13 May 2017

মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম






অনিন্দিতার জন্য ভালোবাসা
আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি অনিন্দিতা,
এমনটা আমার আগে হয়তো কেউ করেনি
তারা হয়তো অপেক্ষা করেছে
বিসর্জন দিয়েছে
ত্যাগী হয়েছে
কিন্তু আমি?
তোমাকে নিয়ে ভেবেছি
ভেবে গেছি
সারা দিন, সারা রাত্র, সারা বেলা।
কতগুলো রাত জেগে জেগে
কাটিয়ে দিয়েছি,
আঙ্গুলে সিগারেটের শেষ আগুনে হুশ
ফিরে পেয়েছি।
আবার ধরিয়েছি, আবার ছ্যাঁত খেয়েছি।
টি-স্কয়ার আর সেট স্কয়ারে
মজিদ সাহেবের বাড়ির ডিজাইন আঁকছিলাম তো আঁকছিলাম,
কিন্তু মাপ জোখ নিচ্ছিলাম না।
বাজার করে বাসার ঠিকানা ভুলে যাচ্ছি
তবুও ফিরছিলাম না,
হাঁটছিলাম;
শুধু হাঁটছিলাম।
তোমার বাড়ির রাস্তাটা আমার
খুব চেনা হয়ে গিয়েছিলো।
রাত দু’টোয় কত হেঁটেছি,
কত হাঁ করে চেয়ে দেখেছি
তোমার জানালায়
চায়ের উষ্ণ কাপে কত ঠোঁট পুড়িয়েছি।
অনিন্দিতা, ভেবো না তুমি
আমি পাগল হয়ে গেছি
এ চেয়ে থাকা মানে কিছু পাওয়ার প্রবল আকুতি,
এ ভাবনা মানে নতুন জগত সৃষ্টি করার ইচ্ছা।
এ অন্যমনস্কতা জাগ্রত ছিলো শুধু তোমার জন্য,
আমি তোমাকে প্রবল ভালোবেসে ফেলেছি; অনিন্দিতা।



অনিন্দিতার জন্য ভাবনা
চিঠিপত্র লেখার দিনগুলো বুঝি চলেই গেলো সময় থেকে, তবে তোমাকে আমি চিঠি দিয়েই প্রেম নিবেদন করবো, অনিন্দিতা।
রোজ রোজ পীতবর্ণ খামে গ্লু লাগিয়ে মনের কথাগুলো পাঠাবো তোমার ঠিকানায়,
এই ধরো
বাতাসের কথা, ছাতিম গাছে বসা

একাকী দোয়েলটার কথা,
কয়েকটা হলদে গাঁদা কিংবা গোলাপের সুভাসের কথা, অন্ধকার আকাশের একাকীত্বের কথা।
তুমিও তো পত্র লিখতে পছন্দ করো, অনিন্দিতা।

তুমিও না হয় দু'একটা পত্র আমাকে দিও। জমিয়ে রাখবো কোনো গোপন ঘরে।
কিন্তু তোমাকে দেখলে আমার প্রচন্ড রহস্যময়ী মনে হয়। আকাশে নীলের বদলে কালো প্রলেপ লাগাতে পছন্দ করো তুমি। সহজলভ্যতাকে সহজেই বিগড়ে দিতে জানো তুমি।

শরাবের বোতলকে বিষের বোতলে রূপান্তরে কি মজা পাও তুমি?
এ তোমার কেমন রূপ, অনিন্দিতা!
ভয় হয়, আমাকে দেখার পর কি তুমি আমাকেও বদলে দেবে?





 
অনিন্দিতার জন্য আকুঁতি
রাত নামলেই ভাবি
জোঁনাকিদের ডাক দিয়ে গান করি
বেসুরে গলায় ঘুম ভাঙ্গাই শহরের নির্জনতার
তারপর মাঝরাতে তোমার জানালায়
অপেক্ষা করি,
ত্রস্ত-ব্যাস্ত এক ভাবুক ভালোবাসায়
মাখা মুখের।


অনিন্দিতা, এবং বিবেক
তোমার সকালগুলো সবসময়ই আলাদা ছিলো,
যৌবনের ডাক দিয়ে একরাশ উষ্ণতা ছুঁয়ে দিতে প্রতিদিন
একজোঁড়া দোয়েল আর হলদে পাখির ডাক পেতাম উপহার হিসেবে।
তোমাকে তখন পাশে পেতে খুব ইচ্ছে হতো, অনিন্দিতা।
কি যে দেখেছিলাম তোমার মাঝে?
অথচ কত মুখই তো দেখি রোজ
পথে -ঘাটে, বাসে -ট্রেনে।
তবুও তুমি,

তুমি ছিলে রাণী আমার ভাঙার রাজ্যে।
তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি

রক্তজবা খোঁপায় গেঁথে
পুঁইবিচি ঠোঁটে ডলে
পেঁয়াজ খোঁসার শাড়িতে
তুমি এসেছো আমার কাছে।
ইচ্ছে করিও আমি। আচ্ছা,
ইচ্ছে করতে তো দোষ নেই মানুষের?
এই পৃথিবীতে ক'টি ইচ্ছেই বা পূরণ হয় মানুষের!
অনিন্দিতা, তুমি কি কোনো ইচ্ছে করো না?
তোমার কি কোনো ইচ্ছে জাগে না মনে!
আমার তো ইচ্ছে জাগে অনেক,
তোমার ঠোঁটের কোণার তিলটুকুকে একটু ছুঁয়ে দিতে
বহুদূরে তোমার সাথে বেড়িয়ে আসতে,
সমুদয় সুখগুলো তোমার সাথে ভাগ করে নিতে।
কিন্তু ভালোবাসা বুঝি জুটে না সবার কপালে!
আমি দিতে চেয়েছিলাম ভালোবাসা আর
তুমি চেয়েছিলে সুখ।
তুমি এবং তোমার বিবেক,
তুমি তো বিবেকের সাথে একা একা থাকতেই মজা পাও;
সুখী হওয়ার প্রধান শর্ত কি তবে শুধুই বিবেকহীন হওয়া?



উপমা
অনিন্দিতা, এক রঙিন প্রজাপতি
সান্ধ্যকালীন জোঁনাক জোসনা;
আর
অন্ধকারের নিঃস্তব্দতায়
এক ডাহুক ছানা।


ভালো থেকো, অনিন্দিতা
মাঝে মাঝে আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখা প্রয়োজন, মনের স্পৃহা জাগানোর জন্য
আমি যেমন স্বপ্ন দেখি ডান হাতে বিষযুক্ত পেয়ালা আর বাম হাতে আগুনের শীতল সাম্রাজ্য।
কোনটাকে বেছে নিবো?
এমনটাই তো তুমি বলেছিলে অনিন্দিতা
অথচ আমি ভ্রমণ করি,
তোমার মাঝেই।
তোমার মানচিত্রে খুঁজে বেড়াই
বহু পুরোনো সেই আ-মাজন আল্পস ভিসুভিয়াস
আর এক সুবিশাল হিমালয়!
শুনেছিলাম,
ব্যার্থতার দায় স্বীকার করা জানতে হয় ভালোবেসে,
আমি আমার ব্যার্থতার দায় স্বীকার করে নিলাম তাই;
পাঠিয়ে দিলাম দু'খন্ড শুভ্র মেঘ তোমার আকাশে, ভালো থেকো তুমি।।


অনুভূতিসিক্ত মন
তুমি তো আকাশের দুঃখ কখনো দেখোনি বিশালতা দেখেছো, দেখেছো স্থবিরতা
আ-জ আকাশের দিকে তাঁকিয়ে দেখো; সেও তোমার মতো গভীর অনুভূতিতে সিক্ত

পার্থক্য শুধু দু'জনের মধ্যকার প্রকাশের ব্যর্থতা।


উপযোগ
রাতের অন্ধকারে উপর থেকে ঝুলে পড়ে চাঁদ,
পাশের বস্তিতে চলছে জোর শোরগোল; শরাবের ভাগাভাগি
পথের পানে কালো কুকুর দু'টো আধো আধো বাসি রুটি মুখে নিয়ে
সটকে পড়ে দুপেয়ো জীবের বৈরী আভাসে।
বারান্দায় চিরকুটে তোমার বিচ্ছেদের খবর শুনে
চাঁদটা নেমে এসে লেগে গেছে আমার বাড়ির বৈদ্যুতিক থামে,
একাকী ছায়াটাও শেষে খুঁজে নেয় একটু শীতল হাওয়া
রাতের কষাকষি শেষ হলে অন্ধকারটা
ধীরে ধীরে মিলায়ে যায় ফের আকাশে।
অনিন্দিতা, তুমিও কি অন্ধকারের মত মিলিয়ে গেছো আমার পশ্চিমের আকাশে!


নির্জনতা
রাত নামলে অন্ধকারে মিশে যেতে ইচ্ছে করে এখন। পঙ্কিলতা যে কামড়ে ধরেছে ঘাড়ে, টেনে নিচ্ছে সময়ের কাল-ক্ষেপনে। অন্ধকারে চেয়ে দেখি সাম্পানে হাওয়া দিতে থাকে চিড়ল তালপাতারা। মাঝে মাঝে স্বপ্নচারীরা ধানের খুদ আর ভুষি ছড়িয়ে ভাটা দিতে চেষ্টা করে জোয়ারে।
একসময় তোমার নাচ আমার খুব ভালো লাগতো।
বুঁদ হয়ে রাত কাটিয়ে দিতাম তোমার ঘুঙুরের মাদকতায়।
শুনেছি, শশ্মানঘাটের নিরব
অন্ধকারে ঘুঙুরের শব্দ নাকি বেশ লাগে কানে, রাত দু'টোয় আরো বেশি।
অনিন্দিতা,
তুমি নেচে যাও আরো গভীর কোরে, সবাই ঘুমিয়ে আছে আজ মৃত পৃথিবীতে, শুধু তুমি বাদে!

প্রস্থান
অন্ধকারের অতিথি হয়ে এসেছিলাম পৃথিবী নামক ব্রোথেলে
ছুটির ঘন্টা বেঁজে উঠলো বলে, ছেড়ে যেতে হবে এই রঙ্গমঞ্চ শেষ করে।
____________


No comments:

Post a Comment