22 August 2017

নাজনীন খলিল





সসেমিরা সময়
গোপন কোঠরে চুপচাপ বসে থাকি ;
আমার চারপাশে গল্প তৈরি হয়
গাছের, ছায়ার, ঝরাপাতা আর শামুকের।
অঙ্গন
তার ছায়ার ভেতরে টেনে নিয়েছে,
একটি গাছ
ডালপালাসহ পাখির ছোট্ট ঘর।
পাতার উপরে পাতা ঝরে গেলে
আধো আধো নূপুরধ্বনি বাজে ;
যেন
তবলার বোলের অপেক্ষায় তৈরি নাচের মেয়েরা
আনমনা টুকছে
অস্থির আলতো পায়ের ঘুঙুর।
বৃক্ষের এই ছায়ামগ্ন বিলাসের মাঝখানে
আমারো কী কোথাও একটুখানি প্রাপ্য ছায়া
পড়ে আছে?

গল্পপাঠে - সাদা পৃষ্ঠায় নিবন্ধ উৎসুক চোখ ;
পাপড়ির নীচে জমা
হাজার বছরের প্যাপিরাসকথা,
এক  অতল অন্ধকার
টানেল বিভ্রান্ত পথিকের গল্পটিও।

ক্যামেরায় ত্রস্ত শাটার টিপে
প্যানোরামার ভেতরের রহস্য রক্তিম  এক ছবি
তুলতে গেলে
সমস্ত চিত্রপট উধাও, ঘোরলাল মেঘের আড়ালে।
দৃশ্য কি  নিজেই নিজেকে লুকোয় আগুনের আঁচে?

জলভারে নত হয়ে আছে  সসেমিরা ঘড়ির সময়।


ইনকগনিটো
সবাই সতর্ক খেলছে। চেস, ট্রাম্পকার্ড, হাউজির খেলা।
ছায়ার অন্তর্গত ভিন্ন ছায়াবাজির খেল ;
ইন্দ্রজাল আর ছদ্মবেশের চৌকাঠে
পা আটকে যাচ্ছে বারবার।

হয়তো-
তোমার পিংক বাথটাবেরকানাভর্তি স্বচ্ছতার
আড়ালে আছে কোন প্রাণঘাতী দাহক ;
উপুড় অডি কোলনের শিশি ঢাললেই
রুদ্ধ হবেনা তার জ্বলন স্বভাব।
বিপরীতে -
গায়ে ভীতিকর রোঁয়া ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে
ভয় দেখাচ্ছে যে হত কুৎসিত শুঁয়াপোকা ;
সে-ও একদিন ঠিক মধুবর্ণী প্রজাপতি হবে।

কোনটা যে কার আসল রূপ!
কে যে কোন আড়ালে লুকোনো!

কখনওবা আবরণও মনোহর
চরকির ফ্যাকাসে কাগজে
চড়া রঙের প্রলেপ মাখানো ঘূর্ণনে বুঁদ হয়ে থাকি।

একটি গাঢ় রাত যখন তিমিরাশ্রয়ী আরেকটা রাতকে
আবরণ খুলতে বলে ;
অন্য রাত অবজ্ঞায় পাশ ফিরে শোয়।
যেন সে বধির। যেন সে স্পর্শ স্পন্দনহীন।

দেয়াল এঁকে যাচ্ছে ঝড়মন্দ্র বাতাসের করতাল
ফুটে ওঠে একটা হাঙ্গর ভয়ের ছায়া
ঝরে যাচ্ছে সব আচ্ছাদন.........

আড়াল ভালোবাসি আমিও তো।


বৃক্ষের মতো
ছায়া বাঁকানো পথটা চলতে চলতে
কোথাও না কোথাও হুটহাট ঢুকে পড়বে
কোন অচেনা গলিতে।

ক্রমশঃ সাহসী হয়ে উঠা মুমূর্ষু গাছ
আনকোরা কুঁড়ি ও পল্লবের জেগে ওঠা ;
এসব দেখলে ---
স্বপ্ন দেখার সাহস ফিরে আসে। ত্রাস কেটে যায়।

গ্লেসিয়ারে অনিচ্ছুক ঢুকে পড়া
মত্ত তুষারঝটিকার হাড়ভেদী হিমের কীলক
মৃত্যুভয়ে কেঁপে ওঠা ; মনে থাকেনা।

কোন না কোন একদিন
রোদের চোখের ভেতর থেকে
আমিও উপড়ে ফেলবো তার ছায়া।আমি।


স্যুভেনির
তোমার শহরের মানচিত্র আঁকছিলাম দীর্ঘক্ষণ
সাদা কাগজে অবিরত  পেন্সিলের উল্টোপিঠ ঘষে গেছি ;
কোন দাগ পড়েনি কোথাও।
ছায়াঘন চোখের রাজপথ থেকে
গলি-উপগলি পেরিয়ে
এক গভীর উদ্যানের সাথে
মিশে গেছে যে অঙ্গুলি-নির্দেশ
কোন আঁচড়ের টানে যায়না ধরে রাখা তাকে।

নিমগ্ন পাঠে খুঁজেছি
শব্দের অর্ধস্ফুট বর্ণমালার ঘ্রাণ।
যন্ত্রণা গুলোকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে
একটা হট্টগোলের পৃথিবীতে চলে গেলেও
বিস্মরণে হারিয়ে যেতে দেয়না সুষুপ্ত একটা খোঁচা।

মুঠোর ঘর্ষণে সমস্ত সবুজ ঝরে গেলে
পাতার কংকাল হাতে বসে থাকি।

বরফে চোবানো বোতলটা এবার খোলো
ময়ুরপাখায় উড়তে থাকুক অবরুদ্ধ স্বপ্নগুলো;
একটি নাচের পালক খসে গেলে,তুলে নিয়ে
মহার্ঘ্য স্যুভেনির করে রেখে দিও।


চশমার কাঁচের ছবি
তখন হাঁটছিলাম রংধনুর পথে
এতোটুকু বাজেনি দুর্লঙ্ঘ্য অতিক্রমের কোন ব্যাথা,
পথের দুপাশে থোকা থোকা
বর্ণালী রডোডেনড্রন ফুটেছিল।
এক উল্লসিত পুষ্পবিহার শেষে
চিহ্নিত হলো পায়ের পাতার গাঢ় ক্ষতদাগ।
খুব দ্রুত ঝরে পড়ে সোনালি পরাগ, তাই
ডানায়  খুশীর সুগন্ধ মেখে প্রজাপতি উড়ে গেলে
ঈর্ষা হয়।
সেই থেকে
সোনালি নূপুরের একফোঁটা দ্বেষণার মেঘ,
সযতনে আগলে রেখেছি ;
কোন একদিন
পাথুরে নাচঘরে ঝরে যাবে শিঞ্জিনীর তালে।

সব ছবি জমা থাকে চশমার কাঁচে।
মাঝেমাঝে চোখ ঝাপসা হলে
অসময়-আচমকা বৃষ্টির ছাঁট ভেবে মনকে ভুলাই।

No comments:

Post a Comment