03 December 2015

নীল রতন চক্রবর্তী




গল্পের শুরু
গল্পটা এভাবেও শুরু করা যেতে পারে,- বলে বৃদ্ধ লোকটি উঠে চলে গেলেন।
তারপর স্বাভাবিক নিয়মেই বৃদ্ধার চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে অন্য একজন বলে উঠল,-দেখলি, দেখলি তোরা দেমাগ দেখলি, যেনো সাপের পাঁচ পা দেখেছেন, আমাদেরকে পাত্তাই দিল না।
-হু ঠিক বলেছিস...আমি ত জানি বাড়িতে কানাকড়িও দাম নেই উনার, ছেলে-বৌ মোটেই সম্মান দেয় না...উনার আবার হামবড়াই ভাব...ছে: ছে:
গল্প কিছু শুরু হয়ে গেল...


বিজ্ঞাপন
পত্রিকার পাতা উল্টাতেই একটা লিফলেট বেরিয়ে এল, একদম লাল রঙের ,আর তার উপর একটা আবেদন লেখা -কালো অক্ষরে,
-পৃথিবীতে মানুষ চাই, একদম খাঁটি।
পেপারটা ভাঁজ করে টেবিলে রেখে দিলাম ।


অণুগল্প
বসেছিল দুজন। দাদু আর নাতি। দিনের সূর্য তখন পশ্চিম দিগন্তে। দাদু আর নাতি আচমকাই বলে উঠে,- আর কত দিন। দাদুর ভাবনাতে দিন শেষের আর নাতির আগত জীবনের। তবু দুজনেই বসে ছিল একসাথে...


মনেই
তুমি যেখানে আছো, ঠিক সেখানেই নদী অতল গভীর। ভেবে দেখ,সাকো নেই। আর তার ঠিক বিপরীত পাশের জনেই...। এখানে দিক পরিবর্তনেও গভীরতা নদীর, সাকো হীন। আসলে ভূত তোমার মনেই


চেনা
সূর্য নেমে গেল পাহাড়ের নীচে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল শৈল শহরে। আমি তাকিয়ে ছিলাম পাহাড়ের দিকে। দেখি পাহাড়ের উপড় একটা ছায়াআবছা আলোতেও কেমন চেনা চেনা লাগছে
আসলে সে তো আমারই প্রতিচ্ছবি ,সেই কবেকার...


ভাবনা
বাইরে বাতাস বইছে। দরজাটা একটু নড়ে উঠলো। মন ভাবে কেউ এল ,আসলে কেউ আসেনি। এবার একটু ভেবেই দেখ এটা শুধুই একটা ভাবনা।


মা
বিশাল বাড়িটার সামনে ট্যাক্সি থেকে নামলো,সুখেন আর তার বৃদ্ধা মা। মাকে রেখে সুখেন যখন ফিরে যাচ্ছিল, তার বৃদ্ধা মা, তার গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, ছলছল চোখে বল্ল, ভাল থাকিস, সুখে থাকিস, সাবধানে যাস বাবা।


নগণ্য
রাস্তার এক কোনায় পরে আছে, সেই সকাল থেকেই। পথচারীদের নজরে এলেও কেউ খুব একটা গুরুত্ব দেয় নি। কেনই বা দেবে, নগণ্য একটা জিনিস, প্রয়োজন নেই বলেই তো ফেলে গেছে রাস্তায়।
আমি কুড়িয়ে নিলাম, আমার যে খুব প্রয়োজন এই হিংসা উত্তাল সময়ে এই নগণ্য হৃদয়টার

দৃশ্য
ঝোলা কাঁধে বেড়িয়ে পড়লাম। না, আজ একটা হেস্তনেস্ত করে তবে ফিরবো। আর যদি না পারি তবে,শালা আর ও মুখো হব না।
যেতে যেতে একটা বাড়ির উঠোনে চোখ গেল। আমি দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার ঠোট দু দিকে বিস্তার পেল ,মানে হাসলাম। মনে মনে ঈশ্বরকে আর আমার ভাগ্যকে সাধুবাদ দিলাম। 
না, আজ বাড়ি ফিরবো কারণ আমার কাঙ্ক্ষিত বস্তু পেয়ে-গেলাম যে, ঐ বাড়ির উঠোনে। দাঁড়িয়ে দেখছি, বাড়ির উঠোনে একপাল হাঁসমুরগি,বাছুর,ছাগল, কুকুর,বিড়াল আর মানব শিশু একই থালা থেকে,বেশ আনন্দেই খেয়ে চলেছে। কোথায় কোন দ্বন্দ্ব নেই।
এই স্বর্গীয় দৃশ্য ঝোলায় ভরে নিয়ে ফিরে এলাম।


বাস্তব
বিকাল হেঁটে যাচ্ছে সন্ধ্যার দিকে। আমি তখন জানালায় দাঁড়িয়ে দেখছিলাম, লাল রঙে ঢেকে যাচ্ছে উষর প্রান্তর, আর ধীরে ধীরে উচ্ছল প্রাণবন্ত বনভূমি ঘুমিয়ে পড়ছে...একঝাঁক পাখি আকাশের সীমানা ছুঁয়ে ফিরে আসছে ভালবাসায়। আমি নেমে এলাম রাস্তায়, স্বপ্নিল চোখে নগর সভ্যতার নকল উল্লাসের পাশ কাটিয়ে হেটে চললাম নিজস্ব ঠিকানায়, কিন্তু আমার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল একটা স্পর্শে।
ফিরে দেখি বছর পাঁচের একটা মেয়ে, শতছিন্ন পোষাকে...কোলে বছর খানেকের একটা শিশু। আমার হাত স্পর্শ করে দাঁড়িয়ে, করুণ দুটি নয়নে আর্তি জানাচ্ছে..."বাবু , কুছ তো দিজিয়ে , বহুত ভূখ লাগা "
ছোট্ট একটা স্পর্শ...কিন্তু কি বিশাল তার ব্যপ্তি, যা বিদায়ী সূর্যের রক্তিম আভার মোহ কাটিয়ে আমাকে বাস্তবের রক্তাক্ত কঠিন জীবনে নিয়ে এল।
ভারাক্রান্ত মনে ফিরে এলাম নিজস্ব কুলায়।

-০-

No comments:

Post a Comment