বালিশদুটি
পাশাপাশি চিৎ হয়ে শুয়ে থাকে। ধবধবে সাদা কাভারে ঢাকা, শিমুল তুলায় পেট বাঁধানো—ধরলেই মনে
হয় হাত গলে যাবে ।
.
লাল রঙের ফুল আঁকানো চাদর ।
টানটান হয়ে বিছানার সাথে লেপ্টে আছে । ঠিক সামনেই একটা ড্রেসিং টেবিল । পর্দাটা
সরানো । আয়না দিয়ে বালিশ দুটি দেখা যায় । ভরাট বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে থাকে ।
.
বালিশদুটির মধ্যে অনেক অনেক
কথা হয় । অনেক কথার মানে আছে,আবার অনেক কথারই নাই । অনেক কথা বলার আগেই, দুইজনই
হেসে কুটিকুটি ।
এইতো সেদিন, দরজা খুলতেই— ডান পাশের
বালিশের উপর এক ঝাঁক আলো এসে পড়ে । অপ্রস্তুত ডান বালিশটার কি যে লজ্জা! বাম পাশের
বালিশ খালি মজা দেখে, আর মুচকি মুচকি হাসে ।
.
আচ্ছা, তুই এত শয়তান কেন— ডান
বালিশটা খোঁচা দেয় । বাম বালিশটা তখনও হাসছে । হাসতে হাসতে বলে— ঐ দুই
মিনিটের লোকটা আবার আইছে!
.
মাঝে মাঝেই—দুটি মাথা
এসে ঢেকে দেয় বালিশদুটিকে । একটি মাথা পরিচিত—চুলগুলি মেঘের মতো কালো, পাহাড়ের
ঢলের মত কলকলা। অন্যটি,— কে জানে! এসময়টায় বালিশদুটি একে ওপরের দিকে তাকায় । আবছা
আলোটা খুব আকর্ষনীয় লাগতে থাকে । এরপরেই ঘটে আসল ঘটনা ।
.
মাথা দুটির মধ্যে অনেক গল্প
হয় ! বালিশদুটি কান পেতে থাকে । কিছু গল্প হাসির, কিছু গল্প প্রেমের, কিছু আবার
শোনাই যায় না । লজ্জা পেতে হয়।
.
মাঝে মাঝেই—দুটি মাথা
এক বালিশে জড়ো হয় । খুশিতে ভরে ওঠে টানটান চাদরের বুকটিও । তখন অন্য বালিশটি কেমন
চুপচাপ হয়ে যায় । ঠিক লজ্জা কিংবা হিংসা নয় । একটা একলা একলা ব্যাপার ।
দিন যায়, দিন আসে । বালিশদুটি
আবার আগের মতই শুয়ে থাকে । মান অভিমান পেরিয়ে আবার একটু একটু কথা হয়,
:কিরে, আজ যে বহুদিন হয়ে
গেলো!
:হু, বহুদিন
:এভাবে দিন কাটে? কতদিন নতুন
কোনো গল্প শুনি না
: পুরনো গল্পই যে শেষ হতে চায়
না...
পরিচিত মাথাটি এসে কাত হয়ে
ডান বালিশটায় মুখ ঢাকে। বাম বালিশটিও বাদ যায় না । চাদরটি তখন কুঁচকে থাকে । মাঝে
মাঝেই— ডান
বালিশের কাভার ভিজে যায় । এই সময়টাও বালিশদুটি সতর্ক! ঠিক ভালোবাসা কিংবা
সহানুভূতি নয় । একটা একলা একলা ব্যাপার ।
{গল্পটি কবি Firoj Ahmed ভাই এর "দুটি বালিশের সংসার
চিন্তা" কবিতা থেকে অনুপ্রাণিত}
No comments:
Post a Comment