01 December 2015

সাজিদ আবির




 
পাবলো নেরুদা’র দুটো কবিতা


puedo escribir los versos
নক্ষত্র পতনের রাত

আজ রাতে, আমি লিখতে পারি তুমুল বেদনাবিধুর পঙতিমালা 

লিখতে পারি, যেমন ধরো, ‘বিস্ফোরিত রাত্রি যখন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছিটকে ছড়িয়ে পড়লো, 
নীলাভ তারাগুলো তখন দূরে দাঁড়িয়ে কাঁপছিল তিরতির করে 

নিশুতি রাতের বাতাস আকাশ ঘিরে পাক খায় আর গান গায়

আজ রাতে, আমি লিখতে পারি নীল নীল দুঃখের পঙতিমালা 
তাকে ভালবাসতাম আমি, সেও বাসত ভালো, আমায়, হয়তোবা, কখনো 

গহীন রাতের মত আমি আঁকড়ে ধরতাম তার পেলব কোমল হাত
প্রশস্ত আকাশকে সাক্ষী রেখে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিতাম তার মুখ 

সে ভালবাসত আমায়, আমিও বাসতাম ভালো, তাকে, হয়তোবা, কখনো
সৃষ্টির আদিকাল থেকে, কেউ কি তার সমুদ্রের মত গভীর দৃষ্টিকে উপেক্ষা করতে পেরেছে? 

আজ রাতে, আমি লিখতে পারি হৃদয় নিংড়ানো কষ্টের পঙতিমালা 
এই ভেবে, যে সে আর আমার পাশে নেইএই ভেবে, যে আমি তাকে হারিয়েছি 

নিস্তব্ধ রাতের প্রগাঢ় হুংকার, তার অনুপস্থিতিতে, বুকে চেপে বসেছে পাথরের মত 
হৃদয়ে শিশিরের মত টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে এক একটি দুঃখ স্নাত শব্দ 

আমার প্রেমে সে শক্তি ছিল না যে তাকে ধরে রাখে
চোখের সামনে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে এই রাত, অথচ সে আমার পাশে নেই 

এইতো, দূরে কেউ গান গাইছে, দূরে, বহুদূরে 
আর আমার আত্মা ধুঁকে মরছে, কারণ সে আমার পাশে নেই 

আমার দৃষ্টি তাকে উন্মত্তের মত খোঁজে দশদিকে, 
অথচ আমার হৃদয় বেদনার রঙ্গে নীল, কারণ সে আমার পাশে নেই 

সেই রাতগুলির মত আজকের এ রাতও আকাশ নক্ষত্র ভরা
কিন্তু, আমরা, আগের মত নেই আর

এখন আর তাকে ভালোবাসিনা, নিশ্চিত আমি, কিন্তু কি তীব্র ভাবেই না ভালবাসতাম তাকে! 
আমার কান্নাজড়িত কণ্ঠ, দখিনা বাতাসে ভেসে যদি তার কাছে পৌঁছুতো! 

আরেক জনারসে এখন আরেক জনারউষ্ণ চুম্বনের রাত্রিগুলোর মতই সে অতীত এখন-
তার কিন্নরী কণ্ঠ, সোনা রঙ্গা শরীর, তার অতল গভীর দুচোখ 

আমি তাকে বাসি না আর ভালো- নিশ্চিত জানি, নাকি বাসি এখনও? 
ভালোবাসা যদি ক্ষণকালের হয়, ভুলে যাওয়াটা এত দীর্ঘ কেন? 

কারণ, এই রাতের মতই আমি জড়িয়ে ছিলাম তার হাত
তাকে হারিয়ে, আমার আত্মা আজ মৃতপ্রায় 

যদিও এটাই শেষ যন্ত্রণা, যা সে আমায় দিয়ে যাচ্ছে, 
এবং এই শেষপঙতি যা আমি তাকে নিয়ে রচে চলেছি 







স্মৃতিরখাতা অথবাকবিতার পাতা

সবকিছুটুকেরাখিমাথারখাতায়,
ঘাসের ডগায়আলোরনাচন, দরকারি-বেদরকারি ঘটনঅঘটন,
রাস্তারদুপাশ,বাড়িঘরযেখানেযেমন,
লাফ দিয়েটানটান শুয়ে পড়া সর্পিল রেলপথ থেকে নিয়ে
কষ্টেরকারুকার্যমণ্ডিত মুখ,
বেদনারবেদন ভরা মুখোশ
সবকিছু!

যদি বাদপড়েএকটিলালগোলাপের ঝাড়, কবিতায়,
যদি নিশিরমতননিকষকিছুকে কাব্যিকতায়-
গুলিয়েফেলি, বলি খরগোশের মতন সাদা!
যদি বর্ণনার সময়বাদপড়েযায়একটিদেয়ালও,
কেঁচে গণ্ডূষ শুরুকরিসবকিছু পুনরায়-
জলকণা, সোঁদা গন্ধওয়ালা মাটি, মাটির বুকেঘাস, পাতা,
রমণী, কেশ, অথবা একেকটিইট- দেয়ালের বুকে গাঁথা,
অথবা আমায়বিদ্ধকরেছিল যে ফুলের কাঁটা,
অথবা খুবগতিময়কিছু!

সৌখিন লেবাসচাপিয়ে
ধান খেয়েগানগেয়েপৃথিবীতে চড়ে ফেরা দুঠেঙে প্রাণী সকল-
সদয় হওকবিরপ্রতি!
কেননা কবিরকবিতাতোমারগল্পওবলে

এই মনেরাখা-রাখির ব্যাপারে কি অপটুই না ছিলাম আমি!
দিনরাত্রিছেনেছুনে দিনমান,
হাতে থাকতোকেবলধোঁয়াশার তেলেভাজা নুড়িপাথর।
অথবা একদমইঅপ্রয়োজনীয় কিছু খণ্ডচিত্র।
যেমন ধরো-
কুয়াশায়আচ্ছন্ন কিছু সুঘ্রাণ,
অথবা সুঘ্রাণমাখাকুয়াশা!
কিংবা কোনমানবীর দেহ,
যার পেলব ত্বক আমার   অধর স্পর্শে 
কেঁপে কেঁপেউঠেছিল ঘুমকুমারীর মত-
এসব!

কখন? কোথায়? কিভাবে?
দিনক্ষণেরঠিকুজী কুলজী জানতে চেয়ে বিব্রত করোনা কো বাপু!
হয়তো এমনকোনপথেরকথাবলবো- যার কোন পথিক নেই,
হয়তো বলবোএমনকোনদেশেরকথা- যাতে কেউ বাস করেনি কখনো,
হয়তো এমনকিছুসত্যবলবো- যা তোমাদের অভিধানে অসত্য নয়, বরং মিথ্যা!
তোমাদেরঠিক-বেঠিকের বেরসিক দাঁড়িপাল্লার প্রেষণে
আমার কবিতারখাতায়ভোরেরছবিআঁকারসুযোগহয়নিকোনদিন।
এখানে কেবলরাতেররাজত্ব,
যেখানেআমারস্বপ্নেরা
জোনাকেরমতওড়ে,
আর আঁধারেরবুকেআলোদেয়!


No comments:

Post a Comment