“জন্মের প্রথম গ্রন্থ নিয়ে আসে অলিখিত পাতা,
দিনে দিনে পূর্ণ হয় বাণীতে;
দিন শেষে পরিস্ফুট হয় ছবি
নিজেকে চিনিতে পারে
রূপকার নিজের সাক্ষরে
তারপর মুছে ফেলে বর্ণ আর রেখা তার
উদাসীন চিত্রকর কালো কালি দিয়ে”
দিনে দিনে পূর্ণ হয় বাণীতে;
দিন শেষে পরিস্ফুট হয় ছবি
নিজেকে চিনিতে পারে
রূপকার নিজের সাক্ষরে
তারপর মুছে ফেলে বর্ণ আর রেখা তার
উদাসীন চিত্রকর কালো কালি দিয়ে”
অজস্র ঘাত- প্রতিঘাত আর সংঘাতে জর্জরিত জীবন সম্পর্কে সহজতম বিশ্লেষণ এই কয়েকটি ছত্রে অবলীলায় প্রস্ফুটিত করতে পারেন যিনি, তিনি আর কেউ নন আমার, আপনার, তাবৎ বাঙালীর প্রাণের মানুষ, বিশ্ববন্দীত যুগপুরুষ রবীন্দ্রনাথ। জন্ম-মৃত্যুর আপেক্ষিকতাকে অগ্রাহ্য করলেও বলতেই হয় আজ থেকে ১৫৫ বৎসর কাল পূর্বে জোড়াসাঁকোর এক সম্ভ্রান্ত সংস্কৃতিমনস্ক পরিমন্ডলে আবির্ভূত হয়েছিলেন এই প্রবাদপ্রতিম মহাপুরুষ, বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক, বাঙালীর আঁধার ঘরের ধ্রুবতারা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
শৈশবেই মাতৃবিয়োগ, ভৃত্যদের কড়াশাসনে অতিবাহিত কৈশোর, প্রথাগত শিক্ষার বিরুদ্ধে তীব্র বিতৃষ্ণা, উচ্চশিক্ষা অসমাপ্ত রেখে বিদেশ থেকে প্রত্যাবর্তন ও পৈতৃক জমিদারীর দায়ীত্ব গ্রহণ প্রভৃতি বাহ্যিক ঘটনার ঘনঘটার সমান্তরালে ক্রমশ বিকশিত হতে থাকে এক আলোকসামান্য সৃষ্টি ক্ষমতার স্ফটিকস্বচ্ছ বিচ্ছুরণ।
তাঁর সৃষ্টিকর্মকে কোন নির্দিষ্ট পরিমাপে রাখা অসম্ভব। সেক্ষেত্রে তাঁরই কথার রেশ রেখে বলতে হয় "ভেবে পাইনে কি করিব নিবেদন" তিনি একাধারে কবি, সাহিত্যিক, ঔপনাস্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, নাট্যকার, গীতিকার, চিত্রকর তথা শিক্ষাবিদ হিসাবে অনায়াস বিচরণ করতে পারতেন। বাঙালীর সারস্বত জীবনের প্রধান ভরসা রবীন্দ্রনাথ। চারপাশের কলরব মুখর যন্ত্রণা, কালিমা মুছে যায় তাঁর কবিতায়। তাঁর জীবন প্রবাহ শুধু মাত্র সাহিত্যের আঙিনায় সীমাবদ্ধ ছিল না। অজস্র ব্যক্তিগত শোকেও যিনি শুভ্রতুষার গিরিশিখরের ন্যায় শান্ত সমাহিত অটল থেকেছেন পরাধীন দেশবাসীর দেশবাসীর লাঞ্ছনাতে তিনিই সফেন সমুদ্রের মত গর্জে উঠেছেন।
তিনি বাঁচতে চেয়েছেন বিদগ্ধ
পাঠকের মনে, কারণ শিল্পীর মৃত্যু নেই । তিনি জাগরুক তাঁর সৃষ্টিতে, তাঁর তুলির প্রতিটি আঁচড়ে, কবিতার ছত্রে ছত্রে,
গানের সুরে, রবীন্দ্রনাথ তো ভারতের
মেঘমন্দ্রিত প্রভাত। তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী বীর। তাই বাংলা সাহিত্যের মধ্যগগনে, বাঙালীর চিত্তে তিনি চির উজাগর।সেই মধ্যগগনের সূর্যকে সাক্ষী রেখে অতীত
বর্তমান-ভবিষ্যৎ হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলেছে- ওপারে রবীন্দ্রনাথ। এখন আর গুঞ্জনে
নয় মুক্ত উদাত্ত কন্ঠে গাইতে হবে
"ওই মহামানব আসে
দিকে দিকে রোমাঞ্চিত লাগে,
মর্ত ধূলির ঘাসে ঘাসে
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ
সরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক,
এল মহাজন্মের লগ্ন
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়েগেল ভগ্ন।
উদয় শিখরে বাজে মাভৈঃ মাভৈঃ
নবজীবনের আশ্বাসে
জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয়
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে"।
দিকে দিকে রোমাঞ্চিত লাগে,
মর্ত ধূলির ঘাসে ঘাসে
সুরলোকে বেজে ওঠে শঙ্খ
সরলোকে বাজে জয়ডঙ্ক,
এল মহাজন্মের লগ্ন
আজি অমারাত্রির দুর্গতোরণ যত
ধূলিতলে হয়েগেল ভগ্ন।
উদয় শিখরে বাজে মাভৈঃ মাভৈঃ
নবজীবনের আশ্বাসে
জয় জয় জয় রে মানব-অভ্যুদয়
মন্দ্রি উঠিল মহাকাশে"।
No comments:
Post a Comment