চলো, নির্লিপ্ত
হেঁটে যাই
মোহনীয় সেই গোধূলি- আমরা হাঁটছিলাম। এবড়ো-থেবড়ো আলপথে ছড়িয়ে পড়ছিল রক্তিম আলোক। চোখের পর্দায় গলিত সবুজ এবং সম্ভ্রান্ত একটি সংসারের প্রতিধ্বনির ভেতর ফুটে উঠেছিল হলুদ হাওয়া-উদ্দেশ্যহীন! তবুও কয়েক শতাব্দী হেঁটে সেইসব প্রণয়বেলা আমরা গড়িয়ে দিয়েছিলাম প্রান্তরের ঘাসে-
আমরা সাক্ষী ছিলাম ঝরে যাওয়া সময়ের; ভেবেছিলাম- হাস্যকর কোনও ভোর নিয়ে যাবে প্রস্তর যুগের ভোজসভায়!
কিংবা, নরম অন্ধকার উসকে জেনে নেবে ক্ষরিত জীবনের সমগ্র রসায়ন। ভাঁজ হওয়া বিকেলের মসৃণতা থেকে জাগিয়ে দেবে অদেখা ভুবন; পাঁজরভাঙা চিহ্নলোকও ফিরে আসা অমূলক নয়। অথচ, শেষাংশ গণনায় দেখি- দণ্ডিত পৃথিবী!
অরণ্য প্রাচীন হলে, তার ছায়াতলে, জেনেছিলাম- গড়ে ওঠে পরিবর্তিত বসতি! কথারও অলঙ্কার আছে, সময়ের মোচড়ে ধ্বনিত হতে পারে প্রত্যাশিত রাগিনী ফের; চলো, নির্লিপ্ত হেঁটে যাই- ধূলিরাঙা প্রাচীন গোধূলির পথে...
রাতকে ডেকে
বলি
গোধূলিসারস, অবিরাম উড়ে যায় ঘনসন্ধ্যার পথে-
রাতকে ডেকে বলি- অন্ধত্বের সুতো ছিড়ে প্রাচ্যের আকাশে জাগো;
কেননা, গুমোট আঁধারেগোল হয়ে আছে সময়- মৃতবৎ!
গতিশীল হতে গিয়ে- যে দেয়াল প্রলম্বিত চারিপাশে
প্রত্নযুগে রচিত সে ইতিহাস! অসংখ্য খুন বিধৌত মৌনহাসি
মূলত, স্বার্থ আর ভোগের ঝরনাধারা; কলস্বরে বাজায়-
তাপানুকুল হাওয়ার সমঝোতা!
যে অরণ্যগুহায় সমাধিস্থ সাম্প্রতিক বিবেক,
তার রংমহলজুড়েও সাপিনীপ্রেম ফোটে টগবগ,
ফণাশীর্ষে লোভনীয় স্বর্ণমণি; আর-
বাস্তুসাপের তাড়া খাওয়া ধাবমান যাত্রীরাও দেখছে,
তেঁতুলনগর দাউদাউ- পিশাচ তাড়ানোর হোমাগ্নি!
চারু, উদগীরণ মানেই আগ্নেয় লাভার বিকিরণ-
রাতকে ডেকে বলি- গুমোট ইতিহাস পুড়তে দাও...
যোগফল
সময় খুললে হাওয়ার গন্ধ ভাসে- দারুচিনি ধূপ;
অসংখ্য মীড় হাতড়িয়ে পাওয়া সুরের পাশে
তোমাকে দেখি অর্ধমৃত যোগফল, যখন উড়াল চিহ্নে-
লেগে থাকে নিদ্রিত দিনের সবটুকু বিভ্রাট!
সময়ের গেরো খুলে উঁকি দিয়ে দেখো-
বাস্তব স্বীকৃত এই মোহ তৃষ্ণার পাশেই অকৃত্রিম;
ঋতুর পাথর গড়িয়ে উজ্জ্বল হয় দিনের স্বয়ম্বর,
বিপন্ন অশোকে বাজে- নীতির বেহাগ!
সময় খুললে অসংখ্য অরণ্য- শাদা ভাতফুল;
চারু, সহস্র রঙে তবুও লীলায়িত নিজস্ব ত্রিভূজ!
আত্মকোলাজ
অরণ্য ছায়ায় ফোটা চান্দ্ররাত, মধ্যরাতে অলৌকিক হয়ে উঠলে ডাক আসে হাওয়ার; যেনবা, জ্যোৎস্নায় ভাঙছে তারও মন- কাচের মতন! হাওয়ারাত নিবিড় ঢুকে যায়, বেজে যায় অর্থহীন- জীবনের ভেতর! আকাশ দেখবে বলে কেউ কেউ দাঁড়িয়ে থাকে তবুও, যুক্তির গেরো খুলে- অবিচল; যাদের দৃষ্টির গভীরে ফুটতে থাকে অজস্র দৃশ্যভোর- যেখানে যুগপৎ লুকিয়ে থাকে সম্ভোগ ও ত্যাগের গুপ্তমর্মকথা!
আরোগ্যসদনে এসেও দাঁড়িয়ে থাকে জীবন, মৃত্যুর সুবিমল রসদ ঠেকিয়ে! অথচ ভাবে না কেউ, স্তম্ভিত হতে পারে জীবন, প্রবল আর্তনাদে যখন জেগে ওঠে জাগতিক স্মৃতিবিহ্বলতা-
সংকটবিন্দু
বিস্ময়ও মানি, জাগরণের দরোজায় খিল এঁটে যখন হেঁটে যায় ভাটির বয়স! কেউ কেউ সান্ত্বনাসূচক ইশারায় পাঠ্যতালিকায় এঁকে রাখে যুবতি চোখের নমূনা! পৃথিবী তো কলামঞ্চ- লোকনিন্দা তুড়ি বাজালেও বিপরীতে কারও কারও বেতফল চোখ, সুদূরের আহ্বান ভেঙে ঠিক খুঁজে নেবে সজ্ঞান সম্মুখ।
অরণ্য ঋতুর আঙিনায় চারকোল খনি থেকে আলোগন্ধ আসে। আমিও ঢের গজিয়ে ওঠা সবুজ, অথচ সত্য প্রস্ফুটিত এই ভূমে প্রতিদিন হারিয়ে যাচ্ছে মানুষ। চারিপাশে কেবলি ঝাণ্ডাবাহী, স্বপ্নকথা লুটে সরে সরে যায়...
অকুতোভয়, জানি আসবেই। শস্যক্ষেত্র অধিগ্রহণের আগে, নতুন তরঙ্গ ছুঁয়েছে দেখো- বৈশাখের বৃষ্টিরথ...
পুনরুত্থান
অরণ্যের উল্টো পিঠেই ধারালো আলাপন- দেখেছিলাম, ওঁৎ পেতে আছে; যখন সময় গড়িয়ে রাশি রাশি বালু অপেক্ষমাণ- জন্মান্তর এড়িয়ে এতগুলো বছর মহানন্দায়! চৈত্রের আকাশ ছুঁয়ে মেঘেরা যেতেই পারে প্রমোদ ভ্রমণে! ধরে নাও- এই অবারিত উপমহাদেশ, যেখানে আমাদের শেকড়ও খুব গভীরে প্রোথিত! এক আসমানে প্রতিফলিত আলোছায়া বনাঞ্চল আর সারিবদ্ধ মাতৃনুড়ি গড়িয়ে নামছে তৃষ্ণাজল; হেঁটে যেতে পারবে কী অতটা দূরত্ব?
নতুন স্রোতে আবারও হাসবে খরাদীর্ণ জনপদ, শুধু এই আশায় আম্রপালি ছায়ায় দাঁড়িয়ে, একবার না হয় মহানন্দার গর্জন আবিষ্কার করি!
No comments:
Post a Comment