06 December 2015

অরুনিমা লায়লা অরু

সর্গ-
আমার নানা ভাইকে
(যে মানুষটা আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে, যাকে আমি পৃথিবীতে সবচে বেশী ভালোবাসি)


৩০ শে আষাঢ়
অনেক আগেই মৃত্যু হয়েছে তোমার,
পঙ্গু, অথর্ব মরা লাশের মতো পড়ে আছো তুমি
শঠতা, জীর্ণতা আর কুটিল দম্ভকে আঁকড়ে ধরে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছো-
আমাকে,
ভালোবাসাকে,
বোধ কে,
সজীবতাকে,
বার্ধক্য তোমাতে সখ্যতা করেছে।
মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তোমার-
                                                তোমার অশরীরী আত্মার।

মুখ থুবড়ে পড়ে আছো লাশের মতো, অনুভূতিহীন, বিবেকহীন অমানব
জাগতিক শরীরটাকে বারংবার নাড়াতেই গলিত মাংসের দুর্গন্ধ,
লালা বেরুচ্ছে
ন্যাপথলিন নয়, কর্পূরের গন্ধ আসে-
কি উকট গন্ধ তোমার প্রতিশ্রুতির,
তুমি অনুভূতিহীন স্মৃতির স্তম্ভ।
ভালোলাগা-মন্দলাগা কদাচি স্পর্শ করেনা তোমায়।
মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তোমার-
তোমার অসাড় অস্তিত্বের,
 সবকটি মিথ্যে বলার, স্বপ্নমাখা কাঁকরের।

দিন যায় সাদা খাতার পাতা উড়ে,
কবিতা গুলো জটিল থেকে জটিলতর রুপ নেয়।
জোছনায় পূণ্য স্নানে ঝরে যাওয়া কবিতা।
হায়েনার মতো চিবিয়ে চিবিয়ে রস নিংড়ে খাচ্ছে তুমি-
মারছো আমাকে,
প্রতিটি কোষ,
প্রতিটি কনা,
ছারপোকার মতো টিপে টিপে মারা।
আচরণিক দম্ভকে সাথী করে, অনবরত ভাঙছো আমার ডালপালা,
শরম লুটতে মেতে উঠেছে শূকরী মন।
নগ্ন রাতের আরশিতে কালো ডাহুকের চাপা কান্না,
প্রেমহীন বিলাপ,
শেকড়ে শিউরে উঠে অপমান যন্ত্রণা।
মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তোমার-
আলোর মৃত্যু,
বকুলের মৃত্যু,
বুলেট ছোড়া জলপাই রঙের মৃত্যু,
চোখের নিচে ছায়া পড়া কালচে মৃত্যু।
৩০শে আষাঢ় পুনর্জন্ম হয়েছে তোমার-
তবু তুমি উজ্জীবিত হওনি,
তারুণ্যের সম্মেলনে সাড়া দাওনি।
সিংহল দরজা ভেদ করে আসেনি কোন দ্রোহী মানুষ
ঠোঁটের সবুজ গন্ধ,
ঘুড়ি উড়ার পত-পত আওয়াজ,
ছোট্ট শিশুর আধো-আধো বোল-
কিছুতেই প্রথিত হয়নি তোমার হৃদয়;
অবরোধ ভাঙেনি প্রেমের,
ঘাড়ের পেছনের জন্মান্ধ অন্ধকারকে চির বিদায় জানাতে পারোনি তাই বলি-
মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে তোমার-
তোমার মৃত্যুতে শামিল হচ্ছি আমিও
ইদানিং আমারও মৃত্যু হচ্ছে তোমার ইচ্ছায়-
বসন্তের মৃত্যু,
তারুণ্যের মৃত্যু,
আকুতির মৃত্যু,
স্বপ্নের মৃত্যু,
কল্পনার মৃত্যু,
স্পর্শের মৃত্যু,
 অভিব্যক্তির মৃত্যু।






তুমি-আমি এবং নক্ষত্র
আমার সৌন্দর্যের প্রাচুর্য্যকে বিলীন করতে সন্ধ্যা নামলো
নীড়বাসিনী আঁধারের কোলে আশ্রয় নিলো পুরো ধরিত্রী।
সূর্যের রক্তিম ললাট ঝলসানো বাড়াবাড়ি রকমের আদর পৃথিবী আর চায়না।
ধূপছায়া চোখ,
কামনার হাতছানি,
দেখি নক্ষত্রের ডালা সাজিয়ে তোমার সমুদ্র স্নান।
এলোমেলো হই।
মহুয়ার গুঞ্জরণে পা দুলিয়ে গল্পে মেতেছে জোস্না।
উতলা পবন হিসহিসে সাপের মতোন মাঝে-মাঝেই ছুঁয়ে দিচ্ছে ভ্রমরকে
তরঙ্গায়িত হই।

তোমার দেহাবশেষ সমুদ্রের ইন্দ্রিয় সমুচ্চয় স্রোতের ভাঁজে দেখি-
আমার একছত্র ভূমিহীন স্বপ্নক্ষেত্র আজ ছন্দহীন;
তারা শস্যের মতোই অস্তিমান;
তুমি আমার সম্পত্তির অমীমাংসিত দলিল-
তারই সন্ধানে গন্তব্যহীন পথে নেমেছি, হাঁটছি,
সোডিয়ামের ধূসর আলয় মৃত্যুপঞ্জী সঙ্গী করে।

অন্ধাকারে হাতছানি দেয় কবিয়ালী চেহারার কৃষ্ণকলি,
কতকাল-বহুকাল পেরোলো তবু হাঁটছি,
কি অসীম সুখ হাঁটার যন্ত্রণার,
হাঁটছি, হাঁটছি তবুও হাঁটছি
কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে যে মহাকাল তারই ডাকে সাড়া দিতে-
আজ এবং আগামীর সংসার সাজাতে,
তোমার মাঝে হারিয়ে যাওয়া আমি আমার ভ্রুণ আর-
রাত্রির আঁধারে মিইয়ে যাওয়া ছায়াহীন-
          মানুষের অমূলক কষ্ট খুঁজতে,
প্রতিটি নতুন জন্মের সাথে প্রজ্ব্বলিত যে মশাল-
তারই উত্তাপে শিহরিত আমি,
আমি অনন্তকালের রথযাত্রী।
অতঃপর নিরুদ্দেশ যাত্রা-
হাঁটছি, হাঁটছি-
তবুও হাঁটছি


 প্রকাশিত প্রথম কবিতা

No comments:

Post a Comment