হাটে-ঘাটে, বনে-জঙ্গলে, নদীর বাঁকে বাঁকে,
জনে জনে জিজ্ঞাসিলাম কেউ দেখেছে কি তাকে!
শুনেছি স্বাধীনতার বাস ঐ কুঁড়েঘরে।
যেখানে শিশুর কলকাকলির সাথে কন্ঠ মিলায়,
পাখিরা রোজ ভোরে।
গিয়েছিলাম সেখানে
অবুঝ শিশুরা উল্টো জানতে চেয়েছে, স্বাধীনতা কি?
একটু দূরেই শুয়ে ছিলেন রুগ্ন কায়ার ফোকলা দাদু,
মাড়ি দিয়ে চিবুচ্ছিলেন পান অবিরত।
স্বাধীনতা! সে তো এনেছিলাম সেই একাত্তরে,
যা হারিয়ে গেছে পথের বাঁকে।
খুঁজেছি সেখানেও
পথেরা বলে-
স্বাধীনতা! তাতো পথিকের কাছে,
যে বানিয়েছে আমায়।
বটের ছাঁয়ায় এলিয়ে তনু, পথিক বলে-
স্বাধীনতা, সেতো পরশমণি। আমার কাছে নেই।
ঘাটে প্রত্যহ স্নানে যাওয়া বউদির কাছে স্বাধীনতা।
আঁকাবাঁকা পথে ঘাটে গিয়ে, জিজ্ঞাসিলাম
বউদিকে-
দেখেছো কি স্বাধীনতাকে?
দু হাত লম্বা ঘোমটা টেনে বউদি শুধায়,
স্বাধীনতা! সেকি কোনো কালে ছিলো, নাকি হবে কোনো কালে!
জোড়ালো কণ্ঠের গান শুনে ছুটে গিয়েছিনু মাঝির কাছে,
বুকে জমা আক্ষেপ নিয়ে মাঝি আমায় বলে-
স্বাধীনতাকে তো সেই কবেই রেখেছি বন্ধক, মহাজনের কাছে।
মহাজনের কাছেই তাকে পাবে তুমি খুঁজে।
ঘাটের বাজারে টুল পেতে বসা মহাজন রেগে রেগে বলেছে-
মিছে শুধিয়েছে মাঝি ব্যাটা
স্বাধীনতা তো মুয়াজ্জিনের কাছে বন্দি,
তাকে ছাড়ানোর সাধ্য কি আমার!
আজানের মধুর সুরে হারিয়েছিলাম প্রশ্ন,
জিজ্ঞাসিলাম যখন তাকে,
মুয়াজ্জিন সপাটে বললে- এ কেমন অপবাদ!
স্বাধীনতা তো সম্পদ শহুরেদের।
তাকে আমি বন্দি বানাবো কিরূপে!
ব্যস্ততার ভীড়ে, শহরের রাজপথে,
খুঁজেছি স্বাধীনতাকে।
খুঁজেছি তাকে বস্তির ছেলের ডাংগুলিতে,
ডাংগুলিরা নাকি এখন পড়ে থাকে নর্দমার জলে।
এক বৃদ্ধার কাছে জানতে চেয়েছিলাম- তাদের ওখানে লুকিয়েছে কী?
আক্রোশ চোখে, সে জিজ্ঞাসে আমায়,
খাবার নিয়ে হাহাকার যে ভবে,
স্বাধীনতা দিয়ে সেখানে কি হবে!
উত্তরের খোঁজে গিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন!
বড় বেকায়দায়!
মোড়ে বসা ভিক্ষুকের পাশে দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ,
সুযোগ পেয়ে তাকে শুধোতেই,
ধমকে প্রশ্ন সে করে আমায়,
ফকিরের ধন হয় কি করে স্বাধীনতা?
সেতো থাকে আগুন ঝরা মিছিলের স্লোগানে।
টগবগে তরুণের মিছিলে জিজ্ঞাসিলাম-
ক্রুদ্ধ নজরে তাকিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে সে ও,
কবিদের লেখা কয়েকটি লাইন আওড়াতে হয় যেখানে,
কি করে স্বধীনতাকে খুঁজে পাবে সেখানে!
বিজ্ঞ আর কবি সকলেরে জিজ্ঞাসিলাম,
আফসোস মাখানো কন্ঠে কবি বলে-
কত কবিতারা আঁস্তাকুড়ে পঁচেছে, রেখেছো কি তার খবর!
স্বাধীনতা! সে ভদ্র সমাজের হয় কি করে!
সেতো মিলিয়ে যায় নাইট ক্লাবের অন্ধকারে।
খুঁজেছি সেখানেও, পাইনি আমি তাকে।
ফিরেছি আবার ব্যস্ত ভীড়ের পথে,
রাস্তার একপাশে গাড়ি নড়েনা, অন্যপাশ খালি
দুপাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলো মানুষ,
জিজ্ঞাসিলাম তাদের, স্বাধীনতা কি এখানে
এসেছে?
বলেছে তারা আঙ্গুল উঁচু করে,
ঐতো স্বাধীনতা, যাচ্ছে মন্ত্রীর গাড়ি
চড়ে।
অতি কষ্টে, শত বাঁধা পেড়িয়ে, গিয়েছিলাম মন্ত্রীর কাছে।
গলা নিচু করে চুপিসারে বলে-
স্বাধীনতা বুঝি এদেশের!
তবে কেনো পাঠিয়েছি ছেলেকে বিদেশে!
খুঁজে খুঁজে হয়রান,
তবু মেলানি স্বাধীনতার সন্ধান।
বেলা শেষে ক্লান্ত শরীরে ফিরেছি বাড়ি,
ভঙ্গুর প্রায় দেহখানা এলিয়েছি খাটে,
চোখ জোড়া আটকে গেছে দেয়ালে ঝুলানো ফ্রেমটাতে,
শহীদ বাবার ছবিখানা লেপ্টে আছে যাতে।
চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে তাঁর!
বুঝে ফেলেছে সব!
যে কারণে নিজ প্রাণ উৎসর্গ করেছিলো,
সে আর তাঁর ভাইয়েরা।
নাই, নাই, নাই। সে স্বাধীনতা নাই।
বুভুক্ষু শকুনেরা যেমন খেয়েছে তাদের লাশ,
তেমনি করে স্বাধীনতাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে মানুষ।
নাই, নাই, নাই, স্বাধীনতা নাই।।
No comments:
Post a Comment