02 December 2015

আসমা অধরা




উঠোন জুড়ে উড়তে থাকা প্রজাপতির ছায়া নেচে বেড়ায়, তার পেছন ছুটতে ছুটতে লজ্জাবতী কাঁটা চিরে দেয় সেই, সে-এ-ই একদা সুস্থ পদতল। ঠিক তখনি বেজে ওঠে এক পাগলাঘণ্টা; 'পালিয়েছে ফের'- বলেই মুচকি হেসে মাথার ঠিক উপরে চলে আসে সূর্য। হন্যে হয়ে খুঁজি নিজের ছায়া, নিজের চারপাশে দু'হাত ছড়িয়ে চরকি ঘোরা হয়ে আঁকতে থাকি বৃত্ত। মন বিড়বিড় করে এক হোয়াইট মার্কার বোর্ডের গোটা হরফে লিখে রাখা উলম্ব বোধ।

ছায়া গো! আরো উদগ্র হয়ে থাকো, বুকের ভেতরে স্ব-অহম কেমন ক্ষ্যাপা হয়ে খোঁজে সেই রঙ্গিলা ফানুস, হুশের সমাচার, এক পিদিমের পুড়ে যাওয়া সলতে। অথচ যে আহুত আগুন পুড়ে দ্যায় সব, তার জন্যেও নিয়মিত তেল ঢেলে ঢেলে উজ্জীবিত করতে হয় তাকে, এর নাম উপাসনা বুঝি!

এইসব ফেমিনিন ছায়ারা বড্ড অস্থির, স্থিরতম নোঙরের গিঁট খুলে কোথায় কোন সমুদ্রের তলদেশ ভারী করে আছে...যে বস্তু খুঁজে পাওয়া যায় না, তাকে কি বলে ডাকি? ঈশ্বর, পরাবাস্তব নাকি অধিবাস্তব! নিজেকে সুপ্রাচীন শিলাখণ্ডের মতো নিস্তব্ধ, সুনসান লাগে, এই গ্রহে একটিও কথা বলা সবজান্তা বৃক্ষ নেই!

এইসমস্ত তালাশেরা খুব নৈঃশব্দ্য জানে, মুখে কুলুপ এঁটে থাকে প্রজ্ঞাবান শতবর্ষীয় বট, আর তখন কোথা থেকে এক অতিকায় ফ্যালকন উড়ে আসে- টেনে নিয়ে যায় কুয়াশার চাইতেও অধিক ঝাপসা মর্ত্যের গহীন পাতালে, যেখানে ক্লান্তি, জরা, বৈকল্য ও প্যারানরমাল অস্তিত্বেরা মিলেমিশে এক অতিকায় পাণ্ডুলিপিতে লিখে যায় ভিজিটর'স অ্যাকটিভিটিজ।

এই সব দিনরাত্রির মাত্র কিছু উত্তর নিয়ে ছুটে আসো, বিড়বিড় করে মন্ত্রের মতো ঢেলে দাও কর্ণকুহরে, ছুঁয়ে দাও উদগ্রীব অস্তিত্বের ব্যাকুলিত অভ্যন্তর। একবার জেনে নিয়ে মরে যাবার সময় বিধাতা বলেই মেনে নিয়ে, সে তুমি যেই হও- মানবগোত্রীয়, প্রেতাত্মা অথবা নুরের ফারিশতা—
এসো, নেমে এসো এই মর্ত্যে, ধরায়- একটিবার। 'পরম' বলে কেবল একটা ক্ল্যাপস বাজাবে বলে হাত দুটো অধীর প্রতীক্ষায়..এসো!

































এই সময়ে হাসি- কান্না, ব্যাথা- সুখ, অমাবস্যা এমনকি জোছনাও ক্ষয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র অথবা ব্যপক ভাবে। শ্বাস এবং জীবনের ক্ষয়িষ্ণু অনুভব ঝরে গিয়ে ঠেকে থাকে মৃত্যুব। প্রিয় জোছনা উগরে দেয় বিষ ও বিষাদের তীব্র গরল, কালো বাদুড় ব্যতিরেকে অমন ধবল চন্দ্রালোকে নীড়হারা উদ্বাস্তু কোন যে পাখি কেবল অপচ্ছায়া বিস্তার করে যায়। জেঁকে বসা বিপন্নতা বোধ- অসুর, সুখ ও স্বস্তি পাথর চাপা পড়া অঙ্কুরের মতই অপুষ্ট হলদেটে। এক পর্যায়ে অন্ধকারও বিপর্যস্ত মলিন; মনন থেকে খসে পড়ে অনাহুত কাব্যেরা।
পূর্ণিমার ছায়া জলে ভেসে বেড়ায়- যদিও ঠিক তার নীচেই অঘোর আর্কিটেক্টের টেবিলে চলে গেছে লাল আর নীলেরা। কেবল এইঘরে ছাইরঙা ঘুঘুর পালক স্বাচ্ছন্দ্য লুকোচুরির সঙ্গী। কেন্দ্রে পৌঁছনোর কোন পথ রাখেনি বলে বৃত্ত নিজেই একাকীত্বের জালে বন্দী; জিঘাংসায় ছিটকে আসে যে ফাউন্টেনের কালি,সেও আজীবন দোয়াতের কাছেই পরাস্ত।
শুভ্র-নীলে যেমনি সাজুক আকাশ সেও তো কেবল শূন্যতারই ছদ্মবেশ, তাই আকাশ রঙা কেরোসিন পারে এই অসুখে গলে গলে খসে পড়া চামড়ায় আগুনস্পর্শী শুদ্ধতা এনে দিতে। বড্ড অপবিত্র আর অশুচি লাগে আজকাল নিজেকে।
কাঠের চশমা পরে একমাত্র ঈশ্বরই চিরস্থায়ী হাসির সাথে অংশীদারি চুক্তিতে আবদ্ধ থাকতে পারেন। যতটুকু গড়েন তার বেশী ভেঙ্গে গেলেও দেখার চোখটুকুর আচ্ছাদন সরানোর অপারগতায় অসহায় খোদ বিধাতার উপরেও করুনা ছাড়া বৈরী অনুভব নেই কোন। কেবল তিনি নেই তাই প্রমানিত পৌনঃপুনিকতায়।
আহ্নিক বার্ষিক উপেক্ষা করে যে হ্রেষা ছুটে যাচ্ছে, বহু আগেই তার বল্গা ছিড়ে গেছে অভিকর্ষের দোটানায়। তবুও নালের আঘাতে বিক্ষত পাড়ের চিহ্ন গাথা প্রান্তরে আশ্চর্য দোটান। হৈ চৈ ছেড়ে অভিগমনের দিকে ছুটছে ভায়োলিন। আমাদের কোন উল্লাস নেই, ঘর নেই দোর নেই মাথা নোয়াবার। এই যে ঘুংগুরের ভেতর বোনা অজস্র কথারা ছুঁতে চাইছে ঈশ্বর, তার ম্রিয়মাণ চলায় কোন সুর নেই। এমন অবস্থানে চাঁদের আলোর সাথে সুপুরির খোলে জমানো জলে গাঢ় জ্বালে জ্বলছে এলাচদানা, তারও কোন সুগন্ধ নেই। আহা মন! নিজস্ব ঘন বুনোটের রজ্জু কোন দেনায় বাঁধতে পারেনি সে বিজুলি। তূর পর্বতের পোড়া ছাইয়ের ঝলক পলকে মেখে দেবার পর মূর্ছিত নয়নে খেলা করে নাদসর্বস্ব অনুলিপির ঝাঁপি। এবারে চলে যাই, সমস্ত ঋণ লিখে দিই শোধের হস্তাক্ষরে।

No comments:

Post a Comment