আগা শহীদ আলীর
কবিতা
‘ঢাকাই মসলিন’
প্রতিবেদক ও অনুবাদক:
প্রতিবেদক ও অনুবাদক:
আবুল কাইয়ুম
বিশ শতকের শেষ দিককার বিশ্বকবিতার সহসা ঝলকিত আলোরশ্নি আগা শহীদ আলী (১৯৪৯-২০০১), যিনি প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সংস্কৃতির মেলবন্ধনে আধুনিক কবিতায় একটি নতুন আবহ সৃষ্টিতে প্রয়াসী হন। তাঁর নিজেরই ভাষায়, এ তাঁর ‘বহুমাত্রিক নির্বাসন’। ভারতের শ্রীনগরে এক সম্ভান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। ভূস্বর্গ কাশ্মিরের মনোরম পরিবেশে তাঁর বেড়ে ওঠা। কাশ্মির ও দিল্লী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন এবং ভারতে ইংরেজিতে দুটো কবিতা-পুস্তিকা প্রকাশের পর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। অত:পর পেনসিলভ্যানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় হতে ইংরেজি সাহিত্যে পিইচডি (১৯৮৪) এবং অ্যারিজোনা বিশ্ববিদ্যালয় হতে সৃজনশীল সাহিত্যে এমএফএ (১৯৮৫) ডিগ্রি লাভ করেন। যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক কবিতা-সাহিত্যের প্রতিষ্ঠানিক বলয়ে অবস্থান করে এবং সমকালীন মার্কিন কবিদের সান্নিধ্যে তাঁর কবি-প্রতিভা পরিশীলিত হয়। চেৌদ্দ বছরের মধ্যে তিনি প্রকাশ করেন ছয়টি কাব্য। এগুলো হচ্ছে- ‘দ্য হাফ-ইঞ্চ হিমালয়াস’ (১৯৮৭), ‘এ ওয়াক থ্রু দ্য ইয়েলো পেজেস’ (১৯৮৭), ‘এ নস্টালজিস্টস্ ম্যাপ অভ্ অ্র্যামেরিকা’ (১৯৯১), ‘দ্য বিলাভেড উইটনেস : সিলেক্টেড পোয়েমস্’ (১৯৯২), ‘দ্য কান্ট্রি উইদাউট এ পোস্টঅফিস’(১৯৯৭) এবং ‘রুমস্ আর নেভার ফিনিসড্’ (২০০১)। স্বল্পায়ু জীবনে কবিতার জন্য তিনি পাঁচটি স্বনামধন্য শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন থেকে ফেলোশিপ লাভ করেন, যা তখন অনেক মার্কিন বংশোদ্ভূত খ্যাতনামা কবির জন্যও ঈর্ষণীয় প্রাপ্তি ছিলো। কবিতা রচনায় অতুলনীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে পুশকার্ট পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তিনি পেনলিভ্যানিয়া, প্রিন্সটন ও ইউটাহ্ সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। আগা শহীদ গজলের সাঙ্গীতিক ঐতিহ্যকে পশ্চিমা কাব্যিক ঢংয়ের মাঝে, ইংরেজি ভাষার ধ্বনি ও ছন্দদোলার মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। ঢাকার মসলিন নিয়ে লেখা তাঁর বিশিষ্ট কবিতা 'The Dacca Gauzes' সমকালীন বিশ্ব-কবিতার অমূল্য সম্পদ। তিনি কাম্মিরি-অ্যামেরিকান কবি হয়েও এ কবিতার মাধ্যমে বাঙালির সোনালি ঐতিহ্যের মহিমাকে বিশ্বসভায় তুলে ধরেছেন। নিম্নে এই মহতী কবিতাটির অনুবাদ তুলে ধরা হলো।
‘ঢাকাই মসলিন’
(সারা বছর ব্যবহারের জন্য তারা জমাতে সচেষ্ট ছিলো সবচেয়ে নিখুঁত চমৎকারিত্বপূর্ণ ঢাকাই মসলিন। –অস্কার ওয়াইল্ড/দ্য পিকচার অভ্ ডরিয়ান গ্রে)
------
সেই স্বচ্ছ ঢাকাই মসলিন
যাকে বলা হতো তাঁতে বোনা হাওয়া,
কিংবা ছুটন্ত জলধারা বা গোধূলি শিশির:
এখন মৃত শিল্প,
শত বছর ধরে মৃত। দাদিমা বলেন,
‘আজ আর কেউ জানে না
সেই কাপড় ছিলো কিনা পরার জন্য,
নাকি তাকে কেবলই হতো ছোঁয়া’।
তিনি একদা পরতেন
ঐতিহ্য সূত্রে পাওয়া এই শাড়ি, অর্থাৎ
তাঁর মায়ের বিয়ের যেৌতুক। খাঁটিত্ব প্রমাণের জন্য
একটি আংটির মধ্য দিয়ে অনায়াসে টেনে নেওয়া যেতো
এই ছয় গজ দীর্ঘ শাড়িটাকে।
কয়েক বছর বাদে শাড়িটা ছিঁড়ে গেলে
তা থেকে তৈরি করা হলো
সোনালি সুতোর চেলি টানা বেশ কিছু নকশি রুমাল
যেগুলো বিলি করা হলো
ভাগিনেয়ী আর ননদদের মাঝে;
সে সবও হারিয়ে গেছে আজ।
ইতিহাস থেকে শেখা : ব্যবচ্ছেদ করা হলো
তাঁতীদের হাত,
নিথর বাংলার সেই তাঁত,
বৃটিশ বনিক স্বদেশে চালান দিলো
কাঁচা তুলো।
ইতিহাস যদিও তাঁর কাছে অর্থহীন,
দাদিমা কেবল বলেন-
আজকের মসলিন নামের বস্ত্রগুলো
কতো রুক্ষ ও পুরু মনে হয়
এবং শুধু শরৎকালে এখনও ভোরের প্রার্থনা শেষে
সেই সূক্ষ্ম বুনট ফোঁটে যে কারো অনুভবে।
দাদিমা আরো বলেন, এক সকালে বাতাস ছিলো কুয়াশা-চর্চিত,
তিনি আনমনে নিজের আংটির মধ্য দিয়ে
টেনে নিয়েছিলেন সেই ঢাকাই মসলিন।
মূল কবিতা
*********
The Dacca Gauzes
*************************
(...for a whole year he sought to accumulate the most exquisite
Dacca gauzes. -Oscar Wilde/The Picture of Dorian Gray)
------
Those trasparent Dacca Gauzes
known as woven air, running
water, evening dew:
a dead art now, dead over
a hundred years. "No one
now knows," my grandmother says,
"what it was to wear
or touch that cloth."
She wore
it once, an heirloom sari from
her mother's dowry, proved
genuine when it was pulled, all
six yards, through a ring.
Years later when it tore,
many handkerchiefs enbroidered
with gold-thread paisleys
were distributed among
the nieces and daughters-in-law.
Those too now lost.
In history we learned: the hands
of weavers were amputated,
the looms of Bengal silenced,
and the cotton shipped raw
by the British to England.
History of little use to her,
my grandmother just says
how the muslins of today
seem so coarse and that only
in autumn, should one wake up
at dawn to pray, can one feel that same texture again.
One morning, she says, the air
was dew-starched: she pulled
it absently through her ring.
No comments:
Post a Comment