এই আসমান, অসমান, মেঘাবৃত, মেঘালয়ের
কাছাকাছি, তোমাকে দেখি না আর। আছো সুখে, জানি,
সুখ, প্রকৃতপক্ষে তোমাকেও কাবু করে ফেলে। বিকেলের ঘুড়ি আঁকা ফুল কিংবা ফুল আঁকা ঘুড়ি
ভেবে আকাশের দিকে যাই। বালকবেলা, স্মৃতিঘোড়া। ফালি ফালি চাঁদ। জানলায় লটকে থাকা। আর নদীর গন্ধে আকুল। আমিও জানি, আরো কিছু রাত্রি হোক, রাত্রি হোক।
আমারো ছিলো রাজ্যপাট, ঘোড়সওয়ার, ছিলো একদা মাহুত হবার তীব্র তীক্ষ্ণ ইচ্ছে। আর হলো কই, জগৎ সংসার খেয়ে নিলো সব। ভালোবাসা, ক্ষুধার্ত বাঘিনীর চেয়েও হিংস্র। সব খেলো। বস্তুত, মানুষের কঙ্কাল বয়ে নেবার জন্যই মানুষজন্ম। কে কার বয়ে যায় সেটাই জানি না শুধু।
মলি। সেই গেলো। তার সোনার সংসার।
তার সুখ কাড়ি কাড়ি। তাকে, একদা, খুব ভালোবেসে আমি নষ্টমানুষ, ফুলের ঘ্রাণে মোহিত না
হওয়া, সুন্দরে পাশে নিজেকে অচ্ছুৎ ভাবা, মানবিপ্রেমের বিতৃষ্ণা, এইসব আমাকে শেষ করে
দিয়ে গেলো। সংসার হলো না বলে নিজেকে রাজা ভাবতে পারি এখনো, মাতাল হতে পারি, ভদ্রপল্লিতে
ঈশ্বরের সঙ্গে তাস পিটিয়ে দুপাত্তর গিলে নিজের ব্রহ্মবিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে- আহা,
এই জন্ম তুমি দিলে আমায়। ঋণী আমি তোমার কাছে
অবশ্য ফিরে এসো চাকা বলে আমি বসে
থাকি নি কোনোদিন। নিজেকে, মলিই সরিয়ে নিয়েছে, ফিরে না আসার চির অম্লান বাসনা নিয়েই।
আমার ভালোলাগে না মানুষের জীবন। বরং, একটা ঘাস, গাছ কিংবা কলমিশাকের জীবনই ভালো, এসব
ভেবে জীবনকে রাত্রির গাঢ়তর স্বেদে ডুবিয়ে দিয়েছি দুহাতে। সুতো ছিঁড়ে যাক, বন্ধনহীন, বান্ধবহীন, সঙ্গহীন একটা জীবন আমার কাম্যই ছিলো।
কেবল, অহেতুক ঝামেলা হিশেবে, মাঝখানে এসে নামানুষ বানিয়ে গেলো। কে আর কবে মানুষ ছিলো
এই ক্ষয়াটে শরীরের একবিন্দু অহমিকার কাছে। পথ ফুরিয়ে যায়। আমিও। তুমিও। আমাদের কান্নার
দিন....
দুখু জাগানিয়া গানই আসল। পোড়ানো
বনের বাতাস শ্বাসভরে আছে। আছো তো তুমিও মলি, যেরকম ছিলো কিছু গাঢ়তম রাত্রির অবসাদ,
বিষাদ। নিখাদ। সত্যি সত্যিই আমি এক ভুল মানুষ হতে চেয়েছি। কাউকে পাওয়া না পাওয়া দিয়ে
জীবনকে নিলামে তোলা বা ডিফাইন করা বা অবহেলা করা বা এড়িয়ে যাওয়া এসবে আমার মোটেও মোহ
নেই, ছিলো না একদিনও। কেউ এলে জীবন পাল্টে যাবে, এরকম ভাবনা আসেই নি কখনো। আমি যা তাই
আমি। সত্যিটাই আমি। অতীত আমি নই। ভবিষ্যত নই।
প্রেম ঘুরে ঘুরে গেছে পায়ে পায়ে।
পায়ে পায়েই। বুকে তোলার ইচ্ছে ছিলো না। সাহস ছিলো যদিও। আমার জীবন, আমার হাতের মুঠোয়
ভরে উড়িয়ে দিয়েছি নকশিকাটা বিকেলবেলার স্রোতে। জাফরিকাটা জানলার রঙে বসে কোনদিনই ভাবি
নি আমার জীবন নষ্ট হলেই বা কী হতো আর না হলেই বা কি হবে। আসলে, ছোট ব্যাপার সব। আমাকে কেউ দেয়নি কিছু, দিয়েছিলো?
কেড়ে নিতে নয়, বিলিয়ে দিতেও না, আমার জীবন
বরঙ রাঙতা কাগজ বানিয়ে ঝুমকো ফুলের দেশে ঘুমিয়ে যাক। তুমি দেখতে এসো। আমি দিব্যি তোমাকে
চিনতে চাইবো না
No comments:
Post a Comment