14 May 2017

রিয়া চক্রবর্তী






অতি সাধারণ আমি
সাধারন মেয়ে মালতির মতই অতি সাধারন আমি।এতোটাই সাধারণ যে সময়ের নদী তিরতির করে বয়ে পায়ের পাতার নীচে আকুল হয়ে দাঁড়ায়। তখন আমার ঘরে ফেরার ইচ্ছেরা সব জেগে ওঠে। যে ঘর আছে আমার মনের ছায়ায়, যে ঘর আছে শতেক সময় তীরে।
অত্যন্ত  সাধারন মেয়ে আমি।একা একাই এক বুক মাটি কেটে রাখি,আর রাখি এক ফালি ফলন্ত জমি,শীতে ফাগুনের আগেই, যে নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছে মান্দাসে।অসংখ্য অবজ্ঞার পরে,পড়ে থাকে নির্ভার আলো,আলগোছে মন ভুলে, থেমে যাই নির্জন এক দ্বীপে।
আমি অতি সাধারন মেয়ে। লোকালয় থেকে নিজেকে লুকিয়ে রাখি, রাত জাগা তারাদের সাথে চলে নিজেকে চেনার পালা।মাঝে মাঝে কার্নিশে দাঁড়িয়ে,হাওয়ায় মাপি মুক্তির দৈর্ঘ্য,আলতো করে ছড়িয়ে দিয়ে হাত,কিন্তু ডানাজোড়া যে ছিঁড়েই গেছে কবে।
অত্যন্ত সাধারন আমি।পৃথিবীর বুক থেকে একদিন, জলছবি জমা হতে থাকে। অভিমান হাত রাখে হাতে, নিশ্চুপ মন আরোও চুপচাপ হয়।ছাদ ঘেরা পাঁচিলের আগাছায়,জমে চলে আজন্ম অনুভূতি,রাত কেড়ে রাত নেমে আসে, হিম হিম কুয়াশায় ভিজে যায় যত ইচ্ছে কুসুম।
আমি অতি সাধারন মেয়ে। কিছুতেই আমি অসাধারন হতে পারিনা।



কালবেলায় মধুচন্দ্রিমা
গতকাল অনেক রাত অবধি বসে ছিলাম একা চুপচাপ ।
আজকাল মাঝে মাঝেই কুয়াশা এসে ঢেকে দিচ্ছে মনের জানালা।
কাল রাতে কিন্তু চাঁদের আলোয় ভাসেনি আমার ঘর।
চুপচাপ বসে ছিলাম, জানি সে ভুল করে হলেও
ধোঁয়াটে জানলাটা খুলে একবার আসবে এসে ডাকবে আমায়।
বসে বসে আঙুলে কর গুনি নামতা পড়ার মতো, জ্যোতিষীর মতো রেখা চিনি,
তাঁর ছোঁয়ায় ছোঁয়া চিনি, আর বাকি যা কিছু আনাগোনা করে মনে মনে ,
সব নিয়েই অপেক্ষা অপেক্ষা আর শুধুই অপেক্ষা।
আর চলে সময়ের সাথে প্রতিটা ক্ষনে আমার তর্ক-দ্বন্দ্ব।
আস্তে আস্তে নিস্তব্ধতা ভেঙে,অভিমানের দরজা ভেঙে তুমি এলে...
অতি ধীরে, চিরচেনা, বহুদূরে ভেসে যাওয়া সুর টেনে,
একে একে বলে গেলে সেই চেনা কথাগুলো।
মাঝে মাঝে এমন রাত আসে, যখন রাতের আকাশে একলা চাঁদের পাশে
লক্ষ কোটি চাঁদ জ্বলে ওঠে আর সেসব রাত গতকালও এসেছিলো।
হিমেল হাওয়াতে তোমার রাজপথ আঁকা।
আমিও শুধুমাত্র তোমাকেই দিয়েছি আমার ন্যায্য দাবী রাখার।
প্রতিক্ষণের আমার এ অভিসার, চির সখা আমার,
রেখেছি যত্নে তোমার অমোঘ ঈশ্বরীয় প্রেম।
তুমি জানো যে তোমাতেই আমি, আর আমি জানি যে আমাতেই তুমি




বন্ধ ঘরের কাব্য
দেখেছো কখনও শব্দের চোখে ফোঁটা ফোঁটা জল জমতে?
এক ফোঁটা-দু ফোঁটা -তিন ফোঁটা,
টুপ টুপ করে ঝরে পড়তে চিবুক বেয়ে,
আঙুল ছুঁয়ে খাতার পাতায় মনের খাতায়?
কালবৈশাখী ঝড়ে যখন ধুলো ওড়ে,
তখন কেন চোখ ,মুখ রুমালে ঢাকো?
সাহস করে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিয়ে দেখো একবার,
প্রশান্ত মহাসাগরের অজানা দ্বীপের গন্ধ এসে ভিড়বে আঙিনায়।
কখনো কখনো খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখো।
দেখবে তোমার ছাদের কার্নিশে পায়রাদের বকম বকম
কতগল্প শোনাবে তারা তোমায় গত রাতের মেঘপরীদের।
তাদের ডানায় করে আনবে দেখো তোমার জন্য রাত শিশিরের জল।
বন্ধ ঘরে কখনো নিজের সাথে গল্প করে দেখো।
নিজের ভুল গুলোকে অকপটে স্বীকার করে দেখো।
ভালবাসার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণ মেলে ধরে দেখো
দেখবে নতুন করে ভালোবাসাকে ভালোবেসে ফেলবে।
মনখারাপের দিনগুলোতে নিঃশব্দে কখনও বালিশে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছো ?
একা একা গভীর রাতে ছাদে হেঁটেছ কখন?
দেখবে কত তাড়াতাড়ি সব কিছু আলোকময় হয়ে ওঠে।
কত তাড়াতাড়ি নিজেকে আবিষ্কার করতে পারবে নতুন করে।
মাঝে মাঝে গোধূলিবেলায় হেঁটে যেও যেকোন অজানা রাস্তা ধরে।
ছায়াদের সাথে নিয়ে আমিও হাঁটি তোমার সঙ্গে তোমার ছায়া হয়ে।
বছরের প্রথম বৃষ্টিতে ভিজেছো? ভিজে দেখো একবার,
কিংবা ছেলেবেলার মতো করে কাগজের নৌকো বানিয়ে
একটা একটা করে ভাসিয়ে দিও সেই বৃষ্টির জমা জলে।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে কবিতার কান্না শুনেছ কখন?
আজ আমার এই মনটাকে শরীর থেকে ব্যবচ্ছেদ করে দেখো
তুমি আর তুমিই থাকবে সেই ভাগাভাগিতে।
আর আমি? আমি তো আছি তোমার মন জুড়ে।
নাহয় আজ কবিতারই ব্যবচ্ছেদ করা হোক,একেবারেই নিরপেক্ষ ব্যবচ্ছেদ।


সঙ্কোচনের আগে
মাঝে মাঝে মাঝরাতে পথভুলে
পৃথিবীর নাভি ঘেঁষে ওঠে একফালি চাঁদ।
নিঃশ্বাসের ওঠানামায় দিগভুল হয়
হাওয়াদের চিরচেনা পথের।
কখনও কখনও চোখের কোনের চিকচিকে বালি
ঢেকে দেয় রাতজাগা তারাখসা জল।
ভোরও মাঝে মাঝে ক্লান্ত হয়ে ওঠে
রোদেরাও লুকোতে চায় নিজেদের ছায়ায়।
উতল নদীরা জল সেচে, মাতাল হয়ে
পাড় ভাঙে কোন শান্ত বৃদ্ধ গ্রামের।
তখনও ঘুম ভেঙে জেগে ওঠেনি শহর
মনের সংযমের বাঁধ ভেঙে ছারখার হয়।
শান্ত স্থির পায়ে ঘুরে ফেরে ইচ্ছেরা
লজ্জায় খসে যায় পৃথিবীর আঁচল।
কখনও কখনও অভিমানের গনগনে আঁচ,
ভেঙে দেয় মনের যত বে-আব্রু সঙ্কোচ।
কুয়াশার চাদরে নিজেকে আড়াল করেছে পৃথিবী
বোঝেনা কেউ, বুঝতে চায় না কেউ।
কখনো কখনো পৃথিবীও গলে পরে, ঝরে পরে
পথভোলা রাতে পৃথিবীর নাভি ঘেঁষে উঠে চাঁদ।
মাঝে মাঝে পৃথিবীও কক্ষচ্যুত হয়.....


একটি কবিতার জন্য
একটি কবিতা লিখব বলে
এক আকাশ রোদ্দুরকে সাথে নিয়েছি
ঘুম ভাঙিয়েছি সব শব্দের
ইজারা নিয়েছি যত স্বপ্নের
এঁদো পুকুর থেকে শব্দ গুলোকে তুলে
স্বপ্নের সাথে শুদ্ধ হতে দিয়েছি,
স্বপ্ন আর শব্দের ছোঁয়ায়
এঁদো পুকুর হলো পদ্মশোভিত,
স্বপ্ন গুলো হলো পদ্মগন্ধা নারী,
ঠিক তখনই শুরু হলো
তাদের অলৌকিক খেয়া পারাপার ...
আমার আর কবিতা লেখা হলোনা।



No comments:

Post a Comment