16 May 2017

নাজনীন খলিল





অগ্নিমুখো ড্রাগন
একটা ধুসর জামার ভেতরে রাত
তার ইনসমনিয়াক দৈত্য পোষে রাখে।
আমি রাখতে চেয়েছি ঘুম
আর
স্বপ্নের ঠিকাদারি।
ক্লান্তদেহ, নিমীলিত চোখ
তবু
করোটির ভেতর হৈ চৈ কোলাহল, কথার মিছিল।
নীরবতা--
অনায়াস দ্রুততায় বাচাল স্মৃতির অর্গল খুলে ফেলে।
কর্ণিয়ার ভেতর বুদবুদফোটা দৃশ্যের রঙধনু।
জ্যোৎস্নার প্লাবনে কোন রাতে ভাঁটফুল ফোটেছিল
সোনালী ঢেউয়ের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল
সব দ্বিধার আড়াল।

বাক্যের কারাভাঁয়
ভেসে চলে আসে অনুচ্চারের গল্পগুলোও
সেইসব গোপন গভীর ;যা কাউকে বলা হয়নি।
বিস্মরণের প্রচ্ছন্নগুহায় শায়িত
সারিসারি পাথরচাপা লাশ পুনর্বার জেগে ওঠে।
ঘুমের চৌকাঠ পোড়াতে
একটা অগ্নিমুখো ড্রাগন ছুটে আসে।


কেমন আছো তুমি
কেমন আছো সম্রাজ্ঞী?
কেমন চলছে তোমার রাজ্যপাট?

সব ক্ষয়দাগ, ক্ষতচিহ্ন ঢেকে দিতে
হাসির থেকে গাঢ়তম মেইকওভার নেই কোন।
কিন্তু--
মুখোশের মাঝেই কী আছে তেমন নিগূঢ় কোন রহস্যময়তা?
তীক্ষচোখ দৃষ্টিতে চেনা যায় সবই।

কেউ কেউ
খুব চড়াদামে কোঁচড়ভরা হিম কিনে আনার পর
অগ্নিপিপাসু করতল মেলে রাখে উত্তাপের পাশে
বেখেয়ালে পুড়ে গেলে, এন্টিসেপটিকে ঢাকা হাত পিছনে লুকায়।
পাতাঝরা ঋতুকালে পাখি উড়ে যায়
আমাদেরও যেন সব জেগে ওঠে তীব্র বিষাদবিরহ।
ভুলে থাকি
বাউলের মতো বেভুল বিবাগী এক মন নিয়েও
আমরা বিহঙ্গ নই; একটি ক্ষীণকায় চড়ুইও না।

মেঘ উড়ছে,পিছু পিছু পাতা উড়ে যায়
মেঘ ও তার বাড়ির মাঝখানে এক হিমনীল দীর্ঘশ্বাস ঝুলে থাকে।

 

দুই হাতের ফাঁক
এরেনার ভেতর
একজন নবিশ গ্ল্যাডিয়েটরকে ঠেলে দিলে
সেও একবার ঘুরে দাঁড়ায় প্রাণের তাগিদে।

বিস্তর ভুলভ্রান্তি ফাঁকিজুঁকি ভরা বাল্যশিক্ষার সিলেবাস।
রূপকথার ঠাসবুনট ভরা শৈশব
দাদীমার মনোহর গাঁথা; খরাহীন, জরাহীন
শুধু স্বপ্নের বাড়বাড়ন্ত গোলাঘর ভরা। শেখায়নি জীবন।
কেউ বলেনি
অনাগতঅরোধী এক রণক্ষেত্রের কথা।
হয়তো,
উড়ন্ত ফড়িঙের লেজে সুতো বেঁধে দিলে

তার আকাশ সীমিত হয়ে যায় ভেবে।
মোড় ঘুরতে ঘুরতে সব পথই বাঁকা
অনায়াস উদ্যানের কোন মহাসড়ক নেই।
কোন পরাভব নয় ।
নুড়িকাঁকর বিছানো পথে টলোমলো পা ফেলতে ফেলতে
এক বৈরি মহাকালকে বৃদ্ধাগুষ্ঠি দেখানোতে কোন বিভ্রান্তি ছিলোনা।

শুধু
ঘুমের বিছানায় মাঝেমাঝে মনে হয়
দুই হাতের মাঝখানে এতোখানি ফাঁক হলো কবে!





রং
কারো গাঢ় নীল চোখ
বেজে যাচ্ছে বেদনার্ত সেতারের মতো ;
যেন ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে এক খন্ড আকাশ,
যেন এক্ষুণি জন্ম নেবে এক নতুন সমুদ্র।
অথবা মনে করো
এক বিভোর উদ্যানে অপরাজিতা ফুটেছে অনেক
যেন নীল নীল ভোরের আধখোলা জানালায়
সবুজ ঝালরের ফাঁকে উঁকিঝুঁকি দেয়া সকালের দূত।
আকাশ অথবা সমুদ্রের এই প্রগাঢ় রং
আনন্দ নাকি যন্ত্রণার এই প্রশ্ন ভুলে
এক মনোরম ল্যান্ডস্কেপে বিমুগ্ধ,
তাকিয়েই থাকি।
মাঝেমাঝে
দুঃখ ও সুখের সব রং বুঝি এমনি একাত্ম!

এখনো দুই হাতে বিবর্ণ ধূসরতা মাখা,
ছায়াটাকে আততায়ী ভেবে নিয়েছি সন্ন্যাস ;
রঙিন ফানুশ ওড়ানো কালে
এই চিত্রকল্প খুব বেমানান মনে হয়।

চোখের ব্যাথা দেখি,
অথবা নীলকণ্ঠ ফুলের সুন্দর
কথাতো একটাই
আমার বিবর্ণ ধূসর হাত নীল ছুঁয়ে থাকে।
মনে হয়
এইসব রংয়ের বিপরীতে ভিন্ন কোন রং নেই,
ছিলোনা কোথাও।



No comments:

Post a Comment