01 December 2015

মিহাল রহমান




বোরকা পরা দু মহিলা এগিয়ে যাচ্ছে নাঈমের দিকে। তাদের একজনের কোলে দুবছরের একটা শিশু। একটু ইতস্তত করে নাঈমকে নিচুস্বরে ডাকলো মহিলাদের একজন
-এই যে ভাইয়্যা
-
উঁ(মোবাইলের স্ক্রিন থেকে মুখটা তুলে)
-ভাইয়্যা আমাদের একটু সাহায্য করবেন ভাইয়্যা। আমরা অনেক বিপদে পরছি ভাইয়্যা
-
কি হয়েছে?
-ভাইয়্যা আমাদের বাড়ি দিনাজপুর। বাবার চিকিসা করাইতে ঢাকায় গেছিলাম হাসপাতালে।
-
হু
-এখন বাড়ি ফিরার টাকাও নাই ভাইয়্যা। বাচ্চাডা সারাদিন না খাওয়া ভাইয়্যা। একটু সাহায্য করেন ভাইয়্যা
-
মাফ করেন
-ভাইয়্যা দ্যান না ভাইয়্যা একটু সাহায্য করেন ভাইয়্যা।
-
বললাম তো মাফ করেন। যান তো
-ভাইয়্যা বিশ্বাস করেন আব্বা মারা যাবার পর হাসপাতালের লোকজন সব ট্যাকা নিয়া গেছে। একটা ট্যাকাও নাই ভাইয়্যা। অসহায় বোন দুইটারে একটু সাহায্য করেন
-
ওহ..মারা গেছেন!
-জ্বি ভাইয়্যা
-
আপনার বাবার লাশ কোথায় ?
-এম্বুলেন্সে। আসেন ভাইয়্যা দেখে যান সত্যি না মিথ্যা বলতেছি..
-
চলুন দেখি
এবার একটু কৌতূহল জাগে নাঈমের। হাতের আইফোনটা পকেটে রেখে মহিলা দুটোর পিছে পিছে এগিয়ে চললো। বাজারের এদিকটায় লোকজন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আসে না বললেই চলে। ওরা এখানে কেনো এনে রেখেছে ভাবতে গিয়ে একটু অবাকই হলো সে। এম্বুলেন্সটার পাশেই একটা লোক দাঁড়ানো বোধহয় গাড়ির ড্রাইভার
মহিলাদের একজন এগিয়ে গিয়ে এম্বুলেন্সের দরজা খুলে দিলো। এবার নাঈম এগিয়ে যায়। বাবার লাশটা সাদা কাপড়ে মোড়ানো। মুখটা দেখার জন্য একপাশের কাপড় সরাতেই চমকে ওঠে সে, এ কি!! এতো একটা বালিশ মুড়িয়ে রাখা
চকিতে পেছনে ঘোরে নাঈম ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বোরকার নিচ থেকে বেরিয়ে এসেছে সাইলেন্সর লাগানো ভোঁতা রিভলবার
-ভেতরে ঢোক
-
-ম্ম মানে?
-যা ভেতরে... মোবাইল, মানিব্যাগ, টাকা-পয়সা সব ওই পাশের সিটে রাখ।(কথা বলতে বলতেই দ্রুত গাড়িতে উঠে বসে ওরা। রিভলবারটা এখনো পেট বরাবর তাক করে রাখা)
শিপন গাড়ি টান দে। মিলি, বাচ্চা রাইখা পোলাডার চোখ আর হাত পা শক্ত করে বাঁধ
কথামতো কাজ করে মিলি নামের মেয়েটা। বাঁধা শেষ হতেই পেছন থেকে শক্ত কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে কেউ একজন আর প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারায় নাঈম

...............
বৃষ্টির প্রথম ফোঁটাটা নাকে পরতেই জ্ঞান  ফিরে পেলো নাঈম। চোখ মেলতেই রাতের মেঘলা আকাশের দিকে দৃষ্টি চলে গেলো ওর। মাথার পেছনের দিকে এখনো টিপটিপে ব্যাথা করছে। দূরে হাইওয়েতে গাড়ি চলার হালকা শব্দ পাওয়া যাচ্ছে
নাঈম যেখানে পরে আছে সেখান থেকে অনেক দূরে
একটা বাজার ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ থেকে একটা ছেলে বের হয়ে এলো। দ্রুত পায়ে বোরকা পরা দুজন মহিলা ছেলেটার পেছন পেছন হেঁটে চললো। তাদের একজনের কোলে আবার ছোটো একটা বাচ্চা। বাজারের কোনে দাঁড়ানো একটা এম্বুলেন্স






No comments:

Post a Comment