কবুতর
রাতভর আমি স্বপ্ন দেখেছি
এক
সাদা পায়রার!
বাজারের এক বন্দী পায়রা কিনেছি
নগদ টাকায় খাব বলে,
সারা পথ কোনো কথা বলেনি সে,
হাতের মধ্যেই কেবল কেঁপে উঠেছে বারবার,
হৃৎপিণ্ডের এক জীবন ধুকধুকানি টের
পেয়েছি আমি হাতের আঙুলে।
দুপুরে যখন গলাটা কেটেছি তার,
কাটা গলার এক অদ্ভুত স্বরে হঠাৎ সে
বলে ওঠে—
চল্লিশ বছর ধরে উড়ছি খুশির ডানায়;
আর আজ বয়স থাকতেই তুমি আমার গলাটা
কেটে ফেললে!
চমকে ছুঁড়ে ফেলি কাটা—কবুতর দু'হাত তফাতে।
মাটিতে চলে বেশ কিছুক্ষণ তার নিদারুণ
দাপাদাপি।
অতঃপর সন্তপ্ত আমি তখনই ঠিক করে ফেলি—
আমি আর কখনো কবুতরের মাংস খাবো না!
ছায়া
প্রায়ই তিনটে ছায়া আমার
সাথে ঘোরে
ঝুলান ঘড়ির জিপসি কাঁটার
মতো!
অনেকবার ভাঙতে চেয়েছি
ওদের।
তাড়িয়েছি—
মেরেছি—
কখনো বা ভয় দেখিয়েছি
উলঙ্গ মুখে!
বরাবর ব্যর্থ আমি লুকিয়ে
গেছি গাছেদের আড়ালে।
সময় শেষে
নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া
হেলিকপ্টারের মতো
ছায়ারা হেসেছে ব্রুটাসের
ছুরি হাতে!
আমার ছায়ারা মুখ খোলে
না।
কেবল চুপচাপ কপাট বন্ধ
করতেই
ওরা লাফিয়ে ওঠে ঘাসফড়িঙের
মতো!
মধ্যদুপুরে ওরা সতর্ক
বেড়াল,
কখনো বা ঝুঁটিওয়ালা
কালো কবুতর টহলদার রোদে!
তবু গোধূলি এলেই আমার
ছায়ারা গোপন গন্ধরাজ—
রাত্রি এলে আমি নিজেই
ছায়া হই ছায়াদের কাছে!
সন্ধ্যা
গোধূলির রং মেখে ঘুমিয়ে পড়েছে পাতাটি,
শান্ত জলে তার শ্রান্ত মুখের দাগ লুপ্তপ্রায়!
অস্ত আভার দল ভীড় করে আছে ডালিমের
ডালে,
পাখির ডানা থেকে সরে গেছে রোদের পরিসর,
পথের শব্দরা আস্তে আস্তে পথের ইতিহাস!
তবু—
সন্ধ্যার সঙ্গীতে পৃথিবী এক আশ্চর্য
দেশ;
তার চোখের তারার মতো—
মনে হয় জীবন এক নিশ্চুপ বৃক্ষ!
রাত
আলোর মৃত্যুতে গাছেরা রাত হয়,
রাত হয়
স্বপ্ন,
নিয়ম,
পথ!
রাত হয় রাত্রি; সূর্য দিবস!
মুছতে মুছতে রাত হয় ইতিহাস;
রাত হয়
পরিচয়,
শব্দ,
মাঠ,
ধানক্ষেত,
আলোঘর,উজ্জ্বল উঠোন,
কুকুরের কুণ্ডলী,
সাপের শরীর,
ব্যস্ত ফুটপাত;
নিঃসীম আকাশ, ধবলিত শূন্যতা!
আলো মুছে গেলে—
অতঃপর মানুষ ও রাত হয় রাতের ছায়ায়!
অন্ধকারে ঘুমিয়ে পড়ে শাদা চোখ—
মানুষ ঘুমালেই পৃথিবী শান্ত থাকে!
থাকে কি!
রাতের স্পর্শে
ঘুম ভাঙে মধ্যবিত্ত পোকার;
ঝিঁঝিঁ জাগে,
জাগে জোনাকি,প্যাঁচা,বাদুড়—
জেগে ওঠে চুপচাপ নিঃশব্দ প্রাণী,
জাগে নষ্ট চোখ,
উপরে
কালপুরুষের হাত ধরে অস্ফুট হাসে সঞ্চারিত
নক্ষত্র— বিম্বিত ছায়া,
নদীও কখনোই আনমনে ঘুমিয়ে পড়ে না মৃত্যু
অবধি—
রাতেই তার স্বতঃস্ফূর্ত প্রবাহ অন্ধ
স্রোতে!
অথচ আমরা জানিনা—
রাতের কোনো উত্তরাধিকার নেই!
রক্ত
এ রঙ ডুবে যাওয়া সূর্য়ের পৃথিবী!
শ্বেতগন্ধরাজে বেঁচে থাকে
সুরের
অবরোহ!
নগরের জ্যামিতিক বিন্যাসে
কোনো জলবিম্ব নেই,
অবশিষ্ট অভিজ্ঞায়
কেবল অযুত অনুভব
মৃত বৃত্তের!
বাতাসের ইতিহাস থেকে সময়ের
চক্রবাক
পিরামিড শূন্যতার এক নীলাভ
নির্বেদ!
উদ্গত রৌদ্রের সপ্তকে
রক্ত এখানে রাত্রির চেয়ে করুণ কালো!
গাছ
এই বিম্ব চলে গেছে সোজা ব্যক্তি লোকে,
তেলাপিয়ার ঠোঁটে কেঁপে ওঠা ঢেউ তার
কিছুই জানেনা।
চুপচাপ গাছটি কিভাবে বেঁচে থাকে কেবলই
ভাবি।
ওর কলম নেই,
কাগজ নেই,
চেয়ে দেখার কোনো চোখ নেই;
কথা বলার মুখটাও খুঁজে পাইনি শরীরের
কোথাও।
হয়তো সে শোনেনা কোনো গান অথবা কান্না।
তবু গাছের পাশে গাছ,
ছোট কিংবা বড়—
বেড়ে ওঠে বাতাসে বাতাসে;
একে অপরকে ছুঁয়ে যায়,
ডালে ডালে পাতায় পাতায় রোদ মাখে;
দিন শেষে রাত্রি লাগায়।
গাছেরা ঘুমের মধ্যেই ঘুমিয়ে থাকে;
স্বপ্নের সমীকরণে বড় হয়!
আমরা বিষয় জ্ঞানে কেবলই কচুপাতায় জল
পড়ি,
অভিগমনের কত পথ কেঁদে ওঠে—
মানুষের মানচিত্রে তার দাগ পড়ে না।
কেবল ঈষৎ অন্ধকারে কিছু গল্প দৃষ্টির
দিগন্তে দেবদারু হয়!
আসলে বৃক্ষ আর পাখিদের আলাদা কোনো
কোলাহল নেই!
No comments:
Post a Comment