01 December 2015

তানভীর হোসেন





পাঁচিলে এ প্লাস কে লিখে গেছে কে যেন! আর একটু এগোতেই রাজুদের বৈঠকখানার দরজাতেও! একই হাতের। তবে এবার কালির রংটাও চোখে ধরলো। ইটের টুকরো দিয়ে লিখলে অমন হয়। ভাবনা বাদ দিয়ে এগোতে লাগলাম। রেশমাদের শিউলিতলা সামনেই। রোজ কুড়িয়ে ওর জানলার পাশে রেখে যাই। ফেরার সময় দেখি না আর! একদিন রেশমা আমায় ফুল কুড়োতে দেখে ফেলেছিল, তারপর ইশারায় বললো, ওগুলো দিয়ে আমার কী কারবার? আসল জবাবটা কে ইশারায় সার্থক তর্জমা না করতে পেরে কাঁধ তুলে বলেছিলাম-
এই এমনিতেই আর কি।

তখন কৌতূহলের সময়। ঘরের চার কোণা অব্দি প্রত্নতাত্ত্বিক বানিয়ে দিতো। তালা লটকানো সব বাক্স দেখতে দেখতেই বুঝে উঠেছিলাম জগতে সিংহভাগ বাড়িরই ছাদ নেই, জানলা নেই। ফুল ছোঁড়ার ফুরসতটুকু দেয় না কাউকে। শুধু এই একটা জানালা বলে দিতো, দূরবর্তী ছায়াও অতিকায় হতে পারে। আকাশের মতো!
আমার ভাষান্তর অযোগ্য ইশারাগুলোও যে তেমন, রেশমা কি তা বুঝতে পারে! আমি ফের এগোতে শুরু করি, শিউলিতলা আসন্ন। ওই লেখা তখনো মাথায় ঘুরছে। হঠাৎ দেখি কখন যেন পেরিয়ে এসেছি।

হাজীদের নয়নজুলিতে কচুরিপানার ভেলাটা দেখলাম। এখনো একতাবদ্ধ হয়ে সুস্থির ধ্যানমগ্ন। মানুষকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে যাচ্ছে। শিউলিতলা যেতে পিছু হটতে শুরু করে দিয়েছি ততক্ষণে। অবশেষে বুঝলাম, কেন জায়গাটা ভুলে পেরিয়ে গেছি কিছু আগে। মাটিতে যে একটাও ফুল নেই। তবু কুড়ানোর ভঙ্গিতে মুঠোয় ধুলো ভরে বসলাম। আর চোখ বুঁজে দেখলাম কে যেন আমার ইশারাগুলো নিয়ে পৃথিবীর প্রতিটি জানলায় শিউলি ঘষে ঘষে কবিতা লিখে যাচ্ছে অনন্তকাল।

No comments:

Post a Comment