25 October 2015

মনোজিৎ কুমার দাস







ল্পগুলো আমার শোনা, তবে সবগুলোই লোক মুখ থেকে নয়। প্রত্যক্ষদর্শী, সাগরেদ কিংবা ভুক্তভোগী ভিকটিমদের কাছ থেকে শোনা। লোক মুখে শোনা গল্পও যে তা কিন্তু নয়। দুষ্কৃতির যত গোপনেই খারাপ কাজ করুক না কেন, তা এক সময় না এক সময় প্রকাশ হয়ই।
প্রথম গল্পটা যে কোন লোকের মুখ থেকে নয়, লম্পটটার এক সাংগাতের মুখ থেকে। লম্পটের সাংগাতটা এখন বার্ধক্যে উপনীত। অন্যদিকে, লম্পটটার ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগেই। তাই সাংগাতটার এখন মুখ খুলতে কোন বাঁধা  সাংগাতটা বলল, লোকটা যে লম্পট তা আমি আগে থেকেই জানতাম, তবে আমাকে সাক্ষী রেখে এর আগে কখনো সে কোন নারীকে বলাকার করে নি, কিন্তু ওই রাতে সে তা করল।

এটুকু বলে লম্পটটার সাংগাতটা থেমে  মিনিট পাঁচেক ধরে কেশে আবার বলতে শুরু করল, লম্পটটা ওই রাতে আমাকে একটা নির্জন স্থানে বসিয়ে রেখে জঘন্যতম লালসা মিটাতে যাবে আমি  ঘুনাক্ষরেও ভাবতে পারি নি। আমি একটা এঁদো ডোবার পাশে ঘন্টা খানেক বসে আছি তো আছি। ততক্ষণে জোসনা ডুবে গেছে। মশার কামড় খাচ্ছি তো খাচ্ছিই। একটু দূর থেকে মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে। এক সময় লোকটা ফিরে এসে ফিসফিস করে আমার নাম ধরে ডাকল। তার উপর আমার মনে প্রচন্ড রাগ হলেও আমি মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম না। আমি ভাবলাম, আমাকে তার সাথে নিয়ে গেলে আমি কি তার বাড়া ভাতে ভাগ বসাতাম? এক কথাটা তাকে জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হলেও বলতে পারলাম না। গোলামের পক্ষে মনিবকে  এমন কথা বলা সংগত নয়, তা আমি ভাল ভাবেই জানতাম। জোনাকির আলোয় লোকটার মুখ যতটা আমার নজরে এল তা থেকে বুঝলাম আমার মনিবের মেজাজ খুশিতে টগমগ।

লোকটা আবার থেমে কেশে নিয়ে বলতে আরম্ভ করল, কী মওকা পেয়ে মনিবের মেজাজ এত টুকু সময়ের মধ্যে ফুরফুরে হয়ে গেল! আমি তা ভাববার আগেই আমার মনিবের মুখ থেকে খৈ এর মত কথা ফুটল। তার লাম্পট্যেও কথাগুলো শুনে আমার এবার কিন্তু সত্যি সত্যিই বেজায় রাগ হল। মনে মনে ভাবলাম শয়তানটার ঘরে সুন্দরী সোমত্ত বউ থাকতে বন্ধুর অনুপস্থিতিতে তার সদ্য বিবাহিতা বউকে...আমি কিন্তু তাকে কিছু বলতে পারলাম না। লোকটার সঙ্গে আমার
কাশিতে দমবন্ধ হবার উপক্রম হওয়ায় লোকটা আবারও কথা থামাল। এবার আগের চেয়ে বেশিক্ষণ কেশে আবার বলতে শুরু করল, শয়তানটার সাংগাত হিসাবে আমি তার অনেক অপকর্মেও সঙ্গী হয়েছি। সে রাতের মত কিন্তু আগে কখন এমন ধরনের অপকর্মেও সাথী হইনি।

লোকটা এবার দম নিয়ে বলল, আমার বউটা আমাকে একরাতে সাবধান করে শয়তানটার সাথে গাটছড়া বেঁধে অপকর্ম করতে নিষেধ করে বলল আমার মাথার দিব্যি- তুমি শয়তানটার সাংগাত সেজে কোন মেয়ের সর্বনাশ করবে না। যদি তুমি কোন মেয়ে-বউ এর ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেল তবে আমাকে বিধবা হতে হবে। আমি বিধবা হলে লম্পটরা আমাকে ছিড়ে খাবে। তুমি অবশ্যই চাও না আমি বিধবা হই।

সে রাতে সেই ধর্ষিতা বউটা লম্পটটাকে কী অভিশাপ দিয়েছিল তা আমি জানি না। তবে সে সময় আমার বউটা বলা কথাগুলো আমার মনে পড়ায় আমি মনের অজান্তে লম্পটটার উদ্দেশ করে অস্ফুট স্বরে বলল - তোমার বউটা অকালে বিধবা হবে তুমি আজ রাতে যা করলে তাতে।আমার কথা তার কানে পৌছাল না। আমি আমার বউয়ের কথাগুলো তাকে স্পষ্ট কনে বলতে সাহস পেলাম না। আমার অগোচরে লম্পটটা আরো কত মেয়ে - বউয়ের ইজ্জত লুটেছে তার ইয়ত্তা নেই ভেবে লম্পটটার উপর আমার মনে এক ধরনের ঘৃণা জন্মাল। আমি তাকে অভিসম্পাত করলাম। আমার মত লোকের অভিসম্পাত ফলতে পারে তা আমি ভাবতে পারিনি। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই লম্পটটা দুরারোগ্য ক্যান্সারে মারা গেলে আমি ভাবলাম, তাকে অভিসম্পাত করা আমার ঠিক হয় নি।
 
কিছুদিন যেতে না যেতেই আমি বুঝলাম আমার বউটা কথাগুলোই ঠিক। লম্পটটা অকালে মারা যাবার পর তার যুবতী স্ত্রীকে নিয়ে অনেক ছিনিমিনি খেলা চলল তা বলাই বাহুল্য। লোকটা কথা শেষ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।




-----------------

No comments:

Post a Comment