25 January 2017

সোয়েব মাহমুদ




বিষাদ লিখতে পারিনি
আমি কখনও “বিষাদ লিখিনি”,
লিখতে চাইনি স্বজ্ঞানে ফুলস্কেপ কাগজটায় “একাকীত্ব”, কখনও।
আমি কখনও বেভুল সময়েও লিখতে চাইনি “মৃত্যু”।

অথচ বাষ্পীভূত বেদনা,
বুকের খাঁচায় আটকে গিয়ে কুয়াশায় যে বিভ্রম তৈরী করে,
যে তমসাচ্ছন্ন অন্ধকার নির্মাণ করে-
কাকতাড়ুয়া হয়ে সে সকল ব্যধিবোধ সরাতে সরাতে
নিরাপরাধ এক দিয়াশলাই জ্বলে উঠতেই দ্যাখি,
আত্মঘাতি হৃদয় তোমার চোখ-চশমার কাচে
“ভালোবাসা” লিখতে গিয়ে লিখে ফেলেছে সন্ধ্যা,
লিখে ফেলেছে ভালোবাসাহীন আকাশে বিলুপ্তপ্রায় লাল গোলাপ,
লিখে ফেলেছে অনুমোদনহীন মর্গে পড়ে থাকা বিশ্বাস,
লিখে ফেলেছে নিষিদ্ধঘোষিত বিপ্লবী প্রলেতারিয়েত লাল টিপ যা, বাঁ’য়ে একটু বেশিই হেলে গ্যাছে!

জানো, আমি কখনও বিষাদ লিখতে পারিনি।
তবুও ,কিভাবে জানি তোমার মুখ ভেসে উঠলেই অসহযোগ শুরু হয়ে যেতো নগরে?
সংবাদ শিরোনামে উঠে আসতো- জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় তোমার চোখের বানিজ্যিক উঠোনে।
দেখতে পেতাম-
হৃদয়ের উচ্ছন্নে যাওয়া পোষ্টঅফিসে ইএমএস কৃত ডাকমাশুল পড়ে থাকা অবহেলায়।
অতিব্যবহৃত যোনীতে আঁশটে আলসার,
রক্তলাল আগুনে পুড়ে যাওয়া ফাগুনে কেনো যে নো আমি কখনও বিষাদ লিখতে পারিনি।






আমারতো কবিতা লিখবার
আমারতো কবিতা লিখবার কথা ছিলোনা, আমারতো কবিতায় আসবারই কথা ছিলো না শুভা।
আমি’তো বড়জোর লিখতে পারতাম উনত্রিশ দেশ ভ্রমণকাহিনী।
আমি, যদি ইচ্ছে হয় খুব বেশী লিখবার
তবে লিখতে পারতাম কোলে পাঁচ বছর বয়সী শিশু নিয়ে দৌড়ে পালানো; চারপাশ থেকে গুলি
হওয়া সময়, বেলগ্রেড। লিখতে পারতাম ক্রেমলিনের বেশ্যার মেয়র পাড়া উচ্ছেদ নিয়েও,
লিখতে পারতাম শরণার্থী শিবির বৈরুত, যেখানে নামাজের বিছানায় অগাষ্টিনের যিশুকে ডাকা প্রহর।
কোকেইনে ভর আলেক্সান্দ্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পয়েন্ট টু টু বোর রাইফেল, নিউ ওয়েলস ।
হুগো শ্যাভেজের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়া বোগোটা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন রেস্তোরাঁ।
ভালোবাসাহীন সঙ্গমের রেড লাইট ষ্ট্রিট অসলো, ব্রোথেলের বেথেলহাম।
নগ্নতার সুইস সেনাবাহিনী হেড কোয়ার্টার, যেখানে ধর্ম লুকায় যোনীর ভেতর।

কুয়াশা বিভ্রমে এংলো আমেরিকান ছাব্বিশের স্তনে নাক ঘষটে
লেখা যেতে পারতো আখের গন্ধময় কোপেনহেগেন ছয়,
লিমাসল কিংবা পাফোসের ফেনীল সমুদ্র।
লেখা যেতে পারতো অস্ট্রিচ পাখির ডানায় শূন্যতা,
রিগা কিংবা স্লোভেন চার্চের বাইরে ক্যাডিলাক,
অপেক্ষায় থাকা তরুণীর উরুতে মুখ গুজে দেয়া চিঠির অনুবাদে শরীর বিদ্যুৎ।
কিংবা ক্যানোপির ধারে ডায়মন্ড হার্বার।
রয়েল ডাচ পরিবার ঘুমাতে থাকা সময়ে,
নিরাপত্তারক্ষী সাতাশের উদ্ভিন্নযৌবনা একান্ত সময় নিয়েও চাইলে লেখা যেতো।
লেখা যেতো কাবুল, পেশোয়ার অথবা দিল্লী।
লেখা যেতো জেগে থাকা ষোড়শী ঠোঁটে সাড়ে চারশ বছর, আইয়ানাপা।
লেখা যেতো পঁয়ষট্টির হাংরি কলকাতা,
তেরো বছরে শিক্ষিকার ভারী বৃষ্টিপাতে আমার ধর্ষিত হওয়া দুপুর; ঢাকা নিয়েও।

কিন্তু শুভা,
পারিনি...ব্যর্থতার দায় নিয়ে চোখের দুপুরে, বুকের স্পন্দিত রক্তপ্রলাপে
নিজ মৃত্যু সনদ পাঠ করা অশ্রাব্য নিষিদ্ধ সংলাপে বিভোর
মৃত্যুসংবাদ জানাবার জানাজা, একটা কবিতা লিখবার কথা ছিলোনা কখনও!!

No comments:

Post a Comment