05 July 2016

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম



Top of Form

বুদ্ধিজীবী 
ভঙ্গিমা বিষয় নয়। তোমার কাব্যভাষার বিশাল খাঁদ আর
অসমাপ্ত গুঞ্জন থেকে তোমার হতশ্রী লোলুপ মুখ এনে 
রাস্তায় দাঁড় করিয়ে দেয় যে কাকতাড়ুয়ার বেশে, ব্যক্তিত্ব 
তার নাম। সে আসলে তোমার কবিতার বিপক্ষে আঙুল
তুলে না, কিন্তু অজ্ঞাতসার জানে তুমি নিজে প্রশ্নবিদ্ধ হলে 
বৃষ্টি নাচন থেমে যায় শহরে। ফেস্টুন ওড়ে, নির্বাচন ঘনায়
কলমবৃক্ষের থেকে দূরে আরো দূরে তোমাকে ডাকে যে,
সে তোমাকে পড়েনি একদিনও, শুধু জানে মাথার মূল্য,
জমাট রক্তের দেশে আরো হিম বইয়ে দেয়ার কৌশল -
আর তুমি তো হেরেই আছো বুদ্ধিদাসশ্রেণীতে যাবে বলে; 
লালনীল সিগন্যাল আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হল্লা বোলে -
একটি শবদেহ উড়ে পুস্তিকার মুদ্রণ থেকে আকাশের নীলে।


কবিতা
অসচেতনে যে পঙক্তি বেরিয়ে আসে অদৃশ্যমান কোন আড়াল থেকে
সেই আসলে কবিতা। তারপর যা চলে সে সবের অর্থ হয়, অনর্থ হয়।
এই কথা যার সাথে, সে অধুনা কবি। গুঞ্জরিত কথকতার নব্য প্রকাশক।
লাজুক চাহনি তার। অসময়ের শীতার্ত হাওয়ার বুকে লিখে দুরন্ত প্রেম।

তাকে বলি, এসব আসলে উন্মোচন আড়ালের দ্বৈত ক্রীড়াচক্র। কবিতা
শ্যাওলা রাঙানো এক নৌকো। একবার ভাসে একবার যেন সত্যি হারায়।


একলা যে
নির্জন অরণ্য থেকে বিষণ্ণতা কুড়োয়নি সে
তবুও তাঁকে পেয়েছে স্তব্ধতা
তবুও তার ঘুমের দেশে চুপিসার ঢুকেছে
বাদামী বিকেলের একাকীত্ব,
তাঁকে ডাকে বিজন বৃষ্টি সময়চক্রে মধ্যরাতে
বরফ ভাঙা মেঘের হাঁটে কোন সে দুঃখ
স্মৃতির ভারে একলা হাঁটে!
কোন সে সময় কুয়াশায় মোড়া হাত বাড়িয়ে
অন্ধ পরিক্রমার সম্ভাষণ রাখে!
আমি তার অজ্ঞাতসার দূরে খরস্রোতা নদী আঁকি
ছন্দ টলে জীবন দোলে,
সে সব কথা বুকের ভেতর যতনে লুকিয়ে রা

কবিপুত্রকে
কবিতা তাড়িত এমন অসংখ্য সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশের রক্তবর্ণা সূর্যের প্রয়াণ কে হেলায় ফেলে হিংসালব্ধ করেছি নিজের ভেতর। আর সীমানা প্রাচীরের ভেতর জমাট জল যেন আকস্মিক গর্জিত ধ্বনি নিয়ে উড়ে যাওয়ার বাসনা তৈরি করে এই ক্ষণস্থায়ী শরীর জুড়ে, অনন্ত রাত্রির পূর্ব সমস্ত অনুমুহূর্তে। আমার জামা জুতো হারিয়ে গেছে, হাওয়ায় নাক গলিয়ে পৃথিবীর ঋতু আবর্ত গন্ধের সমস্ত তৃষ্ণা ফুরিয়ে গেলে এক রহস্যময়ী ধ্যান আশ্চর্য বিপরীত যে চোখ তৈরি করে তার তরে অনুশোচনা অস্বীকার করবো বলেই কি এই সান্ধ্যতীরে আমার আগমন, বসে থাকা! আমি হিংসা করি কবিপুত্রকে, কবিতা স্রষ্টারও অধিক। বুক পকেটে পিতার কবিতা মোড়কে রাখা যাপন মন্ত্র নিয়ে যে ঘুরে বেড়ায় তেরো সমুদ্রের পাড় ক্রমান্বয়ে...


পাখিবাড়ি
পুবের মেঘ যতটুকু আকাশে বিস্তার করে
আমি তার থেকে সরে দেখি সরোবর
শান্ত আরেক রঙা মেঘ জড়ায়েছে আদরে
আবহ এমন, আমিও তুললাম মেঘ গান
কেমনতর সে গান, এবার নিরুত্তর হলাম
আমি কি সেখান থেকেও সরে চললাম?
গুঞ্জরিত ডানায় পাখা মেলে একটা পাখি
কোন নির্দেশনা দিয়ে যায়, আমার ব্রহ্মাস্ত্র
উড়বার ডানাটিও নাই।
_____
স্বভাবজাত ফিরে আসি বর্ষণ ঘ্রাণের দেশে
বিষ্ণু দে'র কবিতার মতো জলজ মায়াঘ্ণ
হাওয়া আছে যে দেশের উদাসীন আকাশে,
দুরন্ত সে নদীটি, তোমার বাড়ি তার পাশে।

স্বপ্ন
দিবাস্বপ্নে দেখি কুরুলিয়ার বনে গাছেরা অবাক নেচে চলেছে।
পাশ ঘেষা গ্রামে ফিরে এসেছে নবান্নের মেলা,
আমি তুমি আমরা যাচ্ছি হেলেদুলে, ডুগডুগি আর বাশির সুরে।
আর আমাদের বুকে আন্দোলন, শরীরে ঝরে পড়ছে পাতা
হলদে সবুজ রঙের মতো নানা প্রতিক্রিয়াশীল।

ঘোর কেটে গেলে জানবো কিছুতে কিছু নয়,
কুরুলিয়ার বন বলে পরিচিত কিছু নেই। আছে একটা জলপথ
বিকেলে চাঁদের আলো অবাক খেলা করে যার শরীর জুড়ে ;
আর বাদলা দিনে একটি দুটি বৃষ্টিবিন্দু লক্ষতম হবার আগে-
গভীর জলের মাছেরা লাফিয়ে এসে দেখতে চায় তার অনিন্দ্য দু'পার।

No comments:

Post a Comment