জীবন হল সব থেকে বড়ো রোগ
১.
সাদা কাপড়ে জড়ানো একটা দেহ,
যার মধ্যে আর কোন জটিলতা নেই,
যার কোন ব্যথা, বেদনা, অনুভব কিচ্ছু নেই,
যার কোন প্রশ্ন নেই, উত্তর দেওয়ার মতো জিভ নেই,
সেই আসলে ঈশ্বর লাভ করেছে।
হাতের আঙুল, পায়ের আঙুল সবই ঠাণ্ডা,
সবই নিস্তব্ধ,
নীরবতা আজ যেন স্নায়ু জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে,
বুঝি আরেকবার আজ ছায়া থেকে মৃত্যুত্তীর্ণ সব প্রশ্নগুলো
চোখ ছাপিয়ে বেড়িয়ে আসবে।
আটকে থাকবে চরাচরের কথা,
সংসারের মায়া, মমতা,
একটা মধ্যবয়সী বউ, ছোট ছোট দুটো ছেলে।
অপস্রিয়মাণ একটা ছায়া এসে পড়েছে অঙ্গ প্রত্যঙ্গে।
আর মেঘ বলে দিচ্ছে শ্মশানটা ওইদিকে।
২.
চারিদিকে ছিটিয়ে যাচ্ছে সাদা সাদা খই,
খুচরো পয়সা,
ছিটিয়ে যাচ্ছে মৃত মানুষটার সমস্ত জীবনের বসন্তকাল,
মানুষটার ঘাম,
মানুষটার গোধূলি-বেলার সঙ্গতা,
মানুষটার দৃশ্যজগৎ।
রাস্তার ধারে একটা লোক বলেছিল,
“মানুষটা তো সুস্থই আছে”
আশেপাশে লোকজন বলেছিল,
এই যাহ, পাগল কোথাকার,
যাহ যাহ,
৩.
কালো কালো ছেঁড়া ছেঁড়া ময়লা কাপড়,
মাথায় চুলের জট,
হাতে নেশার প্রস্তুতি,
নদীর ধারে কিছু কান্না তাঁকে ঘিরেই গড়ে ওঠে,
ডাবলিন বলেছিলেন,
জীবন হল সব থেকে বড়ো রোগ,
যার ওষুধ একমাত্র মৃত্যু।
জানালা
রোজ সকালে আলো আসে একটা
গভীর সান্ত্বনার মতো
আর আমি শরতের ঘুম ভাঙা
ভোরে পাখির ডাকের সাথেই জীবন কাটাই।
এখনো কাশফুলের দেখা পায়নি,
বোধহয় পৃথিবীটা কোন
প্রাচীন অসুখে ভুগছে,
বিকেলের রঙও হয়ে আসছে
শরতের মতো সাদা।
আমার যতদূর চোখ যায়, শহুরে
বন্দরে সবাই কলকাতাকে ঢেলে সাজাচ্ছে,
আর আমি শুধু জানালা দিয়ে
বোবা প্রেমিক প্রেমিকার গল্প দেখেছি।
আমার চারকোনা কলকাতার
পর্দা সরিয়ে দেখেছি, একটা শালিকের বৃষ্টিস্নান,
আর তারামণ্ডলের পাশের
জীর্ণ অশত্থগাছ,
যার ডালে ডালে কোকিলেরা
ভিক্ষে করে কাকেদের কাছে।
একটা কথোপকথনের সাথেই আমার
পর্দা ভেঙে জ্যোৎস্না
আসে,
আর পৃথিবীও তখন অন্ধকারে
মাথা ডুবিয়ে বাঁচে।
এইভাবেই প্রত্যেক শরৎকাল জুড়ে আমার জানালার বয়স
বাড়ে,
আর আমি বোবা প্রেমিকের মতো
জীবন কাটাই পাখির ডাকের সাথেই।
No comments:
Post a Comment