22 August 2017

দুর্জয় আশরাফুল ইসলাম





ডর ভয় যা কিছু আমার
অনন্ত আকাশতলে তুমি কোন রহস্য রেখেছো এমন নিবিড় শাদা! আমার ঘুম সরে যায় হাওয়ার তোড়ে দূর প্রাচীর সামিয়ানার মতো কাঁপে উদ্ভাসিত আলোক যেন চমকে দিতে আসে অকস্মাৎ, যেন নক্ষত্রের শরীরে প্রথমবার যাওয়া আসা করছে বৈদ্যুতিক শক্তি, শক্তির স্ফুরণ পাথর ভেঙে পড়ে, যেন বরফ গড়াগড়ি খেলতে গিয়ে আছড়ে পড়ছে সুবিশাল বজ্রপাতের মতো শব্দ হয় বিকল্প সৃষ্টির সম্ভাবনা কি জাগছে এখানে কোথাও? আমার ঘুম ভেঙে যায় আমি চিৎকার করে উঠি, বজ্রপাতে মিলিয়ে যায় আমি দৌড়ে পালিয়ে যেতে চাই, পথ এলোমেলো রকম ঘুরপাক খায় আমি ক্লান্ত প্রাণ বসে পড়ি, যেন সব সরে যাচ্ছে কোথাও আমি তোমাকে জননীর মতো স্মরণ করি,প্রেমিকার মতো স্মরণ করি, ডর ভয় কিছু নয়, আমাকে বলে দাও সব এ কোন রহস্য লোক ঘর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে যা কিছু নাগাল, অপদেবতার ঠোঁটে ইংগিত দিচ্ছে যাই যাই!

আড়ালে যে কবি মতো
সে হাসে এলোচুল সন্ন্যাসী মতো, নির্লিপ্ত ভঙ্গিমায় দেখে পৃথিবী আরো একবার, যখন সে কথা বলে বক্তৃতাপটু প্রৌঢ় জন, আমাদের শুরু হয় দেখার পালা, অহিংসকপ্রতিমূর্তি সে, সম্মুখে দাঁড়ায়ে থাকে আশ্চর্য মতন। তার শ্বাস বলয় থেকে ঝরে পড়ে প্রজ্ঞা, শুভাশিস স্ফুরণ। আমরা তাকে দেখি, আর শান্ত নিবিড়তা আমাদে রক্লান্ত করলে সরে যাই তার থেকে, তখনো তার সহাস্যমুখ। আমরা তাকে কতটুকুই বাজানি, আড়ালে তার একলা যাপন, কবি মতো ধর্ম নিয়ে সে ঘুরে বেড়ায় অহর্নিশসঙ্গহীন বৃত্তে!


দেবতা আমাদের
তিনি হাস্যরসের দেবতা আমাদের। পৃথিবীর অনন্ত বিস্ময় নিয়ে
যতটা না ভাবিত তারচেয়ে বড়ো ভয় মানুষ কে নিয়ে।
মানুষ কেন পাথর টুকরো নয়, স্তব্ধ জড় হয়ে পড়ে থাকে না
শুধু কথা কয়, উদাত্ত আহ্বানে জড়ো করে আরো মানুষ
আর বুকে রাখে অফুরান সাহস, পাথর কে ছুঁড়ে মারে বরং
পবিত্র আলয়ের দিকে, অবাধ্যতা দেখায় একচ্ছত্র নতিস্বীকারে
সব তিনি ছেলেখেলার মতো মিটিয়ে দিতে চান রঙ্গরসে
হাস্যরসের দেবতা আমাদের, থাকেন অনেক অনেক দূর!



আড়াল-আবডাল
দৃশ্যমান শূন্যতা সমস্ত বিকেল খেলা করে গেলে আমি তার ভেতর রেখে দিই কিছু নিস্তরঙ্গ আলাপ, অসমন্বিত প্রকরণ। অর্ধস্ফুট কণ্ঠস্বর আমার জেগে উঠবার বাসনায় গেলে তাকে দেখাই সারি সারি হাওয়া কীরকম ঘনীভূত মেঘ হয়ে শূন্যেই মিলিয়ে যায়। তাদের বাষ্পীভূত উদ্ভব কে সমান্তরাল করে দেখিয়ে দিই গুঞ্জরিত আখ্যানপর্বের বেদনাজন্ম। এইসব বহুবিকেলের কথা, শস্যক্ষেতের প্রাচীর ভেদ করে পাখিদলের অভ্যুত্থানের যুগ থেকে শিশিরের ভারে ঘুম ঘুম নতজানু বৃক্ষসারি জানে এইসব ক্রিয়াদি চিরকাল চলে। আমরা তো দেখেছি ক্ষণকাল, বোধ আর বিভ্রমের যুগপৎ খেলা নিয়ে কত কত প্রাকৃতজন দেশান্তরি হয়ে গেছে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দিকে, আর অন্ধকারের বলয় থেকে ওঠে আসা কোন প্রেতাত্মাদির দাপুটে রাজ। এইসব বলতে মানা, এইসব গ্রন্থবন্দী হাহাকার মাত্র, আমরা তো চেয়েছি ছন্দ চতুর্দশী উঠোন বাড়ি, স্মৃতিবাক্স থেকে সব ঝেড়ে ফেলে একলা আনন্দ সন্ধ্যে। গল্পের আকাশ ফুঁড়ে ওঠে একটি চাঁদ একা, তাকে ঘিরে ধরেছে আনন্দ ভৈরবী... মেঘগুলো সব বহুদূরে, প্রচ্ছদপটে তুলির নিপুণ আচড় মাত্র!


উত্তরাধিকারআখ্যান
আকাশে উজ্জ্বল চাঁদ দেখে চিত্রিত হয় হিরণ্ময় চেয়ার স্মৃতিচিহ্ন
পট যথেচ্ছ ভারী, অকালে হারিয়ে যাওয়া কুয়াশা বিন্দুর মতো
ভর করে সাবলীল মনঃভঙ্গিমায়, মুহূর্তরা গড়ে তোলে স্মারক ;
জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের মতো বেদনারা আসে, ঘনীভূত করে যায়
যেন সব জল আকাশ মাটিতে, সমুদ্রগামী কোন তরঙ্গপথ করে
আমাদের নীলাভ শৈশব কে প্রদর্শিত করে হৃদয়ছেড়া সুর ধরে
আর সে চেয়ার, একাকী সমুদ্রের বিহ্বল জাহাজ ছুটে গেছে একা
উজ্জ্বল আলোর নীচে অসংখ্য ছায়াপাত রেখে কেবল দূর পথ ।
শূন্যতা বেয়নেট হন্তারকের মতো মুহুর্মুহু গুলি ছুঁড়ে মারে এমন
সমস্ত আকুতি গড়াগড়ি খায় নিশ্চিহ্নতায়, পুনর্বার জাগে বেদনায়
দেখে দূর বহুদূর ভেসে যাওয়া জাহাজ, শাদা চুল অভিভাবক -
ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে গম্ভীর দেশ, অফুরান আলোর মমতা নিয়ে



একজন কমলালেবু'র জন্য কবিতা
পৃথিবীটাকে মনে হতে থাকে কমলার উদ্যান
যেন বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ে কমলা এখানে সেখানে
একটি আনমনা বালক ভুল পথে হেঁটে গেলে মনে হয়
সেও পেয়েছে কমলার বুনন, দিশেহারা যাযাবর বেশ
আকস্মিক কম্পন আসে শরীরে, যেন কমলার বাজ
বসে পড়ি, দেখি চেনা মুখ অথচ বহুদিন পর -
আর যারা ছিলো তাদের কুশল জিজ্ঞাসায়, শুনি তারা
গেছে কমলা ভালো ফলে যে শস্যমৃত্তিকা সে দেশ
আর ভালো না থাকার সংবাদ যতো গোপন করে -
তত তারা ছড়ায়ে পড়ে কমলাগন্ধের মতো নিবৃতে।
বিশাল ভাস্বর হৃদয় ছিলো একদিন আমার -
একদিন আমিও ফলাতে চেয়েছি পৃথিবীর শস্য হৃদয়
আমিও ব্যর্থতা মেনে নিয়ে হতে চেয়েছি গোপন
পৃথিবীর প্রথম লাজুক কমলাচাষীকে অনুসরণ করে
শিকড় যত তল গেছে সেরকম কোন দেশে ,
সেখানে যেতে যেতে দেখেছি আমি, এই লুক্কায়িত বেশ
আসলে গন্ধমাদল, কেননা লুকোনোটা যাচ্ছেতাই
শরীরে ধরেছি যখন এমনতর ফল, কমলালেবু হায়!



No comments:

Post a Comment