25 January 2017

লাবণ্য প্রভা




মৃত্যু উৎসব
আদিম অগ্নিকুণ্ড ধিকি-ধিকি, ধিকি-ধিকি জ্বলে
আমারও মৃত্যু উৎসবে যাওয়ার কথা

বদ্ধ জানালার ওই পাশে সারি সারি প্রসাধিত মুখ; বিম্বিত কাচের ফলক
কোথাও তো যাওয়া হয় না আমার
যে অলৌকিক উষ্ণতা ছিলো তাও ভুলে গেছি

এখন নগরীর হাট জুড়ে নিত্য বেসাতি
সৌরভের ডালা গেছে খুলে
ধুয়ে গেছে পাপ ও ক্ষত
জলজ আগুনে পুড়ে যাচ্ছে পাতার শরীর

হায়!  সেইসব উজ্জ্বল বন; সুবর্ণ কলস বড়ো বেশি অপ্রাকৃত

 


০২
মৃত্যুর এই পাড়ে উৎসব, ওই পাড়ে শীতার্ত হাওয়ার শতরঞ্জি
ছায়ারা ভেঙে পড়ছে
তোমার উষ্ণ গৃহের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে বিপন্ন মানবী এক

তুমি তো জানো
মহাসাগরের জল পানের উপযুক্ত নয়
তবু
নদী ঘেষা বিলেরও সাধ জাগে নদী হতে কখনো কখনো


০৩
নিভৃত ভ্রমণ শেষে
তুমিও চলে গেলে ধীরে
নারী এক দাঁড়িয়ে থাকে বাহির বাড়ির সীমানায়

এমন উতলা প্রহর
পক্ষীমাতা ভুলে যায় শাবকের ক্ষুধা

 

০৪
উদ্যত যমুনায় সুহৃদ হাওয়ার অনুপ্রবেশ
স্বপ্নেরা খাবি খায়
মগ্ন কাকাতুয়া পাশা খেলে, খেয়ে ফেলে মত্ত হস্তিনী
উপচে পড়া ফেনায় হেমলক নাকি অমৃত বোঝা যায় না
রাজকবির নেশা গাঢ়তর

এ-দৃশ্যে দাঁড়িয়ে পড়েছে পৃথিবী
স্বভাবসুলভ চৌকাঠে সমুদয় জীবন
কারা যেন খুব করে ঘষে দিয়েছে চূর্ণ লবণ


০৫
গ্রামের প্রান-সীমায়
মাঠভর্তি কুয়াশা দাঁড়িয়ে থাকে
আমার কোনো অস্তিত্ব নেই
ওই ঘন কুয়াশাগ্রামে কখনো কি বাস ছিলো আমার
মনে নেই
মনে নেই
পালক ঝড়ে গেছে
গোধূলি স্মৃতির মতো পথে পথে পড়ে আছে আমার পরান



০৬
রোদের জরায়ুতে নিদ্রিত শহর ছেড়ে উঠে এসেছি
আজ মেঘ উদ্বোধনে যাবো
বিপন্ন হাওয়ায় উড়ে পালক
এমন মনোহরপুরে তুমি কেনো পেখম মেলেছ
উর্ধ্বালোকে পরাজিত মানুষের জামা
হৃদপিণ্ডে বিঁধে আছে গোপন বুলেট


০৭
গভীর স্বপ্নোচ্ছ্বাস নিয়ে জেগে উঠলাম
কালরাতে শিথানের পাশে একে একে দাঁড়ালেন পূর্ব-পুরুষেরা
তাদের হাস্যোজ্জ্বল মুখাবয়ব স্পষ্ট

এই সন্ধ্যা এই সারস সময় অবিমিশ্র ক্ষমা ও ঘৃণায় বাঙ্ময়
এইখানে হরিণ জননীরা একদিন খুলেছিল দ্বিধার বসনআর কোনো অঙ্গীকার নেই আমারহেঁটে যাই শ্যাওলা-রঙিন পথ ধরেপদপ্রানে- পুষ্প ও পাথর পড়ে থাকে...



০৮
নিদ্রিত রজনী এখন নগরে নগরে
স্নান শেষে দূর বন্দরে দাঁড়িয়ে পড়েছে নক্ষত্র, এলোমেলো পথের রেখা
নিস্তব্ধ পৃথিবীতে জলের শব্দ ছাড়া আর কোনো অনুষজ্ঞ নেইধূমায়িত কফির গাঢ়ত্ব আর অলৌকিক সদাচারের আড়ালে তোমাদের কণ্ঠস্বরে দ্রবীভূত নৈঃসঙ্গের বৈভবপাতা-ঝরা বৃক্ষের গুঁড়িতে লেগে আছে একখণ্ড দার্শনিক বিভাসভুলে যাইআমি ভুলে যেতে থাকিঅন্ধকার সাঁতরে সাঁতরে মৎস্যেরা উজানমুখী নিগুঢ়-ভ্রমণে
হায়
অলৌকিক জাগৃতি!
তুষার-ঝড়ে বীর্যবান মানুষের দাগ লেগে থাকে...

 


০৯
ধারালো পাতের নিচে পেতে দিয়েছি শরীর
লিখে রেখেছি ঢেউয়ের মাথায় রক্তাক্ত জবানবন্দী আমার!
মিয়া কুলপা!
আমি অপরাধী!
তবু ওই পথেই যেতে হবে আমায়!
 
আামার শিথানের পাশে তীরবিদ্ধ বালিহাঁস
গড়িয়ে পড়ে ঈগলের ডানা ও কান্না
শীর্ণ শিখার মতো কম্পন এই পরান-প্রদীপে

প্রার্থনা পড়ি
নগরীর বাস-বিজ্ঞান আর নক্ষত্রের স্তম্ভমালা যেন ভেঙে না যায়
ধূসর চোখের ভেতর অজস্র ট্যানেলের ফাটল
ফেটে যাওয়া ডালিমের দাগ
নির্লিপ্ত অক্ষিগোলক দেখে
জমাট অন্ধকার আর পুষ্পের বাগান পরস্পর ধাবমান চিরদিন


১০
এই ভাঙা থ্যাঁতলানো পথের ধারে
আধপোড়া আপেলের খোসা পড়ে আছে
 জেগে আছে
অনিঃশেষ সাঁকো ও বর্তমান
ভ্রমণ পিয়াসী চিরদিন
ঘুমিয়ে যাবো কফিনের ভেতর


 

১১

চন্দ্রপৃষ্ঠে পদচ্ছাপ মিলিয়ে যাচ্ছে দ্রুত
আর আমি লিখে যাই ধুলির পুরানভোরের যাত্রিবাহী ট্রেনে সূর্যোদয়আমাদের খরাতপ্ত জিহ্বা আড়ষ্টযে উজ্জ্বল পথ ধরে হরিণ-শাবকেরা এসেছিল তারাও ভেসে গেছে দূরে পৌরাণিক জলোচ্ছ্বাসেএখন থিকথিকে রোদের উঠোনে পড়ে আছে নুন
ঘড়ি
ভেঙে
জল
গড়িয়ে
পড়ে...


12
দৃশ্যত সন্ধ্যার আগুনে কেউ ধুলো উড়ায় না
নিবিষ্ট চূড়ায় অর্থহীন উড়াউড়ি, মৃত বন্ধুদের স্মরণ করে গান গেয়ে যাইদূরে দূরে কুয়াশা-পথিকআরো নিবিড় অন্ধকারে ঢেকে গেছে সমস্ত পাপগ্রহণকাল সমাপ্তকে তুমি চন্দ্রঘাতক! এই মৃত্যুঘুম পেরিয়ে কোথাও কি যেতে পারি আমি!


13
চিতা চৈতন্য জ্বলছে
ঘুমন্ত আগুনের পাশে এক টুকরো হাহাকার
একবার সেই অলৌকিক উদ্যানে সমাহিত করো আমায়নির্বাক নিস্পন্দ বসে আছিঅনির্বাণ আলোয় পুড়ে যাচ্ছে মৃত্তিকামনে পড়ে, একদিন এইখানে সৌরবন থেকে নক্ষত্র ঝরেছিলহায় রাত্রিতোমার অপর নাম যদি হয় অনন্ত শববাহন তবে আমাকেও নিয়ে যেও সেই মৃত্যু যাত্রায়

____________________________________________

No comments:

Post a Comment