বায়োস্কোপ
মানুষ ঈশ্বরের নিখুঁত
শিল্পকর্ম মাত্র।
মানুষকে দিয়ে রচিত হয় না নতুন
কোন শিল্প।
শুধু সভ্যতার কাঁধে সভ্যতা
রেখে বদলে নিয়েছে চশমার কাচ।
ও কারিগর- এ কেমন শিল্প তোমার,
মুখে চাঁপার গন্ধ টেনে মনে
দিয়েছো সবুজ
হেমলক আঁচড়।
ভেতরের আচ্ছন্ন গোধূলির কোন
মলিনতা নেই
বাহিরের ধবধবে সূর্য ফোটা
দিনে।
এ জলজীবন গিনিপিগ মন
জলছাপে ফুটিয়ে তোলা ললিত কলা
মহা বিস্ময় পৃথিবীতে করিছে
খেলা।
দীর্ঘ পথ হেঁটে আমি পৃথিবীর সব
শিল্প জড়ো করে
মানুষ শিল্পের কাছে হেরে যাই
ব্যাবিলন দুয়ার খুলে আগ্রায়
নাক ঘষে দেখি
মানুষের চেয়ে বড় আশ্চর্য পৃথিবীতে
নেই।
পেঁজা তুলো মেয়ে
মাঝ
রাতে বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় নুড়িপাথর, শহুরে গল্প। বানের জলে ভাসে
অপলক নাগেশ্বর। তোমার লাল পাড় শাদা শাড়ি। আঁচলে তোলা বেতফল রাজহাঁস পালক উড়িয়ে মেয়ে চেয়ো না শঙ্খজল। ভরা নদী তোমার নয়।
চোখের কার্নিশ ছুঁয়ে প্রহরী রাতের কাজল শুধুই আঁধার। মালতী মেয়ে ছুঁয়ো না আলো আর। আলো জল পাখি শহর
তোমার নয়। তোমার যুক্তি প্রতিবাদ পেঁজা তুলো মেঘ উড়ে গেছে দূরের শহরে। এ শহরের
মালিকানা নেকড়ে পুরুষের। যে পুরুষ তোমার
নয়।
আটাশ মগ্ন ঢেউ
ঘুম ভেঙে দেখি কেটে গেছে আটাশ
বছর
বাতাসে বাতাসে তুমুল ক্ষুধা
পিপাসা মাটিতে তৃষ্ণার্ত চাতক
নিষ্পলক চেয়ে আছি আকাশে
তবুও ঝরে না সূর্যকণা!
আলো ছোঁয়ার বাসনায় শতশত
নক্ষত্রদিন কেটেছে আঁধারে।
মাটিতে সভ্যতা এঁকে নদী এসেছে।
বদলায়নি গতি। মুহূর্তের মূল্য
বুঝেনি বয়স।
আটাশ বাঁক পেরিয়ে আজ ভাবি
কেউ একজন এসেছিলো অথবা কেউ
আসেনি
আমি শুধুই এক জল মগ্ন ঢেউ।
প্রজাপতি হয়ে
বাঁচি
মানুষের কলিজা কতটা সুস্বাদু
জানি না
খুব ইচ্ছে করে চেটে পুটে খেয়ে
নিই
মনুষ্য শরীর। রক্ত স্নানে কতটা
মুছে পাপ?
গলার নিচে চকচকে ছুরি বসিয়ে
দেখি
অবলীলায় ফোটে কিনা বকুল।
বুকের পিঞ্জর বুঝি তেলে ভাজা
চমচম
জিলাপির মত প্যাঁচিয়ে রাখি
দুর্বল মেরুরজ্জু।
তোমাদের দেখানো পথে
আমিও মানুষ, শ্রেণীহীন।
আমার কাতারে যে সব সরীসৃপ
দাঁড়িয়েছিল একদিন
তারাও আজ লেজকাটা মানুষ।
কম্পাস ঘঁষে আঁকে বৈষম্য
বৃত্ত।
সেদিন মানুষের কাতারে দাঁড়াতে-
পাখিদেরও ডেকেছিলাম
এসেছিল অনেকে। শুধু প্রজাপতির
দল
ঘৃণা ছুঁড়ে বলেছিলো মানুষ হবো
নারে,
তার চেয়ে পতঙ্গ হয়ে বাঁচি।
আপাততঃ বিরুদ্ধাচার
গ্রামটি নাম পাল্টে নেওয়ার অনুরোধ পাঠালে সমকামিতার অভিযোগে নড়ে চড়ে
উঠে বাঁশবন। সে-বার আমি ছেলেদের পক্ষে লড়েছিলাম। দেখলাম মেয়েরা আপাদমস্তক পরদর্শী।
বইচা নামানো ঘাটে তরী ডুবলে ডুবুরি সাহস পায়। নেমেছিলাম হাতা গুটিয়ে। চরিত্রহীনতার
লোভে ভেতরটা জেগে উঠে-বেতস বনের ফাঁকে লাল ফিতার যোদ্ধারা আশ্চর্য মেয়ে হয়ে যায়।
বেত কাঁটায় ছিদ্র করে নেয় নাক কান আর পুরুষেরা অগোচরে ফেলে যায় পরিত্যক্ত ব্লেড।
মেয়াদোত্তীর্ণ
বালিকা
বাইজি ঘরে দুঃখ জমা ছিল
মেঝে, দেয়ালে অথবা ছাইরঙ বিকেলে।
মুদ্রায় মুদ্রায় বিকিয়েছো
বাজুবন্ধ শরীর
অথচ গন্ধরাজ সাবালিকা হওয়ার
আগে
সকাল ঝরে পড়ার গল্প রাখেনি কোন
প্যাপিরাস।
তুমি কোন পথে হাঁটো?
আমি বিনয়ী ধুলো হয়ে যাবো সেই
পথে।
আর নদী হলে রক্ত ঋণের
শেষ অভিশাপ হতে তুলে নিবো সবুজ
অর্কিড।
কড়িতে কেনা
জন্মদিন
তোমার জন্মদিনে মহাকাশ নেমে
আসে-
আমি ছায়া পথ ধরে হাঁটি
এর আগে পৃথিবীতে জন্মায়নি কোন
মানুষ।
শুধু পায়ের চিহ্ন রেখে গেছে
দুপুরের বিবস্ত্র রোদ।
কাকে তুমি পুরুষ বলছো অথবা
নারী
বৈসাবি উৎসবে
সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে
যে মেয়েটি নেচেছিল তার
রক্তঘ্রাণে
কান পেতে শুনো- নারী জন্ম পাপ
হলে পুরুষ জন্মও বৃথা ।
তবুও পৃথিবীতে পুরুষ জন্মায়, জন্ম নেয় নারী
জন্মায় না কোন মানুষ।
No comments:
Post a Comment