22 August 2017

এমদাদুল হক তুহিন

এমদাদুল হক তুহিনের
কিশোরী সিরিজের কিছু কবিতা


কিশোরী-
কিশোরী চেয়েছিলো প্রথম চুম্বন
বলি কী আমি, প্রেমহীন চুম্বনে কামনা নেই!
তবু, আলিঙ্গনে উন্মাদ হয়ে প্রবল তাড়নায়
পায়ে পা রেখে টেনে ধরে চুল, ঠোঁটে তার যুদ্ধ
দৃষ্টিতে ফুলকি, শরীরে ফুঁসে থাকা সর্প
ফিসফিস কণ্ঠে- চুম্বন চাই, প্রথম চুম্বন
বালকের নয়, উত্তপ্ত কাঠ হয়ে উঠা দগ্ধ পুরুষের


কিশোরী-
কিশোরীর সখের ইয়াত্তা নেই 
রোজ নিয়ে যেতে হবে রেস্টুরেন্ট
স্বপ্ন তার কথা হোক পার্কের বেঞ্চিতে
একান্তে রুমে হলেও আপত্তি নেই
হাতে হাত রেখে হেঁটে যাওয়ার সময় তার বক্ষে যখন লেগে যায় কুনই
আমি সম্বিত ফিরে পায়, ব্যাপারটা অন্য রকম অনিচ্ছাকৃত নয়
স্পর্শে ছুঁয়ে যাওয়া যেন তার ইচ্ছের মধ্যেই
সিএনজি যখন ছুটে চলে ঢাবির দিকে, সে কেবল হেলে-দুলে গায়ে আসে
সময় অতিক্রান্তে এবার আমিও গায়ে পরি
রিকশায় বসে, ইচ্ছাকৃত বক্ষে বাড়িয়ে দিই হাত
বায়না ধরি চুমু খাওয়ার, সেই প্রথম চুম্বনের
কিশোরীর প্রেমের স্বপ্নে এবার ফাটল ধরে
অবজ্ঞা আর উপেক্ষা শেষে যখন কেবল মুখ্য করে তুলি দেহ
তখনও সে নাকচ না করে কেবল বাহানা ধরে ভিন্ন ইস্যুতে
সাবেক প্রেমিক আত্মহত্যা করতে চায়, আমাকে না পেলে বিষ খাবেই
বলবে, বাড়িতেও বলো না, তখন মুখ দেখাবো কী করে?
প্রতিউত্তরে আমি বলি, ভালবাসিস তারে?
উত্তরে সে, আগে বাসতাম
আমি বলি, তাহলে কেবল উপেক্ষা করে যা
এরপর মাস গেছে, বছর গেছে; নতুন ইস্যুতে কথার শেষ নেই তার
আমি স্পষ্টত বিরক্ত হলেও, বিরক্তি প্রকাশের নয়
তারপরও তার সখের ইয়াত্তা নেই
রোজ স্বপ্ন বিলাসী হৃদয়ে হেলে পড়তে চায় আদরে
এখনও স্বপ্ন দেখে চুমুতে স্রোতস্বিনী নদী হওয়ার!




কিশোরী-
কিশোরী, তোমার ঠোঁটে নেমে আসুক রাত
স্বর্গ স্পর্শের নেশা আরও গভীর হোক
হোক গভীর অন্ধকারে শুনশান নিস্তব্ধ
প্রতিধ্বনিত হয়ে কানে কানে ফিরে আসুক ফিসফিস
আঙুলে উর্বশী হোক ফসলের মাঠ
সতেজ হয়ে উঠুক মাটির প্রতিটি কনা
নেচে উঠুক, সুর তুলুক
ফল আসুক কিংবা নাই আসুক
সুখের প্রকৃত বৃষ্টিতে ফিরুক, আরেক মৌসুম
ধীরে ধীরে জেগে উঠা গুল্মের মতো
সদ্য ঢেউ উঠা সমুদ্রের মতো
উত্তাল হোক প্রতিটি নদ এবং নদী
ভেঙে যাক ফারাক্কা বাঁধ
এখানে রাত আরও গভীর হোক, নিস্তব্ধতা বাড়ুক
শরীরে কেবল শরীর নয়, হৃদয়ের হৃদয়ে প্রেম আসুক
কিশোরী, বৃষ্টিস্নাত মধ্যরাতে তোমার ঠোঁটে নেমে আসার এই সময়ে;
সহসাই না আসুক কোন প্রভাত!




কিশোরী-
কিশোরী, ওই বিকেলে হাতে হাত ছুঁয়ে যাওয়ার পর ঘটে গেছে কতো কিছু
রুপ পাল্টে নিয়েছে প্রকৃতি বর্ষার রঙে সেজেছে আঙ্গিনা
চশমার ফ্রেম পাল্টেছে কয়েকবার চুলের রংও পরিবর্তন হয়েছে তোমার
এক দুপুরে দেখি রিকশায় চালকের আসনে তুমি
সাঁকো ধরে হেঁটে গেছো দূরে, হেঁটে যাচ্ছো মেঠোপথ ধরে
প্রকৃতির সঙ্গে বদলেছে যাপন, মালতী এখন স্কুলে পড়ায়
শুনেছি দুবছরের সন্তানও আছে তার বাড়ির সম্মুখেই বিশাল পুকুর
ধানের গোলা গোয়াল ঘরও বেশ বড় শ্বশুর মশাইও মাতব্বর
মালতীর স্বামীও বেশ পুরুষ শুনেছি সেও নাকি দারুণ মানুষ 
বেশ সুখেই রেখেছে মালতীকে রোজ সকালে কপালে চুমু খায়
রাত্তিরে আদর যত্নও বেশ
বন্ধু অনিন্দ্যও প্রেম করে সুখের ঘরে
সদর দরজায় সাজিয়ে রেখেছে ফ্রেম
সে এক সুখের ছবি লোকে দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে
ছবির মতো সুন্দর না হলেও সুখ হয়েছে অনিন্দ্যর
সুখই বলবো প্রেমের বিয়ে প্রতিবন্ধকতাকে তুড়ি দিয়ে ঠোঁট ছুঁয়েছে ঠোঁট
চার দেয়ালে বন্ধ এক টুকরো সুখের ঘর হয়েছে তাদের
এতোটুকুও কম কিসে!
কিশোরী হাত ছুঁয়ে যাওয়ার পর,
অনিন্দ্যের মতো ঠোঁট ছোঁয়া হয়নি আমাদের তবে ঘটেছে অনেক
হাজার খানেক বার এসেছে ওষ্ঠ ঘুরে ফিরে ইনবক্সে নক
বিরক্তি ছাড়িয়েও হাই হ্যালো ততো দিনে জেনে গেছি কিশোরী প্রেম চায়
সেও জেনে গেছে প্রেমহীন শরীরের মিলনে সুখ নাই
অবাক বিস্ময়ে কিশোরীর রক্তলাল চাহনি
চোখ তোলে তাকানো যায়না উপরে
কিছুতেই হাত বাড়িয়ে ছোঁয়া যায়না হাত

 
কিশোরী-
কোন ঐশ্বরিক বার্তা নয়
নয় বীজ থেকে ব্রুণ হয়ে ওঠার পুরোনো সেই গল্প
কেবল চারদিকে শোনা যায়- সঙ্গম
নতুন কিংবা পুরোনো অথবা বহুল ব্যবহৃত যোনিপথ!
আর আমি এই সব শব্দের ভিড়ে
উত্তাল স্লোগান থেকে দূরে সরে
কেবল চেয়ে রই দূরের ওই স্কুটিটার দিকে
ফাল্গুনী যায়, সে আমার এক প্রাক্তন প্রেমিকা
শব্দের সঙ্গমে আমি নেই, নেই চুমু কাব্যেও
বরং আমি চেয়ে দেখি-
স্মৃতির মন্দিরে জ্বলজ্বলে সোনালী সাতশত বায়ান্ন দিনের প্রেমোখ্যান
কিশোরীর কৈশরের প্রেম, মুঠোফোনে রাতভোর ফিসফিস



No comments:

Post a Comment