ভাদ্র মাসের
একদিন
শেফালি
বলল—মানিকভাই,
আমারে কয়টা কলমিশাক তুইল্লা দিবা?
ডালিম গাছের তলে মানিক
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাদ্র মাসের পানি দেখছিল । বর্ষা শেষ হয়েছে, কিন্তু থই থই করছে
পানি । পায়ের কাছে ছলাত ছলাত শব্দ ।
ডালিম গাছের বয়েস হয়েছে ।
তিরিশ। ফুল নাই তার । ফলও নাই । কিন্তু
সামনে এসে যে দাঁড়িয়েছে তার গাল দুটি ডালিমের মতই রংধরা । মানিক দেখে আবার
দেখে না ।
—যাইবা নি মানিক ভাই!
—পানির মধ্যে তুই কলমিশাক কই দেখছ, শেফালি?
—বিমান বসুর ভিটায় ।
মানিক অনেক দূরে তাকালে আলো
অন্ধকার দেখতে পেল । ঝোপ ঝাড় । নিরালা বাস্তুভিটায় ঘুঘুর ডাক ।
—অই ভিটায় সাপখোপের আড্ডা রে শেফালি। মেলা দূর ।
—তুমি একটা ভিতুর ডিম। যাও যাওন লাগত না!
ডালিম ফেটে গেলে যা হয়—শেফালির গালদুটিও ফাটতে লাগল ।
কোশা নাও ঘাটেই বাঁধা । নে উঠ— বলে মানিক নায়ে উঠে গেলে শেফালি তর
তর করে গলুইতে পা রাখল।
ভেসে গেল নৌকা কলমি তুলতে ।
গাঙের ভেতর ভরাকটাল । বড় বড়
ঢেউ বুক ঠেলে চলে। শেফালির মাথার চুল উড়তে লাগল বাতাসে । হাত দিয়ে পানি ধরতে চায়
শেফালি। আঙুলের ফাঁক দিয়ে পানি গলে পড়ল ।
খিল খিল করে হাসে খোলা গাঙের
কুল।
—মানিক ভাই, আমারে একটা কচুরিপানার ফুল তুইল্লা দিবা?
কচুরিপানা ভেদ করে যাচ্ছিল
কোশা । খপ করে একটা পানাফুল ছিঁড়ে নিল সে । শেফালি এগিয়ে এসে বলল— দেখছ মানিক ভাই, কত সুন্দর ফুল!
ফুলের মধ্যে টানা টানা চোখ । নেও পড়াই দেও ।
—তুই কিরে! লোকে দেখলে কি কইব?
—কেউ কিছু দেখব না । কও যে লাবনি দেখব । আইচ্ছা, মানিক ভাই,
লাবনিরে এত ভয় পাও ক্যান ?
মানিক কথা না বলে বৈঠার দিকে
তাকিয়ে থাকল ।
—আইচ্ছা মানিক ভাই , সত্যি কইরা কও তো , লাবনি বেশি সুন্দর
নাকি আমি ? আমার চুল, আমার নাক , আমার গায়ের মত রঙ কি লাবনির আছে ? ও মানিক ভাই, কথা কও !
খিল খিল করে হাসতে থাকে
শেফালি । মাথায় পানাফুল গুঁজতে গুঁজতে গান গায়—
'একটুস খানি দেখো, একখান কথা
রাখো
ভালবাইসসা একবার আমায় বউ বইলা
ডাকো ...'
হঠাত গান থামিয়ে শেফালি
প্রশ্ন করে— লাবনি কি
আমার মত গান গাইতে পারে?
মানিক বুঝতে পারে, শাক-টাক
তোলার কোন ব্যাপার না, শেফালি তাকে আজ কব্জা করার
ষড়যন্ত্রে নেমেছে। আগেই বোঝা উচিত ছিল ।
তাকে আজ বাগে পেয়েছে শেফালি । কিন্তু মানিক সে সুযোগ দিল না ।
পাটাতনে বৈঠা আছড়ে ফেলে মানিক
বলল—লাবনি আমারে
অনেক ভালবাসে। অনেক ।
মানিকের কথায় প্রথমে একটু
থতমত খেয়ে গেল শেফালি । তারপর পাগলের মত খিল খিল
করে হাসতে লাগল ।
বিমান বসুর ভিটায় এসে নাও লাগল
। পুরো ভিটাটা জবুথবু হয়ে আছে। পাশেই আরেকটা নৌকা। নৌকাটা চেনা চেনা । কালা মৃধার
ছেলে আইয়ুবের না ! মানিকের বন্ধু ।
আইয়ুব এখানে আসবে কোত্থেকে?
শেফালি আর মানিক যখন ভিটার
ভেতরে ঢুকল, দেখতে পেল আইয়ুবের হাতের ভেতর জোড়া ডালিম ফেটে আকাশে বাতাসে ছড়িয়ে
পড়ছে ।
লাবনি!
No comments:
Post a Comment