25 January 2017

কানিজ মাহমুদ





কঙ্কালের কলঙ্ক
খুব ইচ্ছে করে ইচ্ছের বাইরে ও ভালোবাসি
অন্ধকারে টিল ছুঁড়ে দেখি
পাড়ে পাড়ে লাগে ঢেউ।
কে কবে কুড়িয়েছিল ঝিনুক
বন্দি খোলসে লিখেছিল
ভালোবাসা শুধুই সনাতনী মিথ।
আমাদের ভালোবাসা নেই
তবু মুখোশের পরে মুখোশ বসিয়ে খুঁজি স্পর্শ,
বাড়িয়ে দিই লতানো আঙুল
অথচ,আঙুলে কোন বন্ধন নেই
শুধুই আঁকড়ে ধরার বাসনা
কঙ্কালে কলঙ্ক জমে
আঁধারে আঁধার।
ভালোবাসা শুধুই ইচ্ছে ঋণে গাঁথা শব্দ
অথবা সনাতনী মিথ।

পুরুষ
তোমার হাতের শাঁখায় যে নদী ঘুমায় তার নাম শঙ্খ। ঝড় তুলে মাঝরাতের স্টিমার। বাবার আসা মানেই ষ্টিমারের শব্দ।এই বুঝি নড়ে উঠল কড়া। মায়ের অপেক্ষা, শব্দহীন চুড়ি। পায়ের শব্দে মিলে পথের যোগফল। মা, হীরক কুঁড়িয়ে জমা করে নুড়ি।
খুলে যায় দরোজা...
বাবাকে ফিরে পাই...
মা পায় পরিচ্ছন্ন স্বামী....
অথচ কেউ বুঝিনি পুরুষ।



জোনাকি জীবন
এবার সন্ধ্যা হলেই আমি বাড়ি ফিরে যাবো
এভাবে লুকিয়ে বেঁচে থাকার নাম জীবন নয়।

জন্মের পর থেকে লুকাচ্ছি শুধু...
কাপড়ের ভাঁজে ন্যাপথলিনের ঘ্রাণে
কালো ত্বকে মেখেছি প্রলেপ
পারফিউমে লুকিয়েছি শরীরের উদ্ভট গন্ধ
সাদা চুলে মেহেদি, জুতোর মাঝে পা
এমন কি হাতের নখ পর্যন্ত লুকিয়েছি  নেইল পালিশে।
প্রতিটি মিথ্যা কথার অক্ষরে অক্ষরে লুকিয়েছি সত্য।
মানুষ হবো বলে সাজিয়েছি শরীর।
অথচ কী অদ্ভুদ পেয়েছি জোনাকি জীবন
দিনে পাতার নিচে রাতের পুচ্ছে জ্বালাই আগুন।

এভাবে আর লুকিয়ে থাকবো না
এবার সন্ধ্যা হলেই আমি বাড়ি ফিরে যাবো
মায়ার মাটিতে মিশিয়ে দেবো যত্নে লুকানো কায়া।



নগ্নাচার
হেরে যেতে যেতে বদলে যাই
যেন গভীর শীতে শিমুল কাঠ
মাটিতে নখ টিপে দাঁড়িয়ে থাকি
বিরুদ্ধাচারের বিরুদ্ধে...

চোখে সর্ষে ফুলের আঁধার নামলে দেখি
হলদে হয়ে আসা সূর্যপথ।

যে পথে আলো নেই সেই পথে হাঁটি
জানি আঁধারের নগ্নাচারে একদিন ভূমিষ্ঠ হবে
আলো। পথ এঁকে দিবে পদচিহ্ন।



বাবা
মায়ের রাগ ছিল শীতকালীন বৃষ্টি, কেউ দেখেছে অথবা কেউ দেখেনি। বাবা রাগ করলে বারান্দার নিশ্চুপ অর্কিডও জেনে যেত মার্শাল'ল একশত চুয়াল্লিশের সংজ্ঞা। সন্ধ্যায় পড়ার টেবিলে বসলেই মনে হতো জ্যান্ত বাঘের সামনে ক্ষুদে খরগোশ বসে আছি। আর আশে পাশে শুধুই মায়ের অসহায় পায়চারি। সেদিন আমার পাঠ ছিল নয় এর ঘরের নামতা। দুপুরে মায়ের গলা জড়িয়ে মুখস্ত বলেছি অথচ বাবার সামনে বসতেই সব কিছু অন্ধকার। সেরাতে গালে বাবার পাঁচ আঙুলের চিহ্ন নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম আর ঘুমের ঘোরে বার বার আওড়াচ্ছিলাম নয় এর ঘরের নামতা।

বাবা, আজ নয় বা নব্বই এর নামতা আমার কাছে তেতো। শুধু ঝাপসা চোখের চাহনিতে ঘিরে রাখি প্রহর। মাঝে মাঝে অলস পা'দুটি তুলে নিই নিজের পায়ে আর কাঁধে ভারী হাতটি নিয়ে হাঁটি। জানিনা, বাবা নামের নির্ভরতাকে বয়ে নিতে সন্তান কতটা সক্ষম।
তবুও হাঁটছি...

____________________

No comments:

Post a Comment