28 October 2015

বাবুল হোসেইন




যাপন ও বিবিধ ছলাকলার ভিতর ক্রমেই নিজেকে নিমজ্জিত করে ফেলি। ভিনেগারে চোবানো টাটকা সতেজ জীবন এখন আমার। সদাইপাতির ফরমালিন আর বিষ ধীরে ধীরে কাবু করে ফেলছে সমস্ত বেঁচে থাকাকে। কোনোদিন ভোরে হিমেল বাতাসের ঘ্রাণে কুয়াশা ও কবিতার রাতযাত্রা শেষে আমাকেও পেতে পারো। আমি এভাবেই আছি এখন। শিউলি কুড়ানো শৈশবে- ফুল কুড়ানো বালক। শাদা থান রক্তিম সিঁধুর চক্রাকার। আজাদ মঞ্জিল স্বপ্নের ভিতর দিব্যি রয়ে যায় বড় হতে হতে।

না ফুরানো দিনের ছবি আঁকি। তবুও ফিরিয়ে যায় দিগন্তের রঙ। সন্ধ্যামালতি একদিন ফ্রক ছেড়ে শাড়ী ধরে তার সুউচ্চ মিনারের গজিয়েছে শ্যাওলা পাতা-সবুজ সুন্দর। শিউলির ঘ্রাণ ভুলে হঠা সবুজের ঘ্রাণ কাবু করে বিকেলের দস্যু বাতাস। আর নিরঞ্জন পড়শী থেকে কেবল বন্ধুই হতে থাকে। বুকের অর্গল ভেঙে ঢুকতে থাকে আরো গহিনে। পাড়ার যাবতীয় রুপসীরা আমাদের অন্দরমহলে এসে হানা দিতে থাকে প্রতিদিন। আমরা কুড়িয়ে নেই ঝরাপাতা, মরা ডাল, হরিত ছিটেফোঁটা। নিরঞ্জন হরণ করে দস্যুতা, রমনীয় আভা। শ্রীমতি শিপ্রাকে ভালোবেসে একদিন দেহফুল দেখতে চেয়েছিলো নিরঞ্জন। শুনে, শিপ্রার স্কুলশিক্ষক বাবা জাতপাতের দোহাই দিয়ে ছোট জাতের নিরঞ্জনকে ভরা মজলিসে জুতাপেটা করেছিলেন। নিরঞ্জন, পেটানো দেহাকৃতি, পুরুষালি প্রচণ্ড, একদিন শিপ্রার লাল ফ্রক খুলে অতলে হারাতে হারাতে বলেছিলো তোর বাপ একটা বেশ্যাবাজ, এই তার প্রতিশোধ, বলিস তাকে। শিপ্রা'রা কোনোদিন আর মুখোমুখি বসেনি। এই গল্পে বরাবরই হিরোর সাজে চোখ রাঙাত নিরঞ্জন আর তার প্রচণ্ড দেমাগি মুখাবয়ব দেখে আমিও স্বপ্ন দেখতাম একদিন প্রেমিক হবো নিরঞ্জনের মত।

কোন ছবিটা মনে ধরে থাকে। পালতোলা নৌকার স্মৃতি, বাশবনে পাখিদের হানা দিয়ে শিকার করে নিতাম বকের ছানা, ঘুঘুর ছানা। অসীমানন্দে খাঁচায় পুরে নিজের অহংকার ষোলআনা দেখাতাম। আহারে সঙ্গীদল- তোরা এখন বিশ্বনাগরিক। দেশ বিদেশের যাবতীয় পাপ ও পঙ্কিলতা মাড়িয়ে স্বভূমে ফিরলে কোনোদিন আমরা মুখোমুখি বসবো ভাঙা সিন্দুকের চাবি হাতে নিয়ে। রিলভর্তি ছায়াছবি দেখবো আর কাঁদবো আর হারিয়ে যাবো সাঁকো ডিঙিয়ে অতল অতল। তোরা আসিস। আমিতো ফেরারি হয়েই আছি এইসব মনোকষ্ট আর ভালোবাসাহীনতার দায়ে। আর জলকাঁদামাখা তুমুল কৈশোর আমাদের। দেখা হোক তবে। একদিন দূরদেশে বসে সুমন লিখেছিলো অইসব না ফুরানো গল্পবেলা। ইনবক্স ঘন হওয়া কান্নাজলে নীরবতা পালন করেছিলো। লিখেছিলো একদিন তুমুল আড্ডা দিবে। আমি আড্ডাপ্রিয় নই জেনেও বলেছিলাম হবে। লিখতে যতোটা পারি বলতে অনেক কম বলে বলা হয়না চৌদ্দআনাই। তবু লিখে রাখি সেইসব বাদামী স্মৃতিগল্প- ডোরাসাপ কোনোদিন যদি তেজোদীপ্ত হয়।


বেতবনে ফুটে আছে বেতফুল। নক্ষত্রের শুভ্রআলো এসে রাঙিয়েছে চরাচর। ঘন জঙ্গলের ভিতর সাপ বেজি মাড়িয়ে তুলে আনতাম জীবনদাশের উপমা- তখনো শিখিনি অইসব যাপন তিনি নিভৃতে করে গেছেন এক শতাব্দি আগেই। আরাধ্য দেবতা হয়ে তিনি কবেই বসে আছেন আমাদের বেদিমূলে। থোকা থোকা জঙলি ফুল দেখে প্রণতি দিকে কোনোদিন বলা হল না তার খোঁপায় একজোড়া জঙলি ফুল কতোটা মোহময় করত জগ-সংসার। তার লম্বা ছেড়ে দেওয়া অলকার বনে সবুজ অরণ্য ক্রমেই ঘনকৃষ্ণ হয়ে উঠত।

---------------------------------------------------------------------------------------------

No comments:

Post a Comment