25 January 2017

শেখর দেব



        
আরাধ্য আকাশবৃত্তি 
এতোটা অন্ধ হয়েছি বুঝিনি কখনো
কবে কতোটা বেহাগ রেখেছি সুমন্দ শহরে
অদূরে আগত সুরের কল্লোল
পেছনে টেনেছে শুধু নিরালম্ব নিয়নের রাত।
স্বনির্বাচিত পূর্ণিমা গুলো
জোছনা ভিক্ষা নিতে এসেছিল কাছে
হরেক চাঁদের মায়া ছড়িয়েছি রাতের আকাশে।
সেই থেকে নির্মল আকাশবৃত্তি আমার...
এক রক্তিম দুপুরে ঝলসে গেল বৃত্তির অনুরাগ
প্রতারক দিনের পর ক্ষত-বিক্ষত হলো হন্তারক মধুরাত।
প্রেমান্ধ নির্মোহ চাঁদ অক্ষত রাতের কাছে
গচ্ছিত রাখে সুগুপ্ত আলাপ
গোপন আলোর মায়া অন্ধ করেছে প্রবল
মনের মূর্খতা ক্রমাগত টেনেছে সমিল আঁধারে।



সব পাখি ঘরে ফিরে না
আঁধার রাত্রির পর কে থাকে আলোর অপেক্ষায়?
শারদ-সৌরভ মাঝে, অনন্ত উদার মোহনীয়
দিন ক্রমশ উঠেছে দুলে। শিশির শুভ্র কায়ায়
অবারিত দৌড়ের ভুবনে, কে তোমার রমনীয়
রূপের সামনে জ্বলন্ত গোলাপ ছুঁড়ে ছুটে যায়।
দূরের বাতাসে আজ, অসমাপ্ত আয়োজন শেষে
পাখিরা ফিরে না ঘরে, রয়ে যায় লেনদেন হায়!
কাছের মানুষ তবু দূরেই বসতি অবশেষে।

সাগর উজানে এলে যে দশা জলের মাঝে হয়
এমন লবণ মায়া বুকের ভেতর জমা রয়।
শরতে দেবীর মুখ দেখেছি এখনো মনে পড়ে
কপোলের তিল আর রাঙা শোভা ঠোঁট মিশে যায়।
চোখের অপার মায়া নিমেষে আকুল মনে ধরে
হারায় আলোর রূপ, আঁধারে তাই অনন্যোপায়।


আরাধ্য অতীত
নিঃশব্দ ঘুঙুর বাজে, মনের ভেতর হেঁটে যায়
অপ্রাপ্ত ঘোরের মোহ। অতীত আগুন আসে মনে।
উদাস দিয়েছি মায়া ছায়ার করুণা নিরূপায়।
সময় দাঁড়িয়ে ছিল আনন্দ বেদনা ঘন ক্ষণে।
বিষাদ বন্ধুরা সব অযাচিত রোদ মেখে দূর
হারিয়ে গিয়েছে আজ। পদচিহ্নে বালির সভ্যতা
নিমেষে গিয়েছে ধ্বসে, পাশেই খেলেছে সমুদ্দুর।
লবণ পিপাসা নিয়ে এখনো হৃদয় আছে পাতা।

কত সুর অবিরত তুলেছে নিবিড় নম্র তান।
বেঁধেছে আপন মনে শুনিয়েছে যে অমৃত গান
সে কি বুঝেছে আমায়? নরোম নিদ্রিত নম্রতায়
কাছে এসেছিল। পাশের মানুষ ভেবে গৃহ কোণে
গড়েছো মন্দির তার ভীষণ আপন মমতায়
পুজোর আরাধ্য করে রেখেছিলে নিজ মনে-প্রাণে।


সুরের সন্ন্যাস
ছাতিমের গন্ধ ভরা দেশে হেঁটে যাই বহদূর
পথের সীমানা জেনে কেউ কি পায় বলো ঠিকানা?
নিরুদ্দেশ তাই শুধু চলে যাই দূর অন্তপুর
বাঁশির মধুর সুর ভেসে আসে মন তো মানে না।
সুরের মায়ার ডাকে যে জন গিয়েছে ছেড়ে ঘর
মোক্ষলাভ বৃথা নয়, ধ্যানের সুরভি ভেঙে যায়
বোধ আর বোধী নিয়ে একা শুধু হতে হয় পর
সাধন সঙ্গিনী যদি কাছে থাকে মন নিরূপায়।

নিলাম্বরী, ওগো মেঘবতী, এমন অমোঘ কলা
কেমনে ধরেছে মন, সুরহীন কি করে তোমাকে
টানে? মানে না সেসব মন, ভুল স্রোতে শুধু চলা।
এসব আমূল গন্ধ এসেছে দারুণ করে নাকে।
সীমাহীন তাই শুধু পথের মায়ার মধু নিয়ে
ঘুরিফিরি সব পথ বাঁশি সুরে বেদনা লুকিয়ে।


আমূল অজ্ঞেয়
ভুলেই গিয়েছি তাকে, উড়ে গেছে মেঘের স্বভাবে
কতোকাল জমে ছিল বুকের ভেতর জগদ্দল
পাথর এক! বহু বছরের জমানো অনাবিল
মায়া সব নিমেষে মিশেছে আজ সামাজিকভাবে।
সমাজ বুঝেছে যাহা সর্বনাশ ধরেছি সেসব
বুঝিনি কিছুই তার, চাঁদ আর ফাঁদ কাছাকাছি
গড়েছে নতুন মায়া, কে জানে এসব মিছামিছি
কতোটা এসেছি আজ, পেছনে রয়েছে স্মৃতি-শব।

কিছু দূর এসে দেখি কতো পিছে হয়েছো বিলীন
পথের মায়ায় আছে আলাভোলা মন অমলিন।
মাঝখানে কে যেন এসেছে কাছে চলে যাবে সেও
সময় এমন খেলে অশ্লীল অতীত ধুয়ে যায়
সহজ পথের বাঁক অতিদ্রুত ঘুরে অসহায় 
নীরবে কালের সাক্ষী হয়ে থাকি, আমূল অজ্ঞেয়।

______________________________________

No comments:

Post a Comment