সিসিটিভির
ফুটেজ!
আমি দেখেছি সিসিটিভির ফুটেজ!
আমার মতই চোখ নাক মুখ যাদের
এমন অনেক পশুর মাঝে শুনেছি
আমার বোনের বিভীষিকা মেশানো
আর্ত চীৎকার।
দেখেছি শ্বাপদের দলের কাছ
থেকে পালিয়ে যাবার জন্য কি আপ্রাণ চেষ্টা!
তবু কি পেরেছো!!
পারনি!
আমরা যে পুরুষ!
আমার চোখের জলে কিছুই
পরিবর্তিত হবে না জেনেও
আমি অঝোরে কেঁদেছি রাতভর।
আমার চোখে ঘুম নেই।
চোখ বন্ধ করলেই ভেসে উঠে
রিকশা থেকে টেনে নামিয়ে আনা
সে নারীটির স্বামীর বিস্মিত বেদনার্ত মুখটি!
যে কোলের শিশুটি নিয়ে আদিম
উল্লাসে মেতে উঠতে দেখেছে এক দল হায়েনাকে।
আমার সঙ্গে আমার বাচ্চা রয়েছে
বলার পরেও কেউ সে কথায় কর্ণপাত করেনি; লুট করেছে সম্ভ্রম।
লুট করেছে এক জীবনের সঞ্চিত
সকল!
জলের মতন যে নারী এই পৃথিবীকে
ধুয়ে মুছে রাখে
আজ তারাই ভেসে গেছে অতল জলের
গহীনে!
আমরা আর কেউ তাদের খুঁজে
পাবোনা।
ভাজ খোলা শাড়িতে
চুলে জড়ানো ফুলের গন্ধে সে আজ
শুধু মৃত্যুর গন্ধ পায়!
একজন পুরুষ হিসেবে মার্জনা
চাইনা
ক্ষমা প্রার্থনা করিনা
শুধু জানি লজ্জায় ঘৃণায় মিশে
গেছি ধুলো কণার সাথে। নারী তুমি মাড়িয়ে যাওয়া আমায়।
আমাদের সকলকে।
ধুলো হয়ে পুরো জীবন যদি তোমার পায়ের নীচেও পড়ে থাকি
তবু এই পাপ মোচন হবে না।
নারী!
আমার প্রিয় বোন!
আমাকে, আমাদের কাউকে ক্ষমা করোনা কোনদিন!
কূর্চি এবং
আগুন পাখি...
... কূর্চির মুখে মেঘের মতন
কালো চুলের নেকাব!
জলছাপ হাসি!
অক্লেশে সকল দেখে পৃথু, হাত রাখে বাজুবন্ধের রক্তকরবীতে।
কূর্চির চোখের কোনে হাসির
ঝিলিক মেলায়নি তখনো!
মেঝেতে লুটায় রুপোর নাকছাবি
কানের চাঁদ ঝুমুর।
কাছে আসে আগুন পাখী
কলমি ফুলের বক্ষবন্ধনীর
ফিতেটা ছিঁড়ে ফেলে পৃথু!
রাত শেষে
নদীর মতন বিছিয়ে দেয়া নীল
ঘাঘরায়
পুড়ে পুড়ে অশেষ অবশেষ...
কূর্চি এবং আগুন পাখি...
কূর্চি কথা!
: তুমি ফাকি দিচ্ছো! ফোন
ধরতেই কূর্চির অভিযোগ।
: কেন কি করেছি?
: কি করেছি মানে? কি করেছো ভাবো। এতো ব্যস্ত
কেন তুমি?
: আরে কি বিপদ! মানুষের কাজ
থাকতে পারে না। অফিস-তো বুঝবে না আমি বুনো জলে ভাসাভাসি খেলছি।
: আমাকে বুঝাতে এসো না।
অফিসের কাজের চাপে চিঠি লিখতে পারছো না এটা বিশ্বাস করতে বল?
: আরে হ্যাঁ।
তাইত।
: উফ! চুপ।
একদম চুপ। আর কোন কথা বলবে না।
আমি হাসি।
সাথে সাথে কূর্চির তীব্র
স্বর! হাসবে না বলছি।
ফোনের ঐ প্রান্ত থেকে সে
কিভাবে বুঝলো আমি হাসছি সেটা সেই ভালো জানে।
আমি প্রসঙ্গ পালটে বললাম, আমার কাছে চালতা বনের ছায়া নেই, ঝলমলে জ্যৈষ্ঠের রোদ
নেই।
আমার কাছে কিছু নেই!
এবার কুর্চি কিছুটা নরম স্বরে
বললো, তো কি হয়েছে?
: আমার আছে কুর্চি!! আমি থাকি
তার মাঝে।
: ইশ! ঢং!! উনি থাকে আমার
মাঝে। একটা চিঠি লেখার সময় নেই তার কাছে আর তিনি থাকেন
আমার মাঝে। ঢং এর কথা।
'তোরে রাখলেতো'
হাসতে হাসতে বলে কুর্চি।
এবার পৃথুও হাসিতে যোগ দেয়।
তারা দুজন একে অন্যকে 'তুমি' ছাড়াও 'তুই' সম্বোধনে তখনই ডাকে যখন আসমানে একটা ঝাপসা হলুদ সাদা মেশানো চাঁদ উঠে।
জারুল বনে বাতাসের ঝাপটায় সেই চাঁদ একবার বায়ে আবার ডানে দোলে।
অপার্থিব অনুভবে দুই প্রান্তের দুজন মানুষ এক সুরে গান গায়।
: কূর্চি!
: হুম।
: কবিতা শুনবে?
: হুম, শুনবো -
খোলা বাহুর রুপার বাজুবন্ধে
ডাকাত গুজে দেবে মদির রাতের চাঁদটাকে।
জোসনা ঢলে পড়া রাতের আলতো
স্পর্শে কেঁপে কেঁপে উঠবে তোমার বুকের জমিন।
একসময় পূর্ণ অধিকারে সকল
চূর্ণ করে বসন চূড়ে ফেলবে দূর তেপান্তরে।
গন্ধম ফুলটি তোমার বুকের
মাঝখানে রেখে অক্লেশে গন্ধ নেবে!
ডাকাত বোঝে না ধ্রুপদী
সৌন্দর্য!
নিরাভরণ পিঠ-জুরে মেঘের মতন
ছড়িয়ে থাকা চুলে অবাক ফুলের সুবাস সে শুষে নেবে মাতালের মতন!
মানচিত্রে অতীন্দ্রিয় সুখের
নির্যাস সে একে যাবে নিপুণ কুশলতায়।
তুমি জড়িয়ে নেবে ঘোড়দৌড়ের
পুরো শক্তি শৌর্যকে! প্রবিষ্ট বেদনায় চোখে বুজে আহবানে মত্ত রমণী তখন তুমি!
কূর্চি সব শুনে ঠোট টিপে
হেসেছিল। সেই রাতেই প্রথমবারের মতন কূর্চির বুক ছুঁয়ে
ডাকাত হয়ে উঠেছিল পুরুষটি!
No comments:
Post a Comment