিকে এগোতেই এটা সরে গেল।
মামা বললেন, ‘বুঝতে পেরেছি, ভাগনে, এই মাছের পেটে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে। দেখলি তো, আমরা এগোতেই সরে গেল। নিশ্চয় কোনো তথ্য নেওয়ার জন্য এই শিং সাহেবকে পাঠানো হয়েছে।’
মা রান্নাঘরে এসে বললেন, ‘কী হয়েছে?’ মামা বললেন, ‘আপা, এই মাছের পেটে সিসি ক্যামেরা বসানো আছে।’ মা বললেন, ‘তুই কী করে বুঝলি।’ মামা বললেন, ‘বুঝতে হয় আপা, গোয়েন্দাদের কত কিছু বুঝতে হয়। এখন দেখো, তোমার বুয়াকে ডেকে মাছটা কাটার ব্যবস্থা করতে পারো কি না!’
মা বললেন, ‘বুয়া’ তো আসেনি। এমন সময় কলিংবেল বাজল।
মা বললেন, ‘বুয়া এল মনে হয়। আমি আর দরজা খুলতে পারব না। তোরা দেখ, কে এল।’ আমি মামার দিকে তাকাই, মামা আমার দিকে। শেষমেশ দু’জনে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখি, ওপর তলার আন্টি। হাতে একটা শিং মাছের পলিথিন...।



No comments:

Post a Comment