আ ব্ল্যাক পোয়েট
ফ্রম দ্য ক্যারিবিয়ান
'আ ব্ল্যাক
পোয়েট ফ্রম দি ক্যারিবিয়ান'—
নিজের ও দেশের
আইডেনটিটি সন্ধানী
অতলান্তিক সামুদ্রিক
দুটি চোখ,
তৃণগুচ্ছের শিশির
বিন্দুর বিন্যাসের বিলাস থেকে
কৃষ্ণগহ্বরের বিপুল
গভীরতা দর্শনে সক্ষম।
আকাশের বিষণ্ণ নীল আর
সমুদ্রের গম্ভীর
গর্জন দেখে নিতে
অনুভবে তন্নতন্ন করে
গেঁথে নিতে
শুধু সেই কবিই সক্ষম
ছিলেন।
এ এক বহুমাত্রিক
চেতনার প্রকাশ!
সমুদ্রশাসিত কবি
অতলান্তিক চেতনায়
ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি
ছোট্ট দ্বীপ
সেন্ট লুসিয়ার
ক্যাস্ট্রিজ শহরে জন্মেছিলেন,
বিশ্বকে বিস্মিত করে
পেলেন নোবেল পুরস্কার,
ইংল্যান্ড আফ্রিকীয়
শিকড়ের টান
ছিঁড়েখুঁড়ে নতুন
সত্তা গড়েছিলেন,
জীবনকে দেখেছেন কত না
বিচিত্র আবহে,
তাঁর বর্ণিল চেতনার
বিস্তারের পরিধি বহুমাত্রিক।
সেই দ্বীপ সাম্রাজ্যে
ঔপনিবেশিক শাসন ছিলো ,
সৃষ্টির আখ্যানে বিরল
জাদুর একক চেতনা
গড়ে উঠেছিল ঈশ্বরের
মত স্বয়ম্ভূ এককে।
'আ
ব্ল্যাক পোয়েট ফ্রম দ্য ক্যারিবিয়ান '
অমরত্ব - আইডেন্টিটি
দিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, কলম্বাসের আবিষ্কৃত সে দেশ আমেরিকার উপনিবেশ হয়েছিল।
ইতিহাসের পরিব্রাজক
তিনি আফ্রিকা ইংল্যান্ডের শিকড় ছিঁড়ে খাঁটি ক্যারিবিয়ান!
দ্বীপজ মৃত্তিকার অতল
গভীরে শিকড়ের জাল পেতে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জেলে,বেশ্যা, ভূমি প্রভুদের
নিখুঁত
টাটকা তুলে এনেছেন
সুদক্ষ জেলের মতন।
অথবা এ যেন ইতিহাসে
মহা পরিভ্রমণ, তীর্থযাত্রা।
'ওমেরস' (Omeros) মহাকাব্যিক কবিতা
ওয়েস্ট ইণ্ডিয়ান ইতিহাস
পরিভ্রমণের
সেই মহান
তীর্থযাত্রার কবিতা,
আলোড়ন তুলেছিলো নোবেল
প্রদান কমিটিতে।
সমগ্র পৃথিবীর
বিচিত্র সংস্কৃতি যাত্রার প্রভাব আবিষ্কার
আর হালের ক্যারিবিয়ান
আইডেনটিটি গঠনে
এতে কতখানি প্রভাবিত
তারই সন্ধানী ছিলেন
ওয়ালকট।
ইতিহাসের বিবর্তন আর
ক্যারিবিয়ানদের প্রতি
সমুদ্র সমুুদ্র
ভালোবাসা কবিতার পুণ্যশ্লোক হয়ে
কবিকে আন্দোলিত
করেছিল,
কারণ তিনি জানতেন
কবিতা জীবন সাধনার
মার্গ ও মন্ত্রোচ্চারণ,
ক্যারিবিয়ানদের
উন্মত্ত সামুদ্রিক তরঙ্গের
অভিঘাত মুখর নোনা
মৃত্তিকায় শিকড় মেলে
পূর্বজ অত্যাচারী
ইংরেজ আফ্রিকানদের
ঘৃণা করেছেন নোবেলজয়ী
কৃষ্ণাঙ্গ কবি ওয়ালকট।
কবিতার শরীরে অনুরণন
কেবলই
ঐতিহাসিক বর্ণিল
ঘটনার,
নিয়ামক এরা কাব্যিক
সৃজনে।
আফ্রিকায়
পূর্বপুরুষদের ক্রীতদাসদের আক্রমণ,
ইউরোপীয় আক্রমণ নেটিভ
আমেরিকানদের, ফ্রান্সের যুদ্ধজাহাজ ব্রিটেনের ওপর—
এসব আরো
কতসব কুৎসিত
হত্যা মৃত্যু প্রচণ্ড
ধাক্কা দেয়,
ধাক্কা দেয় তাঁকে শোষণকারী উপনিবেশের পত্তন।
হায় ক্যারিবিয়া! হায়
ক্যারিবিয়ান!
দ্বীপ- সমুদ্র
সঙ্গমজাত বিচিত্র সংস্কৃতির জনগণ, ক্লিন্ন ক্লেদাক্ত পরিচিতির,
মৌলিক সত্য মিস্টিক
জাদুময়তা,
তাঁর সৃষ্টির চত্বরে
চত্বরে অভিনব অনুরণন তোলে ।
কবি আইডেনটিটির
সন্ধানী,
ক্যারিবিয়ানদের মাঝে জন্ম
আইডেনটিটি হারিয়ে গেছে তার ঘৃণ্য পরিচয়ে।
কলোনিয়াল সম্মোহনী
ঐতিহ্য ওয়েস্ট ইণ্ডিজের
আকাশে বাতাসে সমুদ্রে
মাটিতে প্রবাহিত দুরন্ত গতিতে,
ক্যারিবিয়ানদের নিখাদ
ভালোবাসাই নিয়ন্তা হলো,
ঔপনিবেশিক ইংরেজ
শঠতায় ঘৃণ্য হলো ত্যাজ্য হলো।
ওয়ালকট দ্বীপজ
জাদুবাস্তবতা থেকে
সৃষ্টির ঔদ্ধত্যে প্রতিভার
সুকঠিন প্রাবল্যে
বেরিয়ে এলেন দুরন্ত
পদে—
কারণ তিনি জানতেন
ভাষা তার প্রভু ভৃত্যের চেয়ে উচ্চে,
আর কবিতা শ্রেণী, জাতি,
অহমের বিরুদ্ধে শাণিত অস্ত্র,
এই অস্ত্রবলে
সব সীমা পেরিয়ে কবি স্বকীয় আইডেনটিটি গড়ে তুলতে সক্ষম।
কৃষ্ণকায় দুর্ধর্ষ
কবি, ডেরেক ওয়ালকট,
'আ
ব্ল্যাক পোয়েট ফ্রম দ্য ক্যারিবিয়ান ',
সমুদ্র বেষ্টিত
দ্বীপজ ক্যারিবিয়ানদের আইডেনটিটি, পরিচিতি, সংস্কৃতি,
জীবন ও যাপনের কঠোর বেদনা,
অত্যাচারিত নোনা জলের
ইতিহাস নিয়ে কবিতা লিখলেন।
নির্যাতিত সেই
আদিবাসী জনের ডায়ালেক্ট স্বচ্ছন্দে
ইংরেজি ভাষায় ব্যবহার
করে সাবলীল মহান সৃষ্টি করলেন।
ওয়ালকট বিশ্ব কবিতার
সুমহান একক স্রষ্টা জাদুকর।
তাঁকে কবিতার কোন
স্কুলের বা গোষ্ঠীর বলা যাবে না।
নোবেল বিজেতা তাঁকে
মৃদুকণ্ঠে হয়তো কেউ কেউ বলেন —
ন্যাচারালিস্টিক, এক্সপ্রেশনিস্টিক,
সুররিয়ালিস্টিক, ইমেজিস্টিক, হারমেটিক অথবা কনফেশনাল কবি, বা মেটাফিজিক্যাল
রিয়ালিস্ট।
একটা কথা কিন্তু সবার
জানা
বিশ্ব কবিতার
অবিসংবাদিত মহান জাদুকর তিনি।
কাজরী,
১৪ এপ্রিল, ২০১৭
No comments:
Post a Comment