বন্ধুর জন্য এলিজি
তোকে খুন করতে পারিনি বলে এক একটা
দিন
ইচ্ছে জাগে আচমকা উপর্যুপরি আঘাতের
পর আঘাতে
নিজেকে থ্যাতলে ফেলি। উথাল-পাথাল জোছনায়
তোর ওই নির্লিপ্ত চোখে অত কবিত্ব
আমি
মানতে পারিনা। হ্যাঁ, এটা জানি যে ঈর্ষারা চিরকাল
নিম্নগামী, যদিও সাগর তীরে বসে থাকা তোকে
বাল্মীকির চাইতেও বেশী ঋষি মনে
হয়েছিল বলে
রত্নাকরের প্রথম জীবনের প্রেমে
পড়েছিলাম।
আজ এই মুহূর্তে সিঁড়ির কোনে
হাতের চেটোর উল্টো-পিঠে কপাল ঘষছি তোর
অপেক্ষায়। ওই প্রশ্নের
উত্তর আমার চাই, কবিতা
লিখতে দেখে
“এসব পুতুপুতু শব্দে কবিতা
হবে থোরাই। কবি হবে
পাহাড়ি শিকারির মতো, গাছের ওপর ঘাপটি মেরে
শুয়োরের অপেক্ষায়, সময় হলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে
গেঁথে দেবে শব্দের বল্লম ঠিক পাঁজর
বরাবর। ফিনকি
দিয়ে ছুটে আসবে লাল রক্ত, তক্ষুনি মরবে না
কিন্তু, হয়ে যাবে টালমাটাল। জেনে
রাখ, পাঞ্জাবীর
আস্তিনে কবিতা থাকেনা, এই দাড়ি, গোঁফ, নিকোটিনে
ভরা আকাঙ্ক্ষার কনসেপশনে, মাথার ভিতর খেলে যাওয়া
ব্যালাডের মত অপ্রেমের নোট, বান্ধব-সংলগ্ন কিছু বিলাপের
আর্তনাদ, সমস্ত মিলিয়ে তুই রেল ষ্টেশনের ওয়েটিং রুমে
মানচিত্রের অভাবে কেবল বোকা বোকা
এক বিহ্বল পর্যটক”
- এই সব ভুল-ভাল বকতে বকতে সেই স্টেশনের
প্লাটফর্মে রাতের অন্তিম ট্রেনে
চড়ে আমায় ফেলে
পালিয়ে গেলি। আর এখনো
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তেমন
একটা কবিতা - রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ আর বিনয় যেটা
লিখবার কথা ভেবেছিলেন বহুবার, তবে সময় কিংবা
অন্য কোন কারণে লেখা হয়ে ওঠেনি
এ পর্যন্ত...
এবং নার্সিসাস
বিছানার উল্টো দিকের রিডিং টেবিলে
বসে
পা দুলিয়ে দুলিয়ে কথাগুলো ছুঁড়ে
দিল; চোখ খুলে
আধো আলোতে তাকে চিনতে তেমন সমস্যা
হয়নি,
অনেকটা আমারই মতন বিহ্বল দৃষ্টি। বললাম,
তো, এখানে কি মনে করে? সে হাসল, আর
আমি
তার কান্নার মত হাসি দেখে খানিক
চমকে গেলাম।
এই চমকে যাওয়া সে তারিয়ে তারিয়ে
দেখল
আর বেশ কিছুক্ষণ নীরব থাকবার পর
অনেকটা
গোঙ্গানির মত স্বরে বলল, আমি দুঃখিত, এই বিশ্ব
ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত কবির কাছে। তার
উচ্চারণের মধ্যে
এমন কিছু একটা ছিল, যা আমাকে কিছু বলতে
বাঁধা দিচ্ছিল, কেবল শুনতে লাগলাম –
শোন, তোমরা প্লিজ জল থেকে মুখ তোলো, নইলে
নির্ঘাত ডুবে যাবে একদিন। জেনে
রাখ নদীদেরও দুঃখ
আছে, কোন এক অজানা অভিশাপে তারা বয়ে চলে
অনর্গল আর যাবতীয় পাপ আছড়ে ফেলে
একূল অকূল।
আমি সত্যি দুঃখিত, সমস্ত কবিদের মায়ের কাছে, যাদের
বিওশিয়ার থেপসি শহর, মাতা জলপরী লিরিওপী, পিতা
নদী দেবতা সেফিসাস।
তারপর হঠাৎ ছুটে এসে হিসহিসিয়ে
বলল- হে
আমার লতানো পাতানো ভাই-বোন, সাবধান, সাবধান
চোখের অতোটা গভীরে যেও না, জল চিরকাল খলখল
মিথ্যে কথা বলে।
এখানে অস্বীকার করব না, বেশ ভয়
পেয়েছিলাম, মুহূর্তে বেড সাইড টেবল ল্যাম্প জ্বালাতে
গিয়ে জলের গেলাসটাকে ফেলে দিয়েছি, আর আলো জ্বলে
উঠবার পর দেখি কেউ কোথাও নেই, তুমুল ফাঁকা
ঘরের মেঝেতে গ্লাস ভাঙ্গা কাঁচের
টুকরোগুলোতে চোখ
পড়তেই অনেক অনেক আমরা আমাকে চারদিক
থেকে
কোরাসে বলতে শুরু করলাম -
কবিরা কবি, মানুষতো নয়। সাবধান
সাবধান বেদনারা
ধ্রুপদী, এটা মানুষ বোঝেনি, তাই মানুষ একদিন কবিদের
জলে ফেলে দেবে।
তখন কোথায় লুকোবে তুমি?
প্যারাডক্স রিলোডেড
ধরা যাক জেনে ফেলে যদি তামাম দিনের
তল্লাট
আর শিখে নিলে বৃক্ষ-পত্রের সংকেত, পাখি
তোমাকে সন্দেহ করে
তোমাকে লক্ষ্য করে
রোদ্দুরের গা ঘেঁষে ফেলে দিয়ে
যায় রাত্রির শ্লোক
গোপন-কথার মত বীজ থেকে গড়ে ওঠে নূতন
এরপর
নরকের ওমে বসে লজ্জিত, বিবেকী মানুষের মত
উড়ে আসে আরও এক ঝাঁক পাখি, হাস্যোজ্জ্বল
কোথাও কোন গ্লানি নেই
No comments:
Post a Comment