25 January 2017

আসমা অধরা





বিহ্বল ডানা -
কোনো এক চন্দ্র মাসের অর্ধেক চাঁদ উড়ে যাওয়া রাতে সেরে যায় ম্রিয়মাণ নদীর জ্বর। ঠিক তার পরই স্রোত উগড়ে দেয় বুকমধ্য খয়েরী হয়ে আসা মাংসের দরদের মত উড়ুক্কু খুলি। মৃণ্ময় সুরাপাত্রের মধ্যে জমে থাকে ক্রুর যমদূতের অশ্রু। অথচ বিধাতার প্রেরিত পুরুষের চোখ দিনে দিনে শীতল থেকে শীতলতর হতে থাকে, চোখে ভাসে ক্রুশসময়ের ছায়া। কেতকীর বনে ঢোলকলমির রেণু মাখা বাঁশিতে ফুঁ দেয় অদৃশ্য কেউ, অথচ সে বাঁশিতে পুড়ে যাচ্ছে যকৃত।

ডাকছো রক্তরাঙা চোখ! তুমি কি ঈশ্বরের দূত? অথচ কোনো রাজসভার পঠিত কবিতায়, কবিতার যোনীদেশ মুক ও বধির হয়ে গেলে কবির নাম হয় নপুংসক। ওগো ডাকনাম ইরাবতী, তোমার অন্দরের দীর্ঘশ্বাসে লেগে আছে জ্বরভাঙা সেই নদীর অভিশাপ।

এ পৃথিবীতে রাজত্ব করতে আসছে এক উজ্জ্বল দুঃখে ভারী হয়ে থাকা মখমল আচ্ছাদিত মার্বল চোখ, শ্বাপদ দৃষ্টি।


বিহ্বল ডানা -
শোকাতুর ডানার গায়ে মেখে রাখা ঘুম খুলে নিতেই ঝরে যায় সমস্ত রোশনাই। আমাদের বুঁদ হয়ে থাকার মতন কোন হিপনোটাইজার নেই, নেই বিহ্বল হয়ে তাকিয়ে থাকার মতন কোন হ্যালুসিনেশন। মুদ্রণ থেকে মুদ্রার তা-থৈ কেবল নৈঃশব্দ্য ছড়ায়, টাইপরাইটারের থার্ড রো থেকে পাঁচ নম্বর বাটনের হারিয়ে যাওয়া গহবর যেমন খুবলে তুলে নেয়া চোখের মতো হা করে থাকে।

কোন দৃশ্য কল্পনা করতে গেলেই বসন্ত উড়ে যায়, সাথে ভিশন। তখন বোবা চাহনির নখ দিয়ে খুঁটতে থাকা বায়োস্কোপিক পরিখা। ডানার উড়াল, ডানার উড়ান আর ঘুম ছুটে যাওয়া ক্ষণে ফিনকি দিয়ে ছোটে রক্ত- তা দিয়ে এক প্রেমপত্র লিখে রাখাই যায়। লিখে রাখি, দূরে যেওনা ভুলে যাবে, কাছে এসোনা গলে যাবে। পালকের দিন ও ব্রীজ ভেঙ্গে-চুরে সুর্যাস্তের খানিক নীচে কেমন উতল হয়ে ওঠে সমুদ্র জানো!

এই যে আজ অর্ধ চাঁদ কতদূর নেমে এসে অনল ছড়িয়ে দিচ্ছে বাতাসের গায়ে, সে জানে নাই- ঠোঁট গোল করে যে জোছনা মাখে তারও চাঁদখোলা শরীর, পয়মন্ত মন, চাঁদপনা অধর; টলটলে আজলে জোছনা ধরতেই তার হাতেও খেলা করে যায় সোনা বাউলের এক ঝলক।

আধো ঘুমের এই সব স্মৃতি ফিকে হয়ে গেলে কি নক্ষত্রের মতো ফুটে ওঠে মেঘের ফাঁকে, নাকি তারা মরে গিয়ে আবার এক মানুষ জনম পায়? আর মানুষ ভুলে গেলে ঘুম ও ঘোরের স্মৃতি, সে কী হয়- ফুল না পাখি?
তবু ঘুম ঘুম ডাকি
ঘুম ঘুম এঁকে রাখি
চাঁদপনা মুখ, তোমায় ছেড়েই থাকি

______________________________

No comments:

Post a Comment