17 May 2016

চন্দনকৃষ্ণ পাল



  

সম্পর্ক
আমাদের সেতু ছিলোতো সবুজ, গাঢ়-
সবাই তাকাতো, যখন হাঁটতাম ধূসর পাহাড়ের পথে
সূর্যাস্তের পূর্বে, তামাবিল রোড হতো মধুময়।

আর বাঁশঝাড়ে পাখিদের কাকলীতে মিশে যেতো
সব ধূয়ো বিকেলের
তোমার দাঁতের ঝিলিক দেখতে দেখতে
সন্ধ্যে নেমে এলে আবার ফিরাযাত্রা।

খুব পুরনো হলো কবে?
কেউই জানতে পারিনি,
ভেঙ্গে পড়া সেতু দেখে মনে হলো
তুমি এখন আর আকাশ দেখো না।

 

সেতু
স্থায়ী সেতু আর হলো কই?

বর্ষার আগেই পুরনো বাঁশটা পাল্টাই
তোমরা হাততালি দাও
আমি ভাবি এই বর্ষাটা কাটুক
আগামী শীতেই...
___
এভাবে সময় করেছি পার
কতো নক্ষত্রের পতন হলো এই লোকালয়ে
কতো পঞ্চমীর চাঁদ পূর্ণিমা থেকে
         অমাবস্যায় পথ হারালো...
___
স্থায়ী সেতুর স্বপ্ন ফিকে হতে হতে
এক সময় দিগন্তের মেঘ হবে
তারপর বৃষ্টি আমার স্বপ্ন ভাসতে ভাসতে
খাল-বিল-নদী হয়ে বিলীন হবে
              সমুদ্রের লোনা জলে...
___
এই ভূখন্ডে একটি সেতুর ভবিতব্য এইতো!



কুয়াকাটা
এখানে সীগাল নেই
ফাতরার বনে চরে কাঁকড়ার দল
পদশব্দ নিকটবর্তী হলে
দ্রুতই হারিয়ে যায় করে কোন ছল
বাতাসের ঝাপটার প্রতিবাদে
ফেটে পড়ে নারকেল বন
এখানের মাথিনেরা বিষন্ন
কি জানি কি কারণে হারিয়েছে মন...

প্রাচীন নৌকোর জেগে ওঠা
কার স্মৃতি জাগিয়ে দেয় এই
দীর্ঘ উপকূলে
মিশ্রি পাড়ার বুদ্ধ কি বাণীতে
আকুলতা এনে দেন এই মর্মমূলে?
কি জানি কি বলে যায়
বীচে আসা তীব্র এই ঢেউ
ঢেউ এর ভাষা আজ পড়েছো কি
                 আগন্তুক কেউ?

আমি একা হেঁটে যাই
পূর্ব থেকে পশ্চিমে, সূর্যাস্তের পথে
উদয় থেকে হেঁটে ক্লান্ত পদে
বিপন্ন, ব্যর্থ মনোরথে
চোখ তুলে তাকায়না পৃথিবীর
অণু পরমাণু
হেঁটেই চলেছি শুধু
হতেতো পারিনি আজো স্থির, স্থানু।




ভোরে, জানালায়...
খুব কি প্রয়োজন ছিলো এই ভোরে
জানালায় দিব্যি ফুটে থাকা?

ঝড়ো হাওয়ার সাথে সংকেত দিয়েছি কতোই
একবারও নামালেনা দুচোখের পাতা
আমি উড়ে যাই, উড়ে উড়ে যাই
নীল ডুমুর থেকে কচিখালী,
আমি হরিণ শাবক হই
যদিবা তোমার দুচোখের পলকটা পড়ে
                 এই অপূর্ব সকালে।

সারা সকাল জুড়ে ফুটে থাকো
জানালায়, গ্রীলে
কতো নীল ওড়না উড়তে উড়তে
আজ মেঘ হয়ে গেলো
তারপর ভাসতে ভাসতে চেরাপুঞ্জি পাহাড়ে...

আমি বসুন্ধরা থেকে ধূধূ বালিচর হয়ে
বাতাসের নোনা স্বাদ মাখতে মাখতে আবার
ঢেউ এর কাছাকাছি হই
পা রাখি তীব্র লোনা জলে
সব চেষ্টা জলের সাথী হলো আজ
তারপরও দিব্যি দুচোখে আঁকে ঝর্ণাধারা।
আমি ভেসে যাই,
ভেসে যেতে থাকি নিরন্তর...




মেঘলা সকাল কিংবা তিনশ ফুট রাস্তার একাকীত্ব
সকালের মেঘলা আলো গায়ে মেখে
সরু ছাদে হাঁটাহাঁটি
অথচ পাশেই তিনশ ফুট
হাঁটার সব আয়োজন
আমিতো মানতে পারিনা এই সরু ছাদ
মানতে পারিনা এই তীব্র পতন
তাহলে কি কবরস্থানের হাওয়া
আপনার মেধা ও মননে জুড়ে থাকে?
এক পথে চলার জেদ-
বৃষ্টিকণা ঝরে ঝরে কতো কথা বলে গেলো
কই কিছুতো ফেরাতে পারেনি এই পথে...

এই মেঘলা আলোতে
তিনশ ফুট পথ
তীব্র আবেগে কাঁদে একা।



No comments:

Post a Comment