25 October 2015

শ্যামলী চ্যাটার্জী






১.
জীবনযুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক। সংসাররূপ অমিয় সাগরে অবগাহন করিয়া ইস্তক আমি রণক্লান্ত,অবসন্ন। প্রতিটি মুহূর্তেই আমার নিকট বর্তমানযেন দুর্বিসহ। অভাগীর স্বর্গেরক্ষুদ্র বালকটির ন্যায় আমার এই সংক্ষিপ্ত সংসার সংগ্রামে বড়ই তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করিলাম।

সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু অনলে পুড়িয়া গেল।
অমিয় সাগরে সিনান করিতে সকলি গরল ভেল॥
সংসারের পঙ্কিল আবর্তে যতই জড়াইতেছি প্রেম প্রীতির প্রতি মোহ ততই তিরোহিত হইতেছে। মূর্খ ও ক্ষুদ্র প্রাণী গণ বিস্মৃত হইয়া যাই বন্ধন অনিত্য, কর্মই অবিনশ্বর। কবি হেমচন্দ্র যথার্থই বলিয়াছেন-
দারা পুত্র পরিবার তুমি কার, কে তোমার"
এই অমর বানী যেই রূপে একজন পুরুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সেই রূপে নারীর ক্ষেত্রেও নিয়মের ব্যতিরেক না ঘটাই স্বাভাবিক। পুরুষোত্তম বলিয়াছেন, “পিতার জন্য, সত্যের জন্য দুঃখ ভোগ করিও পরম শান্তির অধিকারী হইবে । কিন্তু আমার এ দুঃখ পিতার তরেও নহে, সত্যের তরেও অদ্য আর নহে। তবে সেই দুর্দশা ভোগ উপরন্তু কি প্রকারে শান্তির অধিকারিণী হইব? দীর্ঘদিন ধরিয়া ভোগ করিতেছি ,মৌখিক প্রতিবাদও করিয়াছি ফললাভ হয় নাই। বুঝিয়াছি এই উন্মাদনা ভালোবাসা নহে ভালোবাসার অপলাপ মাত্র। তাহা দিয়া আর যাহাই হউক সুস্থ সমাজ গঠিত হইতে পারেনা। হয়ত ভাবিতে পারেন পূর্বের অতি সাধারণ রমণী অদ্য স্বৈরাচারিণী। সত্তা একটিই, বিভিন্ন রূপান্তর। এত ঘৃণা , এত উপেক্ষা লইয়া মানুষ বাঁচে না। চরম সত্য হইল এই মায়ার বাঁধন হইতে সে নিষ্কৃতি চাহে। ভুল সে বহু প্রকারে শোধন করিবার প্রয়াস করিয়াছে কিন্তু মাত্রা এতটাই উর্ধ্বে যে মার্জনা করিবার কোন অবকাশ নাই ।

২.
একটি আশা বৃক্ষের বীজ বপন করিয়াছিলাম। অঙ্কুরিত রূপ হইতে ধীরে ধীরে চারা হইল। চেতনা বোধ রূপ জল প্রদান উপরন্তু অদ্য উহা মহীরুহে রূপান্তরিত। শাখা-প্রশাখার বিস্তার ঘটাইয়া দিব্য বাঁচিয়া বর্তিয়া আছে। ব্যাথা, দুঃখ, কামনা, বাসনা, ক্রোধ, সংযম, আনন্দ, হৃদয়হীনতা, আবেগ, হিংসা,প্রণয়, প্রভৃতি সুদৃশ্য ফল গুলির বিকাশে বৃক্ষ মনলোভা। ক্রমে সুমিষ্ট পরিপক্ক ফল তাহাদের সুবাস ছড়াইয়া পথিক হৃদয় হরণ করিতেছে। সকলের ভাগ্য প্রসন্ন নহে তাই যে কটিতে পচন ধরে সেই গুলিই তাহাদের অদৃষ্টে জুটিয়া থাকে। উত্তম ফল গুলি অবশ্যই খারাপ গুলানের সহিত থাকিয়া একপ্রকার নষ্টই হইয়া যায়। তখন সেগুলিও কাহারো গ্রহণের যোগ্য রহে না। একক্ষণে সমস্যা হইল এই দুই জাতির ফল পৃথকীকরণ হইবে কি প্রকারে? ইহা ভাবিয়া হই সারা।


৩.
তুমি আর আমায় কিসের তরে শঙ্কা জাগাইবার প্রচেষ্টায় অধীর? ঈশ্বর প্রদত্ত সকল আশীষ আমি অবহেলায় করিয়াছি উপেক্ষা, তাই তো আজি বলিতে পারি না...যদি কণ্ঠ দাও আমি তোমার গাহি গান । প্রত্যহ প্রভাতেই নূতন দিনের সূত্রপাত কে নিঃশেষে সমাপ্ত করিয়া থাকি স্বয়ং নিজ হস্তে। তুমি কি শঙ্কা জাগাইবে? খেলা ভাঙিবার স্বরলিপি তো আমারই রচিত, ক্ষুদ্র অথবা বৃহ সকল আশায় নিত্য নিষ্পেষিত হইতেছে আমারই গোচরে। অহরহ যে সৃষ্টি তাহার এক লহমায় বিনাশ ঘটাইতে আমার তুল্য অপারগ আর কে? সমুদয় শুভের সূচনার পূর্বেই তাহার সমাপন ঘটাইবার মত রঙ্গরস তো আমিই দেখাইয়া থাকি। দেখ এই সত্য আমি প্রকাশ করিতেছি , বুঝিয়া লইবার দায়ভার আপনি লহ। তথাপি অনুপ্রেরণা যদি বলিতে চাহ...তাহার রসদ টুকুই অন্বেষণের নিমিত্ত আমি ঘূর্ণাবর্ত স্বরূপ ছুটিয়া বেড়াইতে থাকি তোমারই চারিদিকে....অহরহ।

No comments:

Post a Comment